সিলেট-৪ আসন। একটু ভিন্ন আসন। সামাজিক অবস্থান এখানে শক্তিশালী। ১৭ পরগনার শাসিত এলাকা। এ আসনেই নামতে হচ্ছে আরিফুল হক চৌধুরীকে। নির্বাচনী মাঠে নিজ দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা, জোটবদ্ধ ভোটের চিন্তা, প্রতিপক্ষের নানা খেলা সবই মাথায় রেখে মাঠে নামতে হয়েছে। এ সবই তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জগুলোকে সাদরে গ্রহণ করে সিলেট-৪ আসনের ভোটে নেমেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। ইতিমধ্যে পেয়েছেন বিপুল সাড়া। তার কথা- ‘সবার যেখানে শেষ, আমার সেখানে শুরু।’ আসনটি আরিফের জন্য নতুন নয়। এ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। বিজয়ী হন। ওই সময় সাইফুরের ডান হাত ছিলেন আরিফুল। ভোটের ক্যারিশমায় ছিলেন আরিফ পারদর্শী। সে কারণে ওই আসনে বিজয়ী হতে সাইফুর রহমানকে বেগ পেতে হয়নি। ঘরে ঘরে মানুষের সঙ্গে পরিচয় রয়েছে আরিফের। এবার নিজ থেকেই নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছিলেন। সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের মৃত্যুর পর থেকে আসনের ভোটাররা তার জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন। মাঝপথে খামতি দেন আরিফ নিজেই।
ওই আসনে নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এতে বিএনপি’র ভেতরেই শুরু হয় কাড়াকাড়ি। অনুমতি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। মাঠে অ্যাক্টিভ হন গোয়াইনঘাট উপজেলার দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরীসহ কয়েকজন। প্রথম ধাপে বিএনপি আসনে কারও নাম ঘোষণা করেনি। এরপরই সরব হন আরিফ। ঢাকায় যান। দেখা করেন দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে। কথা বলেন লন্ডনে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গেও। অনুমতি পান নির্বাচনের। নামেন ভোটযুদ্ধে। এই নামা তার জন্য কঠিন হলেও ভোটের ম্যাজিকম্যান আরিফ তো আরিফই। তিনি মাঠে নামায় পাল্টে যেতে থাকে পরিস্থিতি। জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা গোয়াইনঘাটের আব্দুল হাকিম চৌধুরী। তাকে বলা হয় গোয়াইনঘাটের সর্বদলীয় নেতা। সবার মুরুব্বি। এবার সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র টিকিট পেতে নানাভাবে চেষ্টা করেন। তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। কিন্তু স্থানীয় ঐক্যকে ধরে রেখেছেন হাকিম চৌধুরী। তাকে ঘিরে গোয়াইনঘাট বিএনপি’র বেশির ভাগ নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ ছিল, এখনো আছে। উপজেলার ভোটে ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে তাকে।
দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর আব্দুল হাকিম চৌধুরী কিছুটা ব্যাকফুটে। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা গোয়াইনঘাট বিএনপি’র অনেকেই এখনো সিদ্ধান্ত মানছেন না। এ নিয়ে চলছে নাটকীয়তা। তবে হাকিম চৌধুরীর সঙ্গে যে দলের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর সম্পর্ক খারাপ সেটি বলা যাবে না। তাদের মধ্যে এক ধরনের ছাড়ের মনোভাব রয়েছে। দলীয় ফোরামের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে হাকিম চৌধুরীর কাছে বার বারই ছুটে গেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। মঙ্গলবার রাতেও হয়েছে বৈঠক। বরফ গলছে। শান্ত হচ্ছে পরিবেশ। গোয়াইনঘাট বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন; নির্বাচনে হাকিম চৌধুরী ফ্যাক্টর। সুতরাং তাকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে নামতে হবে। আরিফও তাই করছেন। আজ-কালের মধ্যে হাকিম চৌধুরী বসবেন স্থানীয় নেতাদের নিয়ে। এরপর আসতে পারে পজেটিভ সিদ্ধান্ত। আরিফে দুর্বলতা আছে সবার। উন্নয়ন চায় এলাকার মানুষ। এ কারণে বিএনপি’র সবাই এক ফ্ল্যাটফরমে আসবে বলে জানিয়েছেন গোয়াইনঘাট বিএনপি’র একাধিক নেতা। সিলেট জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো সর্ম্পক আরিফুল হক চৌধুরীর। জমিয়ত নেতাদের আস্থায় রয়েছেন সিলেটের সাবেক এই মেয়র। আলেম-ওলামাদের সঙ্গে আরিফের সম্পর্ক পুরনো।
এ আসনে জমিয়তের প্রার্থী এডভোকেট মোহাম্মদ আলী। জমিয়তের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক। পরিচিত মুখ। স্বচ্ছ ধারার রাজনীতিবিদ তিনি। এ আসনটি এবার জমিয়ত চায়। আরিফ ভোটে নামায় এ আসনটি শরিকদের ছাড় দেবে না বিএনপি। সেক্ষেত্রে আরিফকেই যেতে হচ্ছে অনুঘটকের ভূমিকায়। সেটি তার জন্য অসম্ভব নয়। আলোচনা চলছে। সেখানে আসতে পারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে দুই ভোট ব্যাংককে সামাল দিচ্ছেন আরিফ। সেটি অবশ্য তার নিজেরও ভোট ব্যাংক। সব কিছুকে নিচ্ছেন পজেটিভ হিসেবে। প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ উতরালেই ভোটের মাঠে অনেক এগিয়ে যাবেন তিনি। মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পাচ্ছেন জামায়াতপ্রার্থী জয়নাল আবেদীনকে। তার বাড়ি জৈন্তাপুরে। তিনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। সেখানেও কাজ করছে আরিফ। ইতিমধ্যে জৈন্তাপুর বিএনপিও আরিফের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। আসনের অপর উপজেলা কোম্পানীগঞ্জে আরিফের অবস্থান আগে থেকেই সুসংহত। আরিফ কেন এ আসনে প্রার্থী? এ প্রশ্নের উত্তর তিনি নিজেই দিয়ে যাচ্ছেন। অবহেলিত এলাকা। এক তৃতীয়াংশ জনপদ এখনো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সীমান্ত জনপদও। খনিজসম্পদে ভরপুর। অথচ মানুষ কাজ পায় না। সিলেট-৪ আসনকে একটি উন্নত জনপদের পরিকল্পনা নিয়ে মানুষের উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবার ভোটে নামছেন আরিফ।