দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নির্বাসিত জীবন, মা-মাটি-মানুষের কাছ থেকে ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিনের আওয়ামী স্বৈরশাসন, ৫ আগস্ট পরবর্তী নানা জটিলতা পেরিয়ে অবশেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর জন্ম ভূমিতে পা রাখবেন তিনি। তাঁর দেশে ফেরার খবরে উচ্ছ্বসিত বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশের আপামর জনসাধারণ। তাকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় করে রাখতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি চালাচ্ছে বিএনপি। রাজধানী ঢাকায় সেদিন স্মরণকালের সর্বাধিক মানুষের সমাগম ঘটাতে চায় দলটি। জনসমুদ্রের এলক্ষ্যে ইতোমধ্যে সারাদেশের নেতাকর্মীদের দেয়া হয়েছে দিকনির্দেশনা। রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোর ছাড়াও সারাদেশের সব জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিএনপিসহ প্রতিটি অঙ্গসংগঠনই পৃথক পৃথক প্রস্তুতি কমিটি গঠন করে সমন্বয়য়ের দায়িত্ব দেয়াও দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সর্বোচ্চ জনসমাগম ও নিরাপত্তা এবং পুরো প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খল করার টার্গেট নিয়ে কাজ করছেন নেতারা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি দল থেকেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর ৩০০ ফুটে গণসংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে মঞ্চ তৈরি কাজ শুরু করেছে দলটি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে রাজধানীতে ২০ লাখ লোকের সমাগম হবে। প্রার্থীরা নিজেদের শক্তি জানান দিতে সর্বোচ্চ নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটাতে চাইবেন। এতে জনসমাগম আরও বাড়তে পারে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতি। বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফুটের গণসংবর্ধনা স্থান এবং গুলশান পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে জনসমাগমের পাশাপাশি নিরাত্তায় যেন কোন ঘাটতি না থাকে সে জন্য দলের নেতারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় ও নিয়মিত যোগযোগ রাখছেন। ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়মিত ফ্লাইটটি অবতরণের কথা রয়েছে। এর আগে তিনি ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে। তারেক রহমানের সঙ্গে একই বিমানে তার সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা জারনাজ রহমান, মিডিয়া টিমের আবু আবদুল্লাহ সালেহ, পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট আব্দুর রহমান সানি ও তাবাসসুম ফারহানা নামে আরেকজনের আসার কথা রয়েছে। বিমানবন্দরে পৌঁছালে দলের শীর্ষ নেতারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। এ ছাড়া ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকে এদিনের কর্মসূচি সফল করবেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন, নাকি ৩০০ ফুটের গণসংবর্ধনা স্থলে আসবেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে হাসপাতালে মাকে দেখতে আগে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেটা মাথায় রেখেই সবকিছু সাজানো হচ্ছে। তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার সুবিধার্থে ইতোমধ্যে বিশেষ ট্রেন ও বগি রিজার্ভ চাওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সসহ একাধিক টিম কাজ করবে। এ ছাড়া দলের বিশ্বস্ত নেতাকর্মীদের সমন্বয়েও একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও বৈঠক করছে। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত তারেক রহমানকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা দিতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তারেক রহমান দেশে এলে তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ কোনো ঝুঁকির তথ্য নেই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর নিরাপত্তায় কোথাও যেন কোনো ফাঁক না থাকে, এ বিষয়টি ভালোভাবে তদারকি করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশে ফেরার পর তারেক রহমান যাতায়াতের সময় পাবেন পুলিশি পাহারাসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এ ছাড়া তাঁর বাসভবন ও অফিসেও থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে তাঁর ধারে কাছে ভিড়তে দেবে না পুলিশ। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দারা তারেক রহমানের নিরাপত্তার দিকটি দেখভাল করবেন। এছাড়া তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে গুলশানে আসার পথে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই দিন তাঁর নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াট টিম, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। তাঁর বাসা ও অফিস ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে পুলিশ।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, আমাদের প্রিয় অভিভাবক দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন এটি আমাদের জন্য অনেক কাক্সিক্ষত ও আনন্দের দিন। তারেক রহমানের এই ফেরাকে স্মরণীয় করতে ছাত্রদল ধারবাহিকভাবে প্রস্তুতি কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের নিয়ে কয়েকটি প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে, এছাড়া বিভিন্ন টিমে ভাগ করে দিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে সেদিন লাখ লাখ নেতাকর্মী বিমানবন্দর এলাকায় উপস্থিত হয়ে তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবে।
প্রস্তুতি সম্পর্কে যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে যুবদলের। সেদিন কেবল ঢাকারই লক্ষাধিক নেতাকর্মী ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে উপস্থিত থাকবে। এছাড়া ঢাকার বাইরের আরো লাখ লাখ নেতাকর্মী উপস্থিত হবেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতির কোন কমতি নেই। সেদিন কেবল বিএনপি নেতাকর্মীরাই নয়, দেশের প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে রাজধানীর সাধারণ মানুষও ছুটে যাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ঢাকারই ২০-২৫ লাখ মানুষ সেদিন তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবে বলে জানান বিএনপির এই নেতা।