Image description
জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ, নিরাপত্তায় থাকবে ১০ হাজারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা-দাফন সব পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা-দাফন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন ও আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় নিয়ে বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দুপুর ২টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর সাড়ে তিনটায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে জিয়া উদ্যানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক দাফন সম্পন্ন হবে। এতে সাধারণ জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। জানাজায় কোনো ব্যাগ বা ভারী সামগ্রী বহন করা যাবে না। শফিকুল আলম বলেন, পুলিশের তরফ থেকে, সিকিউরিটি এজেন্সির তরফ থেকে প্রত্যেকটা বিষয়ে আবার নতুন করে রিভিউ করা হয়। আপনারা জানেন কিছুদিন আগে একটি বড় জানাজা হয়েছে। ফলে পুলিশের এবং সিকিউরিটি এজেন্সি গুলোর নিজেদের মধ্যেই কিছু প্রস্তুতি অলরেডি ছিল, এখন আরও বড় আকারে কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। তিনি বলেন, এই পুরো বিষয়গুলো ওনাদের (বিএনপি) সঙ্গে আমাদের পুরো কো-অর্ডিনেশন হচ্ছে। কো-অর্ডিনেশনের জন্য কমিউনিকেশন মেইনটেইন করা হচ্ছে। প্রত্যেকটা অনুষ্ঠান আমরা সুন্দরভাবে সুচারুভাবে করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং এই বিষয়ে পার্টির তরফ থেকে আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়া হবে। আমরাও তাদের বলেছি আপনাদের যে ধরনের সহযোগিতা লাগে সেটা সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হবে। সার্বিক কার্যক্রম ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কা আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, না, এইজন্যই সর্বোচ্চ সিকিউরিটি কালকে এনশিওর করা হবে। আমাদের ডিএমপির তরফ থেকে বলা হয়েছে, ডিএমপি প্রধান বলেছেন যে দশ হাজারেরও বেশি পুলিশ, এপিবিএন এবং অন্যান্য যারা সিকিউরিটি এজেন্সির অফিসার আছেন, তারা থাকবেন। কিছু কিছু জায়গায় সেনাবাহিনীরও তরফ থেকে একটা ব্যবস্থাপনায় থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, এভারকেয়ার থেকে খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী গাড়ি সংসদে ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আসা পর্যন্ত দাফন এবং জানাজা সবকিছু পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আপনি জানেন খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী ছিলেন। বাংলাদেশ বারবার গণতন্ত্র হারিয়েছিল। উনি প্রতিবারই ওনার বলিষ্ঠ ভূমিকায়, ওনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ছিলেন এবং ওনার প্রায় ৪৫ বছরের একটি পাবলিক সার্ভিস আছে। দেশের জন্য উনি যা করেছেন এটা অতুলনীয়। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিকেল সাড়ে তিনটায় রাষ্ট্রীয়ভাবে দাফন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়। দাফনের আগে বিকেল ২টায় জাতীয় সংসদ ভবন মাঠ ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজার নামাজ আদায় করা হবে। জানাজার নামাজে আগত জনসাধারণ কোনো ব্যাগ বা ভারী সামগ্রী বহন করতে পারবেন না।

গত কাল মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৬ সালে ভারতের জলপাইগুড়িতে (ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তর দিনাজপুর) জন্ম গ্রহণ করেন। তিনবারের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর পিতা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে। স্বাধীনতাযুদ্ধের দিনগুলোতে বন্দিজীবন কাটানো দুই সন্তানের মা খালেদা জিয়া দেশের সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হিসেবে বর্ণাঢ্য জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হারিয়ে অল্প বয়সেই বিধবা হন তিনি। জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির হাল ধরেন তিনি। রাজনীতিতে বেশ সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন তিনি।