Image description
ছয় মাস ধরে পরীক্ষা করছে রোসাটম

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্তর্বর্তী সরকার আমলে উৎপাদনে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ২৫ নভেম্বর থেকে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা ছিল। ডিসেম্বর শেষ হলেও তা হয়নি। আগামী মাসে চালু হবে এমন কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না নির্মাতা রোসাটম। ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সুতরাং এ সরকার আমলে এখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা দেখছে না বাংলাদেশ।

প্রকল্পের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে মে মাসে। ছয় মাস ধরে রূপপুরের বিভিন্ন যন্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছে রোসাটম। কিন্তু সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘রূপপুর কেন্দ্র চালু করতে সরকার অনেক আগেই সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। এখন এটি চালুর অপেক্ষায় আছি।’

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ভূরাজনীতির কারণে রূপপুর কেন্দ্র চালু করা হচ্ছে না। ভারতের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্কে চলছে টানাপোড়েন। অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বেশ ভালো সম্পর্ক যাচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ ২২ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানান।

সরকারি কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রটি চালুর বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত গত ২৫ নভেম্বর এবং ৫ ডিসেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। কিন্তু এখন আর তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়। রোসাটমও কিছু বলছে না।

দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর। ২৪শ মেগাওয়াটের এ কেন্দ্র বসাতে খরচ হচ্ছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার-যা দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। অন্য দেশের তুলনায় এ খরচ বহুগুণ বেশি। এ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে মস্কোর সঙ্গে সাধারণ চুক্তি (জিসি) সই হয়। সে অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এর একটি ইউনিট চালু হওয়ার কথা। ওই বছরই জ্বালানিও মজুত করা হয়।

সরকারি কর্মকর্তারা জানান, ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ ও রাশিয়ান কোম্পানির কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে রোসাটম স্পষ্ট জানিয়েছে, নভেম্বরের শেষে রূপপুরের প্রথম ইউনিটে জ্বালানি ঢালা (চালু) হবে। এর আগে গত জুন থেকে কেন্দ্রের ১৬ হাজার যন্ত্রপাতির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে দুই মাস আগে দুটি ভাল্বে সমস্যা ধরা পড়ে। তা ঠিক করা হয়। এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, রোসাটম কেন দেরি করছে তা বলা মুশকিল। তবে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যস্ত আছে বলে জানিয়েছে।

সরকারি সিনিয়র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোসাটম বা রাশিয়ান কর্মকর্তারা দুই মাস আগে যেভাবে সরকারের ডাকে সাড়া দিতেন এখন তেমন আর দিচ্ছেন না। এতে অন্য কোনো বার্তা আছে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচনের আগে এটি চালু হবে কিনা নিশ্চিত নয়।

এ বিদ্যুৎ প্রকল্প আর্থিক অঙ্কে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া এ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০২৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি দিতে হবে সরকারকে। এদিকে রূপপুর কেন্দ্রের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ৪০০ কেভির সঞ্চালন লাইন বসিয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি চাইছে, আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা সামাল দিতে রূপপুর থেকে ৭০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তবে রূপপুর কেন্দ্র চালুর তারিখ না পেলে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা কঠিন।