Image description

না ফেরার দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের আশার বাতিঘর বেগম খালেদা জিয়া। থেমে গেল দীর্ঘ ৪৩ বছরের আপসহীন, সংগ্রামী, লড়াকু এক রাজনৈতিক জীবন। জাতি হারালো রাজনীতির এক নির্ভরযোগ্য অভিভাবক। মানুষ আর গণতন্ত্রের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে বেগম খালেদা জিয়া হয়ে উঠেছিলেন গণমানুষের এক বিশ্বস্ত ঠিকানা। হয়ে উঠেছিলেন গণমুখী রাজনীতির উজ্জ্বল এক নক্ষত্র, গণতন্ত্র ও অধিকার রক্ষায় এক লড়াকু সৈনিক। লাজুক গৃহবধূ থেকে রাজনীতির ময়দানে পা রাখা বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রশ্নে জীবনে একদিনের জন্যও আপস করেননি। ফ্যাসিবাদ, স্বৈরশাসনের সামনে এক মুহূর্তের জন্য হার মানেননি। প্রতিটি গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে তিনি ছিলেন সামনের সারির লড়াকু এক যোদ্ধা। নির্বাচনী লড়াইয়ে যার কোনো পরাজয় নেই। প্রতিপক্ষের হিংসা, নির্যাতন, রাজনৈতিক আঘাতের জবাব তিনি দিয়েছেন শালীন ও রাজনীতির ভাষায়। হিংসার জবাব দিয়েছেন শান্তির বলিষ্ঠ বার্তায়। 

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন দেশের নারী সমাজের। নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের রোলমডেল এক সরকার প্রধান। ৩০শে ডিসেম্বর শীতের কনকনে ভোরে দেশবাসীকে কাঁদিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পাড়ি জমিয়েছেন অনন্তের পথে। তার এই মহা প্রয়াণে দেশ হারিয়েছে এক মহীয়সী নক্ষত্র, যার আলোয় আলোকিত ছিল গণতন্ত্রকামী এক প্রজন্ম। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে দেশি-বিদেশি চিকিৎসক-কর্মীদের ৩৭ দিনের টানা চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মঙ্গলবার ভোর ৬টায় বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বেগম খালেদা জিয়ার অন্তিম মুহূর্তে তার বড় ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান, নাতনি জাইমা রহমান, খালেদা জিয়ার আরেক পুত্রবধূ সৈয়দা শর্মিলা রহমানসহ স্বজনরা এভারকেয়ার হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। 

রাজনীতির এই অভিভাবককে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান দেশ। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। 

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি। 

মহিয়সী এই নারীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। শোক প্রকাশ করে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

বেগম খালেদা জিয়ার দাফন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হবে রাষ্ট্রীয় সম্মানে। বেলা দুইটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া এভিনিউতে বিএনপি চেয়ারপারসনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রাষ্ট্রীয় সম্মানে সংসদ ভবনের উত্তর পাশের জিয়া উদ্যানে প্রয়াত স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে সমাহিত হবেন জাতীয় এই অভিভাবক। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই তার জানাজায় অংশ নিতে সাধারণ মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেন। জানাজা ও শেষ বিদায়ে অংশ নিতে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিনিধিরা আসছেন বলে গতকালই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। দলীয় চেয়ারপারসনের মৃত্যুতে সাত দিনের শোক ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলের গুলশানের কার্যালয়ে খোলা হয়েছে শোক বই। গতকালই শোক বইতে সই করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। শোক বইতে সই করেন ২৮টি দেশের কূটনীতিক। আজ এবং আগামীকালও এই শোক বইতে স্বাক্ষর করা যাবে। 

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল। দরদি এই রাজনীতিকের প্রয়াণে শোকে মুহ্যমান দেশের সব শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণের মানুষ। শোকগ্রস্ত নেতাকর্মীরা প্রিয় নেত্রীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই ছুটে যান এভারকেয়ার হাসপাতালে, দলের গুলশান ও নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। 

দলের সমর্থক, সাধারণ মানুষের ভিড়ে এই তিনটি স্থান পরিণত হয় শোক, নীরবতা এবং আবেগের এক প্রাঙ্গণে। কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে, কেউ চোখ মুছছেন, কেউ আবার দুই হাত তুলে দোয়া, মোনাজাত করেছেন আপসহীন নেত্রীর মাগফেরাত কামনায়। 

গতকাল সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সংবাদটি নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে হবে, এটা আমরা কখনো ভাবিনি। আমরা এবারো আশা করছিলাম, ঠিক আগের মতোই আবারো তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমরা ভারাক্রান্ত, ইতিমধ্যে আপনারা শুনেছেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার ঘোষণা করেন মঙ্গলবার ভোর ৬টায় আমাদের গণতন্ত্রের মা, আমাদের জাতির অভিভাবক আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন। এই শোক, এই ক্ষতি- এটা অস্বাভাবিক, অপূরণীয়। এই জাতি কোনোদিন পূরণ করতে পারবে না। 

মির্জা ফখরুল বলেন, যে নেত্রী তার সারাটা জীবন জনগণের অধিকারের জন্য, কল্যাণের জন্য, তার সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন, সেই নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে নেই। এটা আমরা যারা তার সহকর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মী, আমরা এটা ভাবতে পারি না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হলো। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিক পৃথিবীর এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও একটা বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হলো। 

এরআগে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার আনুষ্ঠানিকভাবে খালেদা জিয়া ভোর ৬টায় আইসিইউতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানান। ব্রিফিংয়ের সময়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরই উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। বৈঠকে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও ১ দিনের সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়। সরকারি এই সিদ্ধান্ত জানাতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে দুপুরে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটি বৈঠকে বসে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে।

এভারকেয়ার থেকে ফিরোজায় যাবে খালেদা জিয়ার মরদেহ: গত রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালেই ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের মরদেহ। আজ হাসপাতাল থেকে মরদেহ গুলশানের বাসা ফিরোজায় নেয়া হবে। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা আজ বাদ জোহর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে লাশবাহী গাড়ি এভারকেয়ার হাসপাতাল-৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে-কুড়িল ফ্লাইওভার-নৌ সদর দপ্তর হয়ে বাসভবন ফিরোজা, গুলশান-২-কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ-এয়ারপোর্ট রোড-মহাখালী ফ্লাইওভার-জাহাঙ্গীর গেট-বিজয় সরণি-উড়োজাহাজ ক্রসিং হয়ে বামে মোড় নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের ৬ নম্বর গেট দিয়ে দক্ষিণ প্লাজায় যাবে।

চোখে অশ্রু, হাসপাতালের ফটকে ভিড়: বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান হাজারো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের চোখেমুখে ছিল গভীর শোকের ছায়া। কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে, কেউ চোখ মুছছিলেন, কেউ আবার দুই হাত তুলে করছিলেন দোয়া ও মোনাজাত। ভিড়ের মধ্যে কোথাও কান্নার শব্দ, কোথাও দীর্ঘশ্বাস-সব মিলিয়ে এক  শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল চত্বর ও সংলগ্ন সড়কে মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। ভিড় সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। ভিড়ের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক কর্মী স্মৃতি চারণা করছিলেন। কেউ আন্দোলনের দিনের কথা বলছিলেন, কেউ কারাবন্দি অবস্থায় খালেদা জিয়ার দৃঢ় অবস্থানের কথা স্মরণ করছিলেন। 

শোকে আচ্ছন্ন বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়: খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন গুলশানে তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তার মৃত্যুর সংবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পরপরই দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় কার্যালয়ে। সেখানে ভিড় করেন দলের নেতাকর্মীরা। চেয়ারপারসনের মৃত্যুর খবরে কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

কান্নার রোল নয়াপল্টনে, কোরআন খতম: খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জড়ো হতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। প্রিয় নেত্রীর মৃত্যুতে কান্নার রোল পড়ে তাদের মধ্যে। অনেককে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে। কার্যালয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

ওদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে গেলে কোনো ব্যাগ বা ভারী সামগ্রী সঙ্গে নেয়া যাবে না বলে জানানো হয়েছে। জানাজা ও দাফনের সময়সূচি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বার্তায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, আজ দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবন মাঠ ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে খালেদা জিয়ার জানাজা হবে। এরপর আনুমানিক বেলা সাড়ে ৩টায় শেরেবাংলা নগরে  জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে। জানাজার সময় কোনো ব্যাগ বা ভারী সামগ্রী বহন করা যাবে না। দাফনের কার্যক্রম রাষ্ট্রীয়ভাবে হবে বলে সেখানে সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার থাকবে না।

অন্যদিকে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় গুলশানের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অংশ নেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে কার্যালয়ে সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার জানাজা বুধবার বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাকে তার স্বামী সাবেক  প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব। পুরো জানাজা কার্যক্রমের সঞ্চালনা করবেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সবাই অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে জানাজায় অংশগ্রহণ করবেন। তার দাফনে অংশ নেবেন।

গুলশান কার্যালয়ে শোকবই খোলা হয়েছে: খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শোকবই খোলা হয়েছে। গতকাল বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শোকবইতে স্বাক্ষর করা হয়।  এ ছাড়া আজ বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা এবং আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শোকবইতে স্বাক্ষর করা যাবে। শোকবইয়ে প্রথম স্বাক্ষর করেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, জার্মান, ইরান, ওমান, আলজেরিয়া, কাতার, ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইডেন, ব্রুনাই, প্যালেস্টাইন, স্পেন, মরক্কো, ভুটান, ব্রাজিলসহ ২৮টি দেশের কূটনৈতিক শোকবইয়ে স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়াও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী, জামায়াতের নাযেবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, মেজর জেনারেল অব. মনিরুজ্জামান, মেজর জেনারেল অব. এ টি এম ওয়াহাব, কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্টজনরা বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

শেষ কয়েকদিন খালেদা জিয়াকে যে চিকিৎসা করা হয়েছে: ছেলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবরে অনেকটা স্বস্তিবোধ করেছিলেন অসুস্থ খালেদা জিয়া। তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবরটি বিএনপি চেয়ারপারসনকে জানান তার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) থেকেই ছেলের দেশের ফেরার খবর পান খালেদা জিয়া। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময়ে তার শরীরে গুরুতর ইনফেকশনের কারণে উন্নত অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। 

বিএনপি’র ৭ দিনের শোক কর্মসূচি: বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৭ দিনব্যাপী শোক ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি দেয়া এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে আগামী ১লা জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত রাষ্ট্রীয় শোকের এই ৩ দিন দেশব্যাপী সকল দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সকল দলীয় কার্যালয়ে ৭ দিনব্যাপী কালো পতাকা উত্তোলন এবং দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীরা কালোব্যাজ ধারণ করবে। প্রতিটি দলীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার জন্য ৭ দিনব্যাপী কোরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ও নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এবং জেলা পর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ে শোকবই খোলা হবে।

সোমবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সকাল, বিকাল এবং রাতে হাসপাতালে যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। এ ছাড়াও হাসপাতালে যান খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, আরাফাত রহমান কোকোর মেয়ে জাহিয়া রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাত ২টায় হাসপাতাল থেকে বের হন তারেক রহমান। কিছু সময়ের বিরতি দিয়ে তিনি আবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাসপাতালে যান। বেগম খালেদা জিয়ার অন্তিম সময়ে তারা হাসপাতালেই ছিলেন।