সমুদ্রপাড়ের জেলা কক্সবাজার। ১৯৯১ সাল থেকে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জেলার চারটি আসনের মধ্যে ভোটের দিক থেকে বিএনপির পরই জামায়াতের অবস্থান। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ মুহূর্তে বিএনপির ঘাঁটিতে ভাগ বসাতে মরিয়া তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াত। দুই পক্ষের মধ্যে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে অনেকে মনে করছেন। জাতীয় রাজনীতিতে বর্তমান সময়ের পরিচিত মুখ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এই জেলারই বাসিন্দা। তিনি নির্বাচন করবেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) থেকে। অন্যদিকে আরেক পরিচিত নেতা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজার-২ আসনে লড়বেন। সাধারণত অনিয়ম, প্রতারণা ও ভোট ডাকাতি মুক্ত নির্বাচনে জেলার চারটি আসনের প্রত্যেকটিতে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা জয়ী হয়ে আসেন। তবে সেটা অবশ্য জোটবদ্ধ নির্বাচনে। এবারের চিত্র ভিন্ন। বিএনপি-জামায়াত এবার নির্বাচনে আলাদা হয়ে লড়বে। জেলার চারটি আসনে বিএনপি-জামায়াতের এই রাজত্বে ভোটের মাঠে বিজয়ী হওয়ার মতো এ মুহূর্তে অন্য দলগুলোর তেমন প্রভাব নেই।
কক্সবাজার-০১ : জেলার বৃহত্তর উপজেলা চকরিয়া আর উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়া নিয়ে গড়া এই আসনটিতে ১৯৯১ সালে জামায়াত বিজয়ী হলেও ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিএনপি প্রার্থীরা জিতেছেন জোট বা
একক প্রার্থী হিসেবে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকারের প্রথম মেয়াদের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) থেকে রাজনীতির মাঠে আসা সালাহউদ্দিন আহমদ এই আসনে একবারের জন্যও হারেননি। হাসিনা সরকারের ১৬ বছর বাদ দিলে তার আগের একটি নির্বাচনেও হারেননি তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন তাঁরই সহধর্মিণী অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমদ। এবারও এই আসনে বিএনপি থেকে সালাহউদ্দিন আহমদকেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাকে এখন পুরো দেশকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি প্রতিদিন মাঠে যেতে না পারলেও তারা আমার প্রতি বিশ্বস্ত। আমার জনগণের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা আছে। এই আসনে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটির কক্সবাজার শহর শাখার আমির ও সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল্লাহ আল ফারুককে।
কক্সবাজার-০২ : জেলার দুটি দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া নিয়ে গড়া এ আসনটি জোটবদ্ধ নির্বাচনে ২০০৮ জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে দেওয়া হলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ। এবারও তিনিই জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত প্রার্থী। প্রতি সপ্তাহে তিনি এলাকায় আসেন এবং নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এখানে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। এ নিয়ে জটিল সমীকরণে পড়েছে দলটি। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ ও এ টি এম নুরুল বশর চৌধুরী। মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় আরও রয়েছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল আলম। এ ছাড়াও দ্বীপাঞ্চলের এই আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী হিসেবে প্রচারে রয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সদস্যসচিব ও কক্সবাজারের সমন্বয়ক এসএম সুজাউদ্দিনের নাম।
কক্সবাজার-৩ : জেলা সদরের এই আসনটিতে সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজলকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। তিনি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক। সর্বশেষ তিনটি ছাড়া ১৯৯৬ সাল থেকে এখানে বিএনপি প্রার্থীরা জয় লাভ করে আসছে। এখানে অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী সহিদুজ্জামান মনোনয়ন না পেলেও তার সমর্থকরা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। লুৎফুর রহমান কাজল দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে উঠান বৈঠক, মহিলা সমাবেশ, কর্মিসভায় অংশ নিচ্ছেন।
কক্সবাজার-০৪ : সীমান্তের এই আসনটিতে বিএনপি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি সজ্জন হিসেবে পরিচিত। তবে তার ব্যাপারে অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সমর্থকরা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এবি পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দৈনিক ইনকিলাবের কক্সবাজার ব্যুরো চিফ ও এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শামসুল হক শারেক। এই আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী কখনো জিততে পারেনি। এবার দলটির প্রার্থী হয়েছেন জেলা আমির মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারী। তিনি হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়।