ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন-বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড, মব ও লুটপাট নিয়ন্ত্রণে বিলম্বের বিষয়টি রহস্যজনক। এখানে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার এটি সরকারের ব্যর্থতা নাকি নীরব সমর্থন-সে প্রশ্নও করছেন কেউ কেউ। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে সুনির্দিষ্ট দুটি বিষয়। প্রথমত, হাদির ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে না পারা এবং পরে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা।
তাদের মতে, সরকারের ব্যর্থতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতেই এই হামলা।’ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও কঠোর হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে হামলার শিকার দুটি গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সম্পাদককে শুক্রবার ফোন করে উদ্বেগ জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়াও সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে হামলার পর সংগঠনটির কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন সাংস্কৃতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এছাড়াও হামলা ঠেকাতে যথাসময় প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে না পেরে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা এসবের ব্যবস্থায় যারা ছিলেন, তাদের পরিকল্পনায় বড় ধরনের দুর্বলতা দেখা গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল।’ তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে দেখেছি, জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে বেশ কিছু বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এই আশঙ্কা এবারও রয়েছে। এক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা থাকতে হবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো দক্ষতা এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পাইনি। আশা করব সরকার এদিকে প্রয়োজনীয় দৃষ্টি দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশের ভেতরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের প্রধান লক্ষ্য আগামী জাতীয় নির্বাচন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছে, শিগগিরই এটাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে এমন একটি বন্দোবস্তের দিকে যেতে হবে, যাতে আবারও এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হতে পারে।’
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি আহত হন। এরপর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি। তার মৃত্যু কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় একটি পক্ষ। এর মধ্যে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পত্রিকার ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে হামলা ভাঙচুর উল্লেখযোগ্য।
হামলা ঠেকাতে না পারা রহস্যজনক : সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দুই পত্রিকা অফিসে হামলা বন্ধ করতে না পারাটা রহস্যজনক। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি। দুই পত্রিকার কর্তৃপক্ষ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে ফোন করে কাঙ্ক্ষিত সহায়তা পায়নি। কেন এত বিলম্ব হলো সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো সুদুত্তর মিলছে না। এটি সরকারের ব্যর্থতা নাকি নীরবতা তা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। হাদির সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে বুধবার রাতে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দেন প্রধান উপদেষ্টা। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে ওই বার্তায় বলা হয়, ‘হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।’ বিবৃতির শেষাংশে দেশের মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়। অর্থাৎ হাদির মৃত্যুর বিষয়টি মোটামুটি সবারই জানা ছিল। সূত্র বলছে, এরপরও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি, সে প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। একটি সূত্র দাবি করছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কমেছে। তারা সরকারের নির্দেশ ওইভাবে মানছে না। সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে কথা বলা সহজ নয়।
জানতে চাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, ‘এখানে দুটি ঘটনা। প্রথমত, ওসমান হাদির ওপর হামলা এবং পরে তার মৃত্যু কেন্দ্র করে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা। দুটি ঘটনাই সরকারের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা নির্দেশ করে।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট হাদির ওপর হামলা করেছে। এই সিন্ডিকেটের উদ্দেশ্য হলো সরকারকে অস্থিতিশীল করে তাদের ফায়দা লুটে নেওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো-রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রে এমন একটি হামলার ঘটনা ঘটিয়ে অপরাধী পালিয়ে গেল কীভাবে? এই পালিয়ে যাওয়াটা নজিরবিহীন। কেন সরকার তাকে গ্রেফতার করতে পারল না? শেষ পর্যন্ত অপরাধীকে গ্রেফতারের জন্য ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলো। এটি একটি দায়সারা ঘোষণা। এভাবে অপরাধী গ্রেফতার হয় না। দ্বিতীয়ত দুটি সংবাদপত্রের অফিসে হামলা। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। কারণ সংবাদপত্রের ওপর হামলার মানে হলো ওই দেশের চেতনা ও সংস্কৃতির ওপর হামলা। এটি রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার সেখানে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ এখানে সম্পূর্ণ ব্যর্থতা সরকারের। তার মতে, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের নির্দেশে চলে। সরকার যেভাবে বলে, তারা সেভাবে কাজ করে। ফলে হাদির মৃত্যুর বিষয়টি আগে থেকে বুঝা গেলেও সরকার সেভাবে ব্যবস্থা নেয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের জন্য স্বতন্ত্র কোনো আইন নেই। সরকার যেভাবে বলে তারা সেভাবেই কাজ করে। স্বতন্ত্র আইন থাকলে পুলিশকে দোষ দেওয়া যেত। ফলে এই ব্যর্থতার দায় অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে।’
উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক : দুই পত্রিকার অফিসে হামলার ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় চলছে। বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় বইছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুক্রবার ছুটির দিনে জরুরি বৈঠক করে উপদেষ্টা পরিষদ। বৈঠকে বলা হয়, ‘১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ঠেকাতে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়। সরকার এ ধরনের হামলা মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে থাকবে।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : অন্তর্বর্তী সরকারের সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এই হামলা অবশ্যই নির্বাচন বানচাল করার জন্য ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে প্রতিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব বিষয় নিয়ে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’ শুক্রবার হামলায় ও ভাঙচুর হওয়া ছায়ানট পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। ফারুকী বলেন, ‘আমরা যে মুহূর্তে একটি গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন দেখছি। ঠিক সেই মুহূর্তে এরকম একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনে আক্রমণ করাটা কতবড় নিন্দনীয় কাজ হতে পারে তা বলার ভাষা নেই। যারা হামলা করেছে সিসি ক্যামেরা দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শনাক্তের কাজ করছে। দায়িদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আসলে যদি প্রতিবাদ হয়ে থাকে, আমরা কার সঙ্গে প্রতিবাদ করছি, কী জন্য প্রতিবাদ করছি? একটি বিষয় লক্ষ্য করে দেখেন, যে মুহূর্তে জাতি হাদিকে নিয়ে শোকাহত থাকার কথা, যে মুহূর্তে হাদিকে নিয়ে জাতির কথা বলার কথা। কিন্তু আজকে আমাদের কথা বলা ঘুরিয়ে দিয়েছে কারা। কারা ডেইলি স্টার, প্রথম আলো ও ছায়ানটে হামলা করেছে? যারা এ কাজটা করেছে তারা অবশ্যই বাংলাদেশের ভালো চায় না। যারা সত্যিকারে হাদিকে ভালোবেসেছেন, তারা শাহবাগে অবস্থান করে শোক জানিয়েছেন। যারা এ হামলা করেছে তারা কারা? কেন করেছে তা আমরা জানি, আপনারা জানেন। তাদের আমরা শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আনব।’ এর আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘ওসমান হাদির মৃত্যুতে জাতীয় শোকের মুহূর্তে এক শ্রেণির হঠকারী দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে ছায়ানটে হামলা চালিয়ে ভবনটির ক্ষতি করেছে। এটি কেবল একটি ফৌজদারি অপরাধই নয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনারও পরিপন্থি।’
দুই সম্পাদককে প্রধান উপদেষ্টার ফোন : দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় দুই সম্পাদকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার এক বার্তায় এ তথ্য জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। এতে বলা হয়, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের প্রতিষ্ঠান ও সংবাদকর্মীদের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত ও ন্যক্কারজনক হামলা আমাকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছে। আপনাদের দুঃসময়ে সরকার পাশে আছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের ওপর এই হামলা স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হামলার শামিল। এ ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে এক বিরাট বাধা সৃষ্টি করেছে। টেলিফোনে আলাপকালে সম্পাদকদের ও সংবাদমাধ্যমগুলোর পূর্ণ নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধান উপদেষ্টা। শিগগিরই এই সম্পাদকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে বলেও জানান তিনি।
প্রেস সচিবের অসহায়ত্ব : প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর সহায়তায় আমি বৃহস্পতিবার বহুবার সঠিক জায়গায় (উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে) ফোন করেছি। কিন্তু সঠিক সময় সহায়তা পৌঁছেনি। তিনি বলেন. এই হামলাকে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ। শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন।
পোস্টে ঘটনার রাতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে আতঙ্কিত ও কান্নাভেজা সাহায্যের ফোন পেয়েছিলাম। তাদের প্রতি আমার গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। কারণ আমি তাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। সঠিক জায়গায় সাহায্য পৌঁছাতে আমি বহুজনকে ফোন করে সহযোগিতা চেয়েছিলাম, কিন্তু তা সময়মতো পৌঁছায়নি।’ প্রেস সচিব জানান, রাতভর তিনি সঠিক ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তা সময়মতো সম্ভব হয়নি। ভোর প্রায় ৫টার দিকে তিনি যখন ঘুমাতে যান, তখন নিশ্চিত হয়েছেন যে ডেইলি স্টারের ভেতরে আটকে পড়া সব সাংবাদিককে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তারা নিরাপদে আছেন। ডেইলি স্টারে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আটকে পড়া সাংবাদিকরা নিরাপদে উদ্ধার হয়েছেন এটা নিশ্চিত হয়ে ভোর ৫টায় ঘুমাতে গিয়েছি। ততক্ষণে দেশের দুটি শীর্ষ গণমাধ্যমের ওপর সংঘটিত অন্যতম ভয়াবহ হামলা ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই। একজন সাবেক সাংবাদিক হিসাবে শুধু এটুকুই বলতে পারি, আমি দুঃখিত। এই ব্যর্থতার লজ্জায় মনে হয়, মাটি খুঁড়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেলি।
প্রথম আলো ডেইলি স্টারের বক্তব্য : হামলার পরের দিন শুক্রবার বিকালে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভার্সনে ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়। দুই প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহস্পতিবার ছিল স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য এক কালো দিন। হামলার খবর পেয়ে তারা (পত্রিকা কর্তৃপক্ষ) সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে যোগাযোগ করেন। সরকার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ঘটনাস্থলে সহায়তা করে। তবে সমন্বিত ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলে ছাদে আটকে পড়া সংবাদ কর্মীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা চরম অনিশ্চয়তা ও মৃত্যুভয়ে কাটাতে হতো না। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের শিথিল মনোভাব আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। অতীতেও দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো বিভিন্ন মহলের হুমকির মুখে পড়েছে, কিন্তু সেসব ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হয়নি।