আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস আজ। বিশ্বের প্রথম সারির শ্রমশক্তি রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি কর্মী। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধার জন্য নিরাপদ অভিবাসনে আইনি সুরক্ষা জোরদার করার পাশাপাশি চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের সুরক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স।
এ অর্থ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করার পাশাপাশি দারিদ্র্য হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রাখছে। চলতি বছরে মে মাস পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩৭৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। আর গত ২০ বছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ হাজার ৯৬৪ কোটি মার্কিন ডলার। জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেড় কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কর্মরত এসব প্রবাসী প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে নিয়মিত বিদেশে কর্মী রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। ১৯৭৬ সাল থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭৩ হাজার ১০৭ জন কর্মী বিদেশে গেছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরেই ১০ লাখ ৭৭ হাজার ৮৪৪ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। মন্ত্রণালয় নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করতে কাজ করছে। বিদেশগমন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং প্রবাসীদের আইনি সুরক্ষা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসী কর্মীদের জন্য কল্যাণ তহবিল, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সহজ ঋণ সুবিধা এবং দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে জরুরি সহায়তা কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। এ ছাড়া চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের পুনর্বাসনে প্রকল্প পরিচালনা করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ‘রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট’ প্রকল্পের রিইন্টিগ্রেশন কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে বিদেশফেরত প্রায় দেড় লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান করা হয়েছে।
গত দুই বছরে প্রণোদনা পেয়েছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ জন কর্মী। যার পরিমাণ ৩৪১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ৩৫টি জেলায় ‘প্রবাসী কল্যাণ সেন্টার’ স্থাপন করে সারা দেশে এ প্রকল্প কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এ প্রকল্প থেকে সেবা প্রাপ্তিসহ নিবিড় তদারকির কারণে ১ লাখ ৩৯ হাজার কর্মী আবারও ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের অধিকার সুরক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন গ্রহণ করে। সেই কনভেনশন কার্যকর হওয়ার দিনটিকে স্মরণ করে ২০০০ সাল থেকে ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।