Image description

জুলাই বিপ্লবের অগ্রনায়ক শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। একই সঙ্গে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্র-জনতা। উত্তাল জনতার আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ পরিণত হয়েছে সারা দেশ। রাস্তাঘাট, শহর-নগরে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। হামলা হয়েছে সাবেক এমপি-মন্ত্রীসহ পলাতক ফ্যাসিবাদীদের বাড়ি ও বিভিন্ন ভবনে। এর মধ্যে কয়েকটি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এসব ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রামে রাত ১১টা থেকে নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্র-জনতা। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গণহত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাড়িতে আগুন দেয়। ২ নম্বর গেটের চশমা হিলে নওফেলের বাড়ি থেকে অস্ত্রও উদ্ধার করার খবর পাওয়া গেছে।

Amardesh_Hadi Family

এছাড়া নগরের খুলশীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও করেন ছাত্র-জনতা। তারা সেখানে হাইকমিশন বন্ধ করার দাবিতে নানা স্লোগানও দেন।

রাজশাহীতে হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে জুলাই মঞ্চ ও এনসিপির নেতাকর্মীরা। রাতে সিঙ্গাপুর থেকে হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছানোর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের করে সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জড়ো হন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে উপস্থিত আন্দোলনকারীরা হাদি হত্যার দ্রুত বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে মিছিলটি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীরাও ‘আধিপত্যবাদবিরোধী শিক্ষার্থী’ ব্যানারে পৃথক মিছিল নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেন। আন্দোলনকারীরা ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও,’ ‘হাদি ভাই মরল কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’, ‘রুখে দাও জনগণ, ভারতীয় আগ্রাসন’সহ নানা স্লোগান দে

ae53e82e-dcb7-4d06-bbdc-2ce8a8fe7563

একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা বুলডোজার ব্যবহার করে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর করেন। ঘটনার সময় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে শেরেবাংলা হল ও বিজয় ২৪ হল থেকে একটি মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা গ্রাউন্ড ফ্লোরে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এরপর ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখেন।

লক্ষ্মীপুরে হাদি হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্র-জনতা। রাতে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। ‎রাত সাড়ে ১১ টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনী শহীদ আফনান চত্ত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করে ছাত্র-জনতা। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দক্ষিন তেমুহনী গিয়ে শেষ হয়।

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরাও হাদি হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে মিছিল বের করেন। মিছিলটি ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় ‌‘আমরা সবাই হাদি হব, যুগে যুগে লড়ে যাব’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা,’ ‘ভারতের আগ্রাসন, ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাও,’ ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ-জিন্দাবাদ’, ‘শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমরা সবাই হাদি হব, গুলির মুখে কথা বলব’ প্রভূতি স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।

Protest at DU

হাদি হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরাও তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভে তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘ভারতের দালালরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আমরা সবাই হাদি হব, যুগে যুগে লড়ে যাব’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়। এতে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বেগম রোকেয়া হলের সামনে যাত্রী ছাউনি এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার আমার দেশ ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধিরা]