ডিসেম্বর শেষ হতে চলছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের অর্ধেক পাঠ্য বই ছাপানো হয়নি এখনো। খোদ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে ৫৩ শতাংশ ছাপানোর কথা। তবে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই ইতিমধ্যে শতভাগ মুদ্রণ ও সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে। এতো পূর্বেই পাঠ্য বইয়ের কাজ শেষ করা নজিরই বটে।
চাহিদা অনুযায়ী, মাধ্যমিকের জন্য (৬ষ্ঠ-৯ম শ্রেণি) পর্যন্ত বই ছাপানোর কথা রয়েছে ২১ কোটি ৪৩ লাখ। এনসিটিবি বলছে, বই ছাপানো হয়েছে ৫৩ শতাংশ। তবে মাঠের চিত্র ভিন্ন। প্রেস মালিকরা বলছেন- ছাপানো হয়েছে ২৫ শতাংশের মতো। গত কয়েক বছর ধরেই নিম্নমানের কাগজ, সময়মতো সরবরাহ না হাওয়া এবং ভুল নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আওয়ামী সরকার পতনের পরও বদলায়নি চিত্র।
তথ্যানুযায়ী, আগামী বছরের জন্য মাধ্যমিকের মোট ২১ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ৩০০ কপি বই ছাপানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নবম শ্রেণির ৫ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ২৮ কপি, অষ্টম শ্রেণি ৪ কোটি ২ লাখ ৬৯৮, সপ্তম শ্রেণি ৪ কোটি ১৫ লাখ ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির জন্য ছাপানো হবে ৪ কোটি ৪৩ লাখ কপি পাঠ্য বই। নবম শ্রেণির পাঠ্য বই ছাপানো হচ্ছে ২৩৪ লটে এবং বাকি শ্রেণিগুলোকে ১০০ লটে ভাগ করে ৩০০ লটে কাজ চলছে। কাজ করছে মোট ১০২টি প্রতিষ্ঠান।
২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠ্য বই ছাপানোয় দেরি হওয়া বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম পুনঃদরপত্র প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়া অন্যতম। নির্ধারিত সময়ে দরপত্র চূড়ান্ত না হওয়ায় কাজ শুরুতেই বিলম্ব হওয়া। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনে ধীরগতি, প্রশাসনিক অনুমোদন পেতে দেরি হওয়ায় চুক্তি স্বাক্ষরেও দেরি হয়েছে। সর্বশেষ ৪ঠা ডিসেম্বরেও চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এনসিটিবি’র জনবল সংকট থাকায় পরিকল্পনা ও সমন্বয়ে ঘাটতি দেখা যায়। নির্দিষ্ট ৫টি কাগজ মিলের বাইরে কাগজ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সংকট তৈরি হয়। পূর্বের বছরের মজুতকৃত কাগজ ব্যবহার করতে পারেনি কাগজের স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন হওয়ায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেস মালিক বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণেই প্রতি বছর একই ঘটনা ঘটে। ৪ঠা ডিসেম্বরে এসে চুক্তি স্বাক্ষর করলে সময়মতো পাঠ্য বই পাওয়ার আশা করাটাও বোকামি। চুক্তি অনুযায়ী যদি প্রেস মালিকরা পাঠ্য বই সরবরাহ করেন তাও অনেক বই ছাপানো শেষ হবে ফেব্রুয়ারিতে। এই সময়ে আবার নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের কারণে চুক্তিভিত্তিক লোক পাওয়া যাচ্ছে না। সামনে এই সংকট আরও বাড়তে পারে। নিয়ম অনুযায়ী, সবশেষ চুক্তি হয় গত ৪ঠা ডিসেম্বর। সবশেষ ৮ম ও ৯ম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের চুক্তি অনুযায়ী তারা ২২শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঠ্য বই সরবরাহ করতে হবে।
এনসিটিবি বিতরণ নিয়ন্ত্রক বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিকের ৫৩ শতাংশ বই ছাপার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে এনসিটিবি সচিব প্রফেসর মো. সাহতাব উদ্দিন বলেন, এনসিটিবি’র কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রেস মালিক, শ্রমিক সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। মাধ্যমিকের পাঠ্য বই জানুয়ারির এক তারিখে সব শিক্ষার্থী না পেলেও ২/৩ সপ্তাহের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়া যাবে।
আবার প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের সকল পাঠ্য বই ছাপানো ও বিতরণ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার ও আন্তরিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত সকল পক্ষ-মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান, পরিবহন সংস্থা এবং এনসিটিবি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস শ্রম ও নিষ্ঠার ফলেই এই অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এর ফলে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই দেশের প্রাথমিক স্তরের সকল শিক্ষার্থীর হাতে সম্পূর্ণ নতুন পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেয়ার পথ সুগম হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার পূর্বেই প্রায় সাড়ে আট কোটিরও বেশি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও প্রস্তুত করা নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত জটিল ও চ্যালেঞ্জিং কার্যক্রম।