ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালীর চার আসনের মধ্যে ১ ও ২-এ বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে পারে জামায়াতে ইসলামী। জোটবদ্ধ নির্বাচনের কৌশল হিসেবে অন্য একটি আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। সেই পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে জামায়াত অথবা ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর। পটুয়াখালী-৪ আসনে বিএনপির সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন জোট হলে পটুয়াখালী-৪ আসনের হিসাবনিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। নির্বাচন সামনে রেখে জেলার শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে মানুষের মাঝে বইছে আমেজ। প্রার্থীরা দলীয় নেতা-কর্মীর সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক, মতবিনিময়, মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। কেউ ধর্মীয় ও সামজিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন। দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকী) : স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটি বেশির ভাগ সময়ই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। তবে ১৯৯১ সালে বিএনপির এম কেরামত আলী নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিত্ব পান। ২০০১ সালে আসনটি হাতে আনেন আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তিনিও হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এবারও এ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক জেলা সভাপতি, স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীই বিএনপি থেকে নির্বাচন করছেন। তাঁর প্রতিপক্ষ জামায়াতের জেলা আমির অ্যাডভোকেট মো. নাজমুল আহসান। এ ছাড়া প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জেলা কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবুল হাসান বোখারী, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য কৃষিবিদ মো. শহিদুল ইসলাম ফাহিম, জাকের পার্টির কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য, বরিশাল বিভাগের যুগ্মসাংগঠনিক সম্পাদক, জেলার সিনিয়র সহসভাপতি মো. মিজানুর রহমান বাবুল, এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্মসম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম মুসা।
বিএনপির প্রার্থী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলহাজ আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এখানে কুয়াকাটাসহ এলাকার উন্নয়নের জন্য অনেক প্রকল্প চলমান রয়েছে, নির্বাচিত হলে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) : এ আসনটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। এবার দলটি নির্বাচনের বাইরে থাকায় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। বিএনপি থেকে এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদার। জামায়াতের প্রার্থী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এ ছাড়া এনসিপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন, ইসলামী আন্দোলন থেকে মুফতি আবদুুল মালেক আনোয়ারী নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন।
পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) : এ আসনে বারবারই আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়ে এসেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছেন, জোটবদ্ধ হওয়ার কৌশল হিসেবে বিএনপি এ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। যদি বিএনপি থেকে কোনো প্রার্থী না দেওয়া হয় তাহলে আসনটিতে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের সঙ্গে জামায়াতের সদ্য সাবেক জেলা আমির, বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটির সদস্য অধ্যাপক মুহম্মদ শাহ্ আলম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি আবু বকর সিদ্দীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্য দলগুলো নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি, সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি-চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে আমি আশাবাদী যে আমার আসনে একটা ব্যাপক জনসমর্থন তৈরি হয়েছে এবং আমি জয় লাভ করতে পারব।’
পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) : এ আসনে এবার বিএনপির প্রার্থী দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেনের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের। এ ছাড়া কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল কাইউম, বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব ফাতিমা তাসনিম নির্বাচন করবেন বলে প্রচার চালাচ্ছেন।