Image description
৪৮ আন্ত নগর ট্রেনের মধ্যে স্টপেজ নেই ১৫টির যাত্রীর তুলনায় আসন নগণ্য লোকসান দেখিয়ে বেসরকারিতে তুরাগ বন্ধ মাসিক টিকিট

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ট্রেনের ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটছেই। অহরহ ইঞ্জিনে ত্রুটির ফলে তা চলতে চলতে বিকল হয়ে পড়ছে। তাতে ট্রেন চলাচলের সময়সূচি লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। আর এতে দুঃসহ ভোগান্তিতে আছেন ট্রেনযাত্রীরা।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগ নিয়ে গঠিত রেলের এই অঞ্চলে বর্তমানে যাত্রীবাহী ট্রেন রয়েছে ১৬০টি। এর মধ্যে ইঞ্জিন সংকটের কারণে ২৪টি ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। এই ২৪ ট্রেনের মধ্যে আটটি সাময়িক ও ১৬টি ট্রেন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া কনটেইনারসহ পণ্যবাহী ট্রেন চলছে দৈনিক এক থেকে তিনটি।

এসব ট্রেন পরিচালনায় প্রতিদিন গড়ে ১১৯টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। এর বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ইঞ্জিনের সংকট রয়েছে কমপক্ষে ৪০টি। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, ইঞ্জিনের সংকট কাটাতে ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে অনেকটা জোড়াতালির মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন।

জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলীর (লোকো) দায়িত্বে থাকা ডিএমই (ক্যারেজ) আবদুল্লাহ আল মাসুদ গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে ইঞ্জিনের সংকট রয়েছে।

ইঞ্জিনের সংকট সমাধানে নতুন করে ৩০টি ইঞ্জিন কেনার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে। বিভিন্ন সময় চলন্ত ট্রেনে ইঞ্জিন বিকলের কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এ জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত আগস্ট মাসে ২৪টি ট্রেনে ইঞ্জিন বিকল হয়েছে।

এ ছাড়া একই মাসে ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়ে ১৪টি ট্রেনে। এসব ছাড়াও বিভিন্ন কারণে ১০০টি ট্রেন বিলম্বে ছেড়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে ইঞ্জিন বিকল ও অন্যান্য সমস্যা হয়েছিল ২৫টি ট্রেনে। গত অক্টোবরে ইঞ্জিন বিকল হয় ২১টি ট্রেনে। একই মাসে ইঞ্জিন বিলম্বের সমস্যার কারণে ৭০টি ট্রেন বিলম্বে ছেড়েছিল। বেশির ভাগ ট্রেনে যাত্রা এক ঘণ্টা থেকে সোয়া ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বিত হয়েছে। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। এই অবস্থা এখনো চলছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে  ইঞ্জিনের তীব্র সংকটে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দেড় দশকে রেলওয়েতে দেড় লাখ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। তবে ট্রেন পরিচালনার জন্য জরুরি ইঞ্জিন আমদানি করা হয়নি। ইঞ্জিনের সংকটে ট্রেন পরিচালনা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘদিনের পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। পথিমধ্যে ইঞ্জিন বিকল, ট্রেনের যাত্রা শুরু ও গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্ব ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রা বাতিলের ঘটনাও ঘটছে। এতে রেলের রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি রেলের যাত্রী দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে রয়েছে। বিগত সময়ে রেলওয়ে ট্র্যাক, কোচসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইঞ্জিন আমদানি করা হয়নি বলে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ইঞ্জিন সংকটের কারণে সৃষ্ট এই পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন পক্ষ থেকে অভিযোগ ও সমালোচনা করা হলেও আমদানি বা যন্ত্রাংশ আমদানির মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী রেলের জন্য ইঞ্জিন সরবরাহ করা হচ্ছে না।

পূর্বাঞ্চলের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১১ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১১টি মিটার গেজ ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। দীর্ঘ বিরতির পর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে হুন্দাই রোটেম কম্পানি থেকে ৩০টি সর্বশেষ প্রযুক্তির ইঞ্জিন আমদানি হয় ২০২১ সালে। এসব ইঞ্জিন আমদানির পর রেলের বহরে থাকা উল্লেখযোগ্য পুরনো ইঞ্জিন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।