Image description

সিলেট-ম্যানচেস্টার সরাসরি রুট নিয়ে ফের নাটকীয়তার আভাস পাওয়া গেছে। সূত্র বলছে; এই রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করতে বিমান কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আগামী হজ মৌসুমের পর থেকে বিমানের ফ্লাইট বাতিল করে দেয়ার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। আর এই খবরে ক্ষুব্ধ ম্যানচেস্টারসহ ওই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রবাসী সিলেটীরা। এনআরবি সোসাইটি ইউকে’র নেতারা বলছেন; বিমান চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এই চিন্তাভাবনার খবরটি ইতিমধ্যে প্রবাসীদের কাছে পৌঁছেছে। যদিও বিমান কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে ফ্লাইট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে ম্যানচেস্টারের সঙ্গে সিলেটের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়বে। এতে দুর্ভোগে পড়বেন নর্থ ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম, নিউক্যাসল, সান্ডারল্যান্ড, গ্রেটার ম্যানচেস্টার ও পুরো স্কটল্যান্ডের ৭ থেকে ৮ লাখ সিলেটী প্রবাসী।

সিলেট-ম্যানচেস্টার বিমানের ফ্লাইট ৮ বছর বন্ধ থাকার পর ২০২০ সালের শুরুতে প্রবাসীদের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার শুরু করেছিল। তখন যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালু করা হয়েছিল। যাত্রী বেশি থাকার কারণে এ রুটটি বিমান কর্তৃপক্ষ লোকসানের মুখে পড়েনি। দুই বছর আগে থেকে এ রুটে বিমানের একটি ফ্লাইট বাতিল করলেও দুটি ফ্লাইট নিয়মিত যাতায়াত করতো। এখনো সপ্তাহে রোব ও মঙ্গলবার দুটি ফ্লাইট সিলেট থেকে চলাচল করে। তবে গত বছরের অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না প্রবাসীদের কাছে। 

তারা জানান- গেল বছর হজ মৌসুমে বিমান কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজ সংকটের কথা বলে জেদ্দা রুটে হজ ফ্লাইটের জন্য এক মাসের অধিক সময় ম্যানচেস্টার রুটের ফ্লাইট বাতিল করা হয়। প্রবাসীদের যুক্তি হচ্ছে; হজ মৌসুমে উড়োজাহাজ বেশি প্রয়োজন হলে বিদেশি এয়ারলাইন্স ভাড়া করেও ব্যবসা করা যায়। এর নজির অহরহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত রুটের ফ্লাইট বন্ধ রেখে অন্য রুটে উড়োজাহাজ নিয়ে যাওয়ায় ম্যানচেস্টার রুটের যাত্রীরা বেকায়দায় পড়েন। তবু তারা কিছুদিনের জন্য সেটি মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু হজ ফ্লাইটের পর তারা বিমানের সিস্টেমে টিকিট না পাওয়ায় ফ্লাইট বাতিলের আশঙ্কার মুখে পড়েন। এ নিয়ে তারা কথা বলেও বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো প্রতিকার পাননি। গ্রেটার ম্যানচেস্টারসহ নর্থ ইংল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সংগঠন এনআরবি সোসাইটির ইউকের নেতারা প্রথমে যুক্তরাজ্যে আন্দোলনের ডাক দেন। পরে তারা সিলেটে এসে মাঠের আন্দোলনে নামেন। বিমান অফিস ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি পালন করেন। সিলেটের রাজনৈতিক, পেশাজীবীসহ সকল স্তরের মানুষ এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে নর্থ ইংল্যান্ডের বাসিন্দা দেশে রেমিট্যান্স বন্ধেরও হুঁশিয়ারি দেন। তাদের এই আন্দোলনের মুখে অবশেষে বাতিল হওয়া রুটে ফের টিকিটিং সিস্টেম চালু করে বিমান কর্তৃপক্ষ। গত জুলাই মাস থেকে নিয়মিতই চলছে এ ফ্লাইট। বিমানের একাধিক সূত্র জানিয়েছে- সিলেট-ম্যানচেস্টার রুট কখনো অলাভজনক নয়। 

এনআরবি সোসাইটি ইউকে’র ডাইরেক্টর মোহাম্মদ আহমদ জুনেদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- হজের জন্য ওই রুটে ফ্লাইট বাতিল করতে হবে কেন? উড়োজাহাজ ভাড়া করা যায়। সেটি না করে ম্যানচেস্টার রুট বাতিল করা হচ্ছে। কিন্তু এবারো আমরা জেনেছি বিমানের ভেতরে থাকা সিলেট বিদ্বেষী একটি সিন্ডিকেট এই রুট বাতিলের জন্য পাঁয়তারা শুরু করেছে। তিনি বলেন- তারা বিমান চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে সেটি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। যদি এটি করা হয় তাহলে আন্দোলনের পাশাপাশি রেমিট্যান্সও বন্ধ করে দেয়া হবে। আরেক ডাইরেক্টর ও বিএনপি নেতা মো. জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন- সিলেটের মানুষ বিমানের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশি উড়োজাহাজ কোম্পানির ফ্লাইট অপারেট করতে দেয়া হবে না, আবার বিমানের ফ্লাইটও চালু রাখা হবে না, এটি মানবো না। গণ-অভ্যুত্থানের পর যেখানে আমরা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করতে যাচ্ছি সেখানে সিলেটবাসীর সঙ্গে বিমানের সীমাহীন বৈষম্য কোনো ভাবে সহনীয় নয়। যদি রুট বাতিলের চিন্তাভাবনা করা হয় তাহলে কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে; বাংলাদেশ বিমানের সিলেট অফিসের কাছে ফ্লাইট কিংবা রুট বাতিলের কোনো মেসেজ নেই বলে জানিয়েছেন ডিস্ট্রিক ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান মাসুম। তিনি জানিয়েছেন- সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে ফ্লাইট চালু আছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।