কোনো ঘোষণা ছাড়াই নীরবে ভোক্তা পর্যায়ে মঙ্গলবার থেকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আইন ভেঙে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে এবার এক লাফে লিটারে বাড়ানো হয়েছে ৯ টাকা। ফলে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। এদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ব্যবসায়ীরা যে প্রক্রিয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছেন এর আইনগত ভিত্তি নেই। বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোর সম্মিলিতভাবে দাম বাড়ানোর এই কার্যক্রম অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আলোচনা করে ঠিক করব। যে কর্মকাণ্ডটা তারা করেছেন, এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান। একই দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ক্রয় কমিটিতে টিসিবির জন্য ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন এবং এক কোটি লিটার রাইস ব্র্যান অয়েল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। তারা যে দামে আজকে বাজারে বিক্রি করছেন, সেখান থেকে প্রায় ২০ টাকা কমে আমাদেরকেই তেল দিয়েছেন। বাজারে ২০ টাকা বেশি দামে তেল বিক্রির আমি তো যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। গতকালই তো আমরা কিনেছি তাদের কাছ থেকে! উপদেষ্টা বলেন, ৫০ লাখ লিটার তেল যদি টেন্ডারে ২০ টাকা কমে আমরা কিনতে পারি, তাহলে বাজারে কেন এত বেশি দামে বিক্রি হবে?
বাজারের ওপর থেকে সরকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ আছে কি নেই সেটা আমাদের পদক্ষেপের মাধ্যমে জানতে পারবেন। রমজানের প্রস্তুতির বিষয় জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, সবকিছুরই ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। যেখানে যেখানে রাজস্বের ব্যাপারে কর্মকাণ্ড করতে হবে, সরবরাহের ব্যাপারেও সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি আমদানি পর্যায়ে যে পরিমাণ ঋণপত্র খোলার প্রয়োজন, গতবার যা খোলা হয়েছিল, সেটার থেকেও বেশি দেখতে পাচ্ছি। তাই সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে না।
উপদেষ্টা বলেন, আপনারা দেখছেন চিনির দাম কমছে। ইনশাআল্লাহ ছোলার দাম কমবে। ডালের দাম কমেছে, ডিমের দাম কমেছে, আর অন্যান্য কিছু জিনিসের দাম কমেছে। আমরা জিনিসটা বুঝব, বুঝে যৌক্তিক যে সমাধান সেটাতেই যাব। অযৌক্তিক কোনো সমাধান আমরা মানব না।
এদিকে ক্যাব সভাপতি বলেন, মঙ্গলবার হঠাৎ করে ভোজ্যতেলের দাম ৯ টাকা বৃদ্ধি করেছে রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ না করে দাম বাড়ানো আইনের ব্যত্যয়। এটি অন্যায়ভাবে করা হয়েছে। রিফাইনারি বন্ধ করে দেওয়ার মতো বিধান আইনে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা আইন আছে, ভোক্তা অধিকার আইন, যদি কেউ মজুত করে দাম বাড়ায়, সেখানে বিশেষ বিধান আইন প্রয়োগের ব্যবস্থাও আছে। আমরা সেই আইনের প্রয়োগটা দেখতে চাই।
এখানে সরকারের ব্যর্থতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো সরকার বলতে পারবে। সরকার তো এ মুহূর্তে অনেক চ্যালেঞ্জে আছে। নির্বাচন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে চ্যালেঞ্জ আছে। সেখানে আমার কাছে যেটা মনে হয় নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনায় হয়তো বা আরেকটু বেশি ফোকাস করা উচিত।
চট্টগ্রামে হঠাৎ বাড়ল তেলের দাম, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, আগাম ঘোষণা ছাড়াই চট্টগ্রামে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে ৯ টাকা। লিটারপ্রতি ২০০ টাকার কমে মিলছে না বোতলজাত ভোজ্যতেল। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেলও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামে লিটারপ্রতি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার বেশি দামে। আর পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯৬৫-৯৭০ টাকায়। হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এর কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো বুকিং দর উঠানামা করছে। তাই সয়াবিন ও পাম উভয় তেলের দাম স্থির থাকছে না। তেলের বাজার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এখানে আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দাম এমনিতে কমে যাবে। কিছু কিছু বড় শিল্প গ্রুপের ভোজ্যতেল বেশি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মূলত দুই শিল্প গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, আমদানিকারকরা তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।