ঢাকায় পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন সিনেট। ক্রিস্টেনসেন ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। শুক্রবার সিনেটের অনুমোদনের পর তার ঢাকায় যোগদান এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। লিংকডইনে এক পোস্টে ব্রেন্ট লিখেন, মার্কিন সিনেটের অনুমোদন পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি। বাংলাদেশে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেপ্টেম্বরে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী অ্যাম্বাসেডর এক্সট্রাঅর্ডিনারি অ্যান্ড প্লেনিপটেনশিয়ারি হিসেবে মনোনয়ন দেন। সব প্রক্রিয়া বিশেষত সিনেটের অনুমোদন পাওয়ায় মধ্যদিয়ে তার নিয়োগের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র অফিসার ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন ঢাকায় পিটার হাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন। পিটার হাসের বিদায় এবং পরবর্তী রাষ্ট্রদূতের যোগদান অর্থাৎ অন্তর্বর্তীকালে ঢাকায় দূতাবাসে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে রুটিন দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রেসি অ্যান্ড জ্যাকবসন। পিটার হাস্ ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তদশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
গত বছরের ২৭শে সেপ্টেম্বর পিটার অবসরে যান। নতুন রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টেনসেন ২০২২ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক কৌশলগত প্রতিরোধ মিশনের আন্তর্জাতিক প্রভাব নিয়ে পরামর্শ দিতেন। দুই দশকের বেশি সময়ের কূটনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি ওয়াশিংটন ও বিদেশে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মার্কিন রাজনৈতিক-সামরিক ব্যুরোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অস্ত্র হস্তান্তর দপ্তরের উপ-পরিচালক, উত্তর কোরিয়া নীতির জন্য বিশেষ প্রতিনিধির বিশেষ সহকারী এবং যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক উপ-কমিটিতে পিয়ারসন ফেলো হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ক্রিস্টেনসেন ম্যানিলা, সান সালভাদর, রিয়াদ ও হো চি মিন সিটিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলোতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের ‘ডিস্টিংগুইশড’ গ্র্যাজুয়েট ক্রিস্টেনসেন ২০২২ সালে ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিতে মাস্টার্স করেন।
এ ছাড়া টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটি থেকে পরিসংখ্যানে মাস্টার্স এবং রাইস ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে তার। স্প্যানিশ, জার্মান ও ভিয়েতনামি ভাষায় কথা বলতে পারেন এই কূটনীতিক, ফরাসি, জাপানি ও পর্তুগিজ ভাষাও শিখেছেন। ২০০২ সালে ফরেন সার্ভিসে যোগ দেয়ার আগে হিউস্টন ও নিউ ইয়র্কে ব্যবস্থাপনা পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন ক্রিস্টেনসেন। অক্টোবরে সিনেটের ফরেন রিলেশন্স কমিটির শুনানিতে ক্রিস্টেনসেন বলেন, চীন এবং দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাজে কী ধরনের ‘ঝুঁকি’ রয়েছে, তা বোঝাতে বাংলাদেশের সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবেন তিনি। শুনানিতে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হলেও বড় প্রতিবেশীদের ছায়ায় পড়ে থাকায় বাংলাদেশ যথাযথ মনোযোগ পায় না। ফরেন সার্ভিসের চাকরিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতি নিয়ে ২০ বছরের বেশি সময়ের কাজের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে, যার মধ্যে এর আগে ঢাকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তিনি বলেন- ফলে আমি দেশটির গুরুত্ব এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের তাৎপর্য ভালোমতো বুঝি। কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ অবাধ, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এখন ‘গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ’২৪-এর আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিক্ষোভ ১৫ বছর শাসনকারী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। নতুন সরকার এবং নতুন পথনির্দেশ পেতে আগামী বছরের শুরুতে ভোট দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ, যা হবে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন। উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের যাত্রায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি ঢাকায় দূতাবাসকর্মীদের নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত উত্তরাধিকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার কাজ করবো। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, রাষ্ট্রদূত হলে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক উন্নতি, বাণিজ্য বাধা ও বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালীকরণে কাজ করবেন তিনি।