সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলনে কোনো কোনো স্কুলে থেমে গেছে বার্ষিক পরীক্ষা কার্যক্রম। আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকদের একটি অংশ বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না তারা। শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে কোথাও কোথাও কর্মচারী দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরাও চলমান বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের ডাকে অনেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল গতকাল। বছরের শেষদিকে এসে শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্নতা ঘটায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে শিক্ষকরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ‘প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ বার্ষিক পরীক্ষার কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। ফলে এ সংগঠনের ডাকে সহকারী শিক্ষকদের একটি পক্ষের অংশগ্রহণে অনেক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলছে। ‘প্রাথমিক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে আরেকটি সংগঠন বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছেন। তাদের সমর্থনকারী অংশের সহকারী শিক্ষকরা কোনো পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না। রংপুর, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, ঢাকার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ডাকে পরীক্ষা বর্জন চলছে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের তিন দাবির মধ্যে রয়েছে ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণের প্রজ্ঞাপন জারি; ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা দূরীকরণ এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
জানা গেছে, কর্মবিরতির প্রভাবে রাজবাড়ীতে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা ব্যাহত হয়েছে। গতকাল সকালে রাজবাড়ী টাউন মক্তব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে এলে সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষা বিঘ্ন ঘটে। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা বিলম্বে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুরোধে পরীক্ষা শুরু হয়। পটুয়াখালীর গলাচিপা শহরের পল্লী উন্নয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গলাচিপা বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় নির্ধারিত সময়ের পরও পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়নি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খাতা ও প্রশ্ন নিয়ে কক্ষে আসেন প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারীরা। পরীক্ষার কক্ষে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেছেন কর্মচারীরা।
পল্লী উন্নয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শাহারুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দশম গ্রেডের দাবিতে আন্দোলন করছি। ঢাকায় আন্দোলনে সহকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলার পর সারা দেশে কর্মবিরতি চলছে। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।
চার দফা দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বার্ষিক পরীক্ষা, খাতা দেখাসহ সব কার্যক্রম বর্জন করছেন। এ ক্ষেত্রে অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় আগের দিনই নোটিশ দিয়ে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, খুলনার সরকারি করোনেশন গার্লস হাই স্কুল, ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা না নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ডাকে এ বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকরা। সমিতির কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক মোহাম্মদ ওমর ফারুক সাংবাদিকদের জানান, সরকার তাদের দাবিগুলো পূরণের বিষয়ে রূপরেখাসহ সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিলে তারা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কর্মবিরতি স্থগিত করে পরীক্ষার কাজে অংশ নেবেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানায়, সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চার দফা দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন। জেলার ১৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও অন্য ১৭টি বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন করছেন।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেটে উন্নতিকরণসহ তিন দফা দাবিতে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো চলে কর্মবিরতি। শিক্ষকরা বলেছেন তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা পরীক্ষা নেবেন না। জেলার ৭৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক যোগে চলছে এই আন্দোলন। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ ও নেত্রকোনায় শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।