ঢাকা-দিল্লি টানাপড়েন চলছে অনেক দিন থেকে। হিন্দুত্ববাদী ভারত প্রভাব খাটিয়ে সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশকে দিল্লির ‘কলোনি’তে পরিণত করতে চেয়েছিল। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১৪ শ’ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। পৃথিবীর কোনো দেশ আশ্রয় না দিলেও ভারত খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং মৃত্যুদ-প্রাপ্ত হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় প্রশ্রয় দিচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের মানুষ ভারতের উপর চরম বিক্ষুব্ধ। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের পণ্য বর্জনের আন্দোলন বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এমন অবস্থায় জুলাই চেতনার সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখোপত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে শুটার ভারতে পালিয়ে গেছে। ঢাকা কূটনৈতিক পথে হাদির হত্যাচেষ্টার অভিযুক্তকে ভারতে আশ্রয় না দিয়ে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়ার প্রস্তাব করেছে। ঢাকায় কর্মরত ভারতের হাই-কমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেয়া হলে ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলকে দেশটি থেকে আলাদা করে দেয়ার’ কা-জ্ঞানহীন বক্তব্য দেন। এনসিপি নেতার দায়িত্বজ্ঞানহীন এই বক্তব্যের পর আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, ‘পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি সহ্য করা হবে না।’ এই প্রেক্ষপটে গতকাল নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাই-কমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে বাংলাদেশে ক্রমাবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যখন দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী তৎপর; তখন চক্রান্তকারীদের সেভেন সিস্টার্স ইস্যু তুলে দেয়ার নেপথ্যের রহস্য কি?
স্বাধীনতার ৫৫ বছরেও বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বন্ধুরাষ্ট্র হতে পারেনি। এ বাস্তবতা ওপেন-সিক্রেট। শুধু বাংলাদেশ নয়, হিন্দুত্ববাদী ভারত কোনো প্রতিবেশীর দেশের সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করেনি। নেপালের মতো দেশ ‘ভারতকে গুডবাই’ জানালেও বাংলদেশ বহু বছর ভারতের তাঁবেদারি করেছে। বাংলাদেশের উপর ভারতের এই দাদাগিরি মানুষকে ভারতবিরোধী করে তুলেছে। ২০০৭ সালের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন থেকে শুরু করে বিগত দেড় যুগ এবং হাসিনা পালানোর পর বাংলাদেশ অস্থিতিশীল করতে ভারতের ন্যক্কারজনক ভূমিকা কারো অজানা নয়। বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিসহ ভারতের অনেক মন্ত্রী ও বিজেপির প্রভাবশালী নেতা আগ্রাসি বক্তব্য দিয়েছেন; কা-জ্ঞানহীন কথাবার্তা বলে বাংলাদেশ এবং মুসলমানদের অবমাননা করার চেষ্টা করেছে। গত কয়েক বছরে ভারতের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী, বিজেপি নেতা এবং আসাম, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানান ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। সে সময় সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্নের হুঙ্কার কেউ দেয়নি এবং এমন হুঙ্কার সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু নির্বাচনের সময় হঠাৎ করে অহেতুক সেভেন সিস্টার্স ইস্যু করে দুই দেশের মধ্যে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি? এমন বক্তব্যের মাধ্যমে হাসিনাকে কি দিল্লিতে রাখার পূর্ণাঙ্গ বন্দোবস্ত করা? নাকি খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ার পরও দিল্লি যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়ার কাল্পনিক অভিযোগ তুলছে, সেটিকে সত্য প্রমাণের চেষ্টা করা?
বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষই হিন্দুত্ববাদী ভারতের আগ্রাসি নীতির বিরুদ্ধে। সবাই চায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত শেখ হাসিনাসহ ভারতে আশ্রয় নেয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের ফেরতে দেয়া হোক। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কূটনৈতিক পথেই সংসটের সুরাহা তথা শেখ হাসিনা এবং হাদির শুটারকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছে। এমন অবস্থায় ভারতের স্পর্শকাতর এলাকা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স আলাদা করে দেয়ার হুমকি কেন? বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি এমন কৌশল প্রশ্রয় দেয় না। তারপরও জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনীতিক হয়ে উঠা হাসনাত আবদুল্লাহ জাতীয় নির্বাচনের আগে কেন ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে আলাদা করার হুঙ্কার দিয়ে দিল্লিকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন? এটি কী নির্বাচনে পেছানোর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির চেষ্টা? নাকি দল গঠনের এক বছরের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির-এনসিপি রাজনীতিতে সুবিধা করতে ব্যর্থ হওয়ায় এমন প্রলাপ?
ঢাকা-দিল্লির পাল্টাপাল্টি তলব : বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশে কর্মরত অন্য দেশের হাই-কমিশনারদের পাল্টাপাল্টি তলবের ঘটনা ঘটল। গত রোববার ঢাকায় ভারতীয় হাই-কমিশনার প্রণয় ভার্মাকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের তিন দিনের মাথায় গতকাল বুধবার নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাই-কমিশনারকে তলব করল। গতকাল বুধবার দুপুরে দিল্লিতে কর্মরত বাংলাদেশের হাই-কমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে। তাকে তলব করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিএম) বি শ্যাম। বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বাংলাদেশে ক্রমাবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নয়াদিল্লির গভীর উদ্বেগ জানাতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের হাই-কমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে। এ সময় তার মনোযোগ বিশেষভাবে আকর্ষণ করা হয় ‘কিছু চরমপন্থি গোষ্ঠীর’ কর্মকা-ের দিকে, যারা ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন ঘিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘চরমপন্থি মহল’ যে ভুয়া বয়ান তৈরির চেষ্টা করছে, ভারত তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এসব ঘটনার বিষয়ে এখনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করেনি কিংবা ভারতের সঙ্গে অর্থবহ কোনো তথ্যপ্রমাণও বিনিময় করেনি।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এর ভিত্তি গড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সংগ্রামে, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও জনগণের সাথে জনগণের যোগাযোগমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে আরো সুদৃঢ় হয়েছে। বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে ভারত রয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে আসছে ভারত। এতে বলা হয়, কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতার আলোকে বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন ভারতীয় মিশন ও পোস্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, এমনটিই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নয়াদিল্লির প্রত্যাশা।
এর আগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদ-ের আদেশ দেন। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দিল্লিতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে বাংলাদেশ একাধিকবার ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে ভারত এখনো সাড়া দেয়নি।
ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী কর্মকা-ের দ্রুত অবসান চায় ঢাকা। শরীফ হাদির শুটার ভারতে পালিয়ে গেছে এমন খবর প্রচারের পরগত রোববার ঢাকায় ভারতীয় হাই-কমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে এই বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রণয় ভার্মাকে তলব করেন। এ সময় ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত উসকানিমূলক বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের গভীর উদ্বেগের বিষয়টি প্রণয় ভার্মাকে জানিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার দুদিন পর ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা ভারতে প্রবেশ করলে তাদের গ্রেফতার করে ফেরত পাঠানোরও আহ্বান জানায় বাংলাদেশ। গত রোববার তলবের সময় ভারতের হাইকমিশনারকে এসব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়। জবাবে সেদিন ভারতের হাইকমিশনার প্রণব ভার্মা বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে এমন প্রত্যাশা ভারতের রয়েছে। এ বিষয়ে সহযোগিতা দিতে তার দেশ প্রস্তুত। পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলে, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম জনগণের স্বার্থের পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে ভারতের ভূখ- কখনোই ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। ভারত ২০২৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস নোটে উত্থাপিত দাবি প্রত্যাখ্যান করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে ভারতের অবস্থান ধারাবাহিকভাবে পুনর্ব্যক্ত করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশের কাছ থেকে ভারত তা প্রত্যাশা করে।
পাল্টাপাল্টি তলব নিয়ে উপদেষ্টা : দুই দেশের হাইকমিশনকে তলব প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন ছিলÑ এটা মেনে নিয়েই আমরা সবসময় বলে এসেছি, আমরা একটি গুড ওয়ার্কিং রিলেশন চাই। আমরা চাইলেই সেটি হবে, এমন কোনো কথা নেই। আমরা দুপক্ষ মিলেই হয়তো এতটা এগোতে পারিনি, টানাপড়েনটা রয়েই গেছে। ইদানীং কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে, তাদেরও নিজস্ব অবস্থান আছে। ভারতে বসে শেখ হাসিনা আগে বক্তব্য দিতেন সামাজিক মাধ্যমে। সাম্প্রতিক দেখলাম, মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও তার বক্তব্য এসেছে। সেই বক্তব্যের মধ্যে প্রচুর উসকানি রয়েছে। যা আমরা দেখেছি। তিনি বলেন, আমরা তাদের (ভারতের) হাই-কমিশনারকে ডেকেছি। সেখানে আমরা যা বলেছি, সব কিছু তারা গ্রহণ করেনি, তাদের কিছু দ্বিমত আছে। একইভাবে আমাদের হাই-কমিশনারকেও তারা ডেকেছে। এমনটি সাধারণত ঘটে।
হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য : রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে ১৫ ডিসেম্বর হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, ভোটাধিকার ও মানবাধিকারকে অস্বীকার করে তাদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে উসকানি দেয়া হলে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেয়া হলে, স্বাধীনতা প্রত্যাশীদের আশ্রয় দিয়ে ‘সেভেন সিস্টার্স’ অঞ্চলকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার পথে এগোনো হবে। দেশে দিল্লির তাঁবেদারি করে যারা রাজনীতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ‘তৃতীয় স্বাধীনতা’ অর্জনের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের গণহত্যাকারীদের দিল্লি আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কখনো স্বাভাবিক হতে পারে না। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস যদি জনগণের আকাঙ্খা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়, তবে তার অস্তিত্বের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
হিমন্ত শর্মার হুঙ্কার : এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী (মুসলমান বিদ্বেষী) হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি সহ্য করা হবে না। বাংলাদেশের নেতারা যদি ভারতের মূল ভূখ- থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিতে থাকেন, তাহলে দিল্লি আর বেশি দিন চুপ থাকবে না। বাংলাদেশে এক বছর ধরে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়, বাংলাদেশ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আলাদা করে সেই দেশের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। এরকম কিছু কল্পনা করাও ভুল। ভারত একটি বড় দেশ, পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি, এ কথা উল্লেখ করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভুল মানসিকতা তৈরি হয়েছে। আমাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া দরকার যে ভারতের বিরুদ্ধে এমন আচরণ হলে আমরা চুপ করে থাকব না।
মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন : ভারতে আশ্রিত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সব খুনিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া এবং ‘ভারতীয় প্রক্সি রাজনৈতিক দল, মিডিয়া লীগ ও সরকারি কর্মকর্তাদের অব্যাহত ষড়যন্ত্রে’র প্রতিবাদে জুলাই ঐক্যের ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। জুলাই ঐক্যের সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচি রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। কর্মসূচিতে অংশ নেয় সাবেক সেনা কর্মকর্তা, ডাকসু, জাকসুর একাধিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা ও স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের মানুষ।
জানা যায়, রামপুরা ব্রিজ এলাকায় একত্রিত হন ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাই-কমিশন’ কর্মসূচির বিক্ষোভকারীরা। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে এসে তারা বিক্ষোভে যোগ দেন। পুলিশের বাধার মুখে পড়ে জুলাই ঐক্যের সংগঠক এবি জুবায়ের বলেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময় থেকে ভারতের প্রক্সিরা নতুন করে বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। চব্বিশের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে গণ-হত্যা চালানো সব খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে ভারত। সর্বশেষ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা জুলাইয়ের অস্তিত্ব শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করার পর আনন্দ-উল্লাস করে ভারতীয়রা। বাংলাদেশ ২.০-এ কোনো আধিপত্যবাদকে আমরা মেনে নেবো না। তিনি আরো বলেন, ভারত এবং তার প্রক্সিরা চায় না বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষা হোক, দেশে নির্বাচন হোক। যার কারণে একের পর এক বিশৃঙ্খলা চালিয়ে যাচ্ছে। চব্বিশের ছাত্র-জনতাকে দেশ রক্ষার আন্দোলনে আবারো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, দল-মত নির্বিশেষে সব পেশার ছাত্র-জনতাকে রাজপথে নেমে আসার। তিনি আরো হুঁশিয়ারি দেন, ভবিষ্যতে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের ওপর আঘাত এলে তার প্রতিক্রিয়া দেশের গ-ি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অবশ্য এর আগেই নিরাপত্তা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কের ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (আইভিএসি) বন্ধ ঘোষণা করা হয়।