বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে নয়াদিল্লি। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ঢাকায় ভারতীয় মিশন ও বিভিন্ন স্পটের নিরাপত্তা উদ্বেগ জানাতেই হামিদুল্লাহকে তলব করা হয়েছে। তবে দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপড়েনের জন্য ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যকে প্রসঙ্গ করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। রিপোর্টে বলা হয়, হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যকে ঘিরেই ঢাকা-দিল্লির কূটনৈতিক টানাপড়েনের সূত্রপাত হয়েছে। এই নেতা তার বক্তব্যে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং ঢাকায় ভারতবিরোধী শক্তিগুলোকে আশ্রয় দেয়া হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে যা আছে-
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ঢাকার ক্রমাবনত নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকাস্থ ভারতীয় মিশন ঘিরে ঘোষণা দেয়া ‘চরমপন্থি’ তৎপরতার বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সামপ্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘চরমপন্থি মহল’ যে ভ্রান্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বর্ণনা তৈরির চেষ্টা করছে, ভারত তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। পাশাপাশি অভিযোগ করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করেনি কিংবা ভারতের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণও ভাগাভাগি করেনি। বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা ভারত-বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক উদ্যোগ ও জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়েছে। বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে ভারত সব সময়ই সোচ্চার। কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে সকল কূটনৈতিক মিশন ও পোস্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে নয়াদিল্লি।
সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য
ভারত-বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক টানাপড়েনের সূত্রপাত বাংলাদেশের জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতার বক্তব্যকে ঘিরে। ইনকিলাব মঞ্চ কর্তৃক আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিবাদ সমাবেশে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং ঢাকায় ভারতবিরোধী শক্তিগুলোকে আশ্রয় দেয়া হবে। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারীদের ভারত মদত দিয়েছে বলে জোর দেন। এই অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যেন দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাবের উত্থান
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশ একটি অস্থির পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। সেখানে ‘ইসলামী চরমপন্থা’র উত্থান হচ্ছে এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পাকিস্তানের প্রতি অনুরাগী হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অথচ এই পাকিস্তানই ১৯৭১ সালে লাখ লাখ বাংলাদেশির ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।
বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম থেকে ক্রমাগত ভারতবিরোধী বক্তব্য আসছে। এমনকি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সম্পর্কেও উস্কানিমূলক মন্তব্য করা হচ্ছে। যার সূত্রপাত হয়েছিল মূলত ওই অঞ্চল সম্পর্কে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কিছু মন্তব্যের পর। গত বুধবার অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আসামের কাছাড় জেলা প্রশাসন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ১৪৪ ধারা (নিষেধাজ্ঞা) জারি করেছে। ভারত সরকারের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘চরমপন্থিদের’ সম্ভাব্য আনাগোনা এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে এমন অননুমোদিত আন্তঃসীমান্ত কর্মকাণ্ডের আশঙ্কায় সংবেদনশীল সীমান্ত এলাকায় এই প্রতিরোধমূলক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।