Image description

বাংলাদেশ নিয়ে উত্তেজনার আবহে বিজেপি নেতাদের আক্রমণাত্মক মন্তব্যে ফের বিতর্ক বাড়ছে। সীমান্তে উত্তেজনা ও সাম্প্রতিক একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে ভারতের হিন্দুত্ববাদী দলটির নেতারা যে ভাষা ব্যবহার করছেন, তা দায়িত্বজ্ঞানহীন ও দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর বলে জানিয়েছে সচেতন মহল।

বাংলাদেশে হিন্দু যুবককে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সনাতনী ঐক্য মঞ্চের ডাকে কলকাতার জয়ন্তীপুর বাজার থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া ও হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার।

মিছিল থেকে অশোক কীর্তনিয়া দাবি করেন, ড. ইউনূসকে ‘শিক্ষা দিতেই’ এই কর্মসূচি। তার বক্তব্যে কূটনৈতিক সমাধানের বদলে বিতর্ক এবং উসকানি বেশি শোনা যায় বলে সমালোচনা শুরু হয়। অসীম সরকার প্রকাশ্যে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকেরও’ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘যেভাবে পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে সেভাবে বাংলাদেশেও অভিযান করুক ভারত সরকার। প্রয়োজনে বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে নিয়ে সেখানকার উগ্রপন্থিদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিক। কুঁজোরও কিন্তু চিৎ হয়ে শোয়ার ইচ্ছা হয়। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের এখনই উচিত আর বাড়াবাড়ি করতে না দেওয়া। এখনই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা দরকার।’

কয়েকদিন ধরে কলকাতাতেও বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভ করছিল উগ্র হিন্দুরা। এর মাঝে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও একদিন আগে বাংলাদেশের উত্তরে জমি নিয়ে চিকেন নেক এলাকাকে বড় করার কথা বলেছিলেন। এসবের মাঝে এবার বাংলার বিজেপির বিধায়ক বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে জুড়ে নেওয়ার কথা বলেন। অবশ্য, এ ধরনের কথা প্রথম নয়, এর আগেও তিনি বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার মতো বিতর্কিত মন্তব্য করেন।

বিজেপির অসীম সরকারের এই মন্তব্যের পর অনেকে বলতে শুরু করেছেন, বাংলাদেশে যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে তা নিন্দনীয়। অপরাধীদের কঠিন সাজা হোক। কিন্তু তারপরও এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এর সঙ্গে ভারতের কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে না। ফলে সে দেশে হিন্দু যুবকের হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিজেপি বিধায়ক যেসব কথা বলতে শুরু করেছেন, তা নাবালকের মতো। এ জাতীয় মন্তব্য দুদেশের সম্পর্ককে আরো খারাপের দিকে ঠেলে দেবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, রাজ্যের শাসকদল ও নাগরিক সমাজের একাংশের মতে, এ ধরনের বক্তব্য আন্তর্জাতিক আইন, কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির পরিপন্থী। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি সীমান্তের উত্তেজনাকে ভোটের রাজনীতিতে কাজে লাগাতে চাইছে। এ দিকে বিক্ষোভ ঘিরে পেট্রাপোলে বিএসএফ ও রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।