Image description
চাপ বাড়ছেই অর্থনীতিতে

বছর শেষে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় আবারও ঝুঁকির মুখে পড়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। এরই মধ্যে রাজস্ব আদায়ে টান পড়ায় সরকারের সামগ্রিক আয় কমেছে। বেড়েছে ব্যয়ের চাহিদা। যদিও সংকুচিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ে ব্যাপক কাটছাঁট করা হচ্ছে। কিন্তু অনুন্নয়ন ব্যয়ের লাগাম কিছুতেই টানা যাচ্ছে না। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত বছর জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সামষ্টিক অর্থনীতি একেবারেই ভেঙে পড়ে। সেই বিপর্যস্ত অর্থনীতি টেনে তুলতে টানা ১৫ মাস চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতাও ফিরেছিল। তবে অনিশ্চয়তা কাটানো সম্ভব হয়নি।

এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। চলতি ২০২৫ সাল শেষে সেই অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা আবারও দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। কেননা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও অস্থির হয়ে উঠছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। কারণ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে সামষ্টিক অর্থনীতি আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য। হুমকির মুখে পড়বে মানুষের জীবন-জীবিকা। এজন্য নির্বাচনের আগে যে কোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যেন কোনো রকম ছেদ না ঘটে- সেদিকেও তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সম্প্রতি এ নির্দেশনা অর্থ বিভাগের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা কিছুটা হলেও উন্নতির দিকে এগোচ্ছি। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বহুলাংশে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। অর্থনীতির ভিত এমন একটা দাঁড়িয়েছে যে, অর্থনীতি ভেঙে পড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু ঝুঁকি তো থাকবেই। সেসব ঝুঁকি মেনে নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। বছর শেষে রিজার্ভটাকে আমরা ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু ঠিকঠাক নির্বাচনটা দিয়ে দিতে না পারলে এই স্থিতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব হবে না।

সাবেক উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৫ মাস ধরে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে এক ধরনের অচলাবস্থা রয়েছে। সেটা কেটে যাবে নির্বাচন ঠিকমতো হয়ে গেলে। কেননা উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা এখন পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় রয়েছেন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। এতে করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসতে শুরু করবে। এ ছাড়া নতুন করে কলকারখানা স্থাপনের কাজও শুরু হবে; যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে সহায়ক হবে। কিন্তু নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা যদি আরও বাড়ে এবং নির্বাচনটা সঠিক সময়ে না হয়- তবে আমরা আবার থমকে দাঁড়াব। তখন দেশের অর্থনীতি আবারও চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপরই সবকিছু নির্ভর করে। পরিস্থিতির অবনতি হলে স্বাভাবিকভাবেই অর্থনীতিতে ঝুঁকি বেড়ে যায়। এদিকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনা দেশের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে বাধাগ্রস্ত করবে। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতা দীর্ঘায়িত হলে বাধাগ্রস্ত হবে নির্বাচন প্রক্রিয়া। এতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। একই আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরাও।