দুই মাস পর নিলামের মাধ্যমে আবারো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত ডলারের দর পতন ঠেকাতে এবং দাম যাতে অনেক নিচে নেমে না যায়, সে জন্যই আবার ডলার কেনা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১২২ টাকা ২৫ পয়সা দরে ৫৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে চলতি অর্থবছরের ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত ডলার কেনার পরিমাণ দাঁড়ালো ২ বিলিয়নেরও বেশি। বৃহস্পতিবার ডলারের দর ১২২ টাকা ১৭ পয়সায় নেমে যাওয়ায় নিলাম করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাজারে এক ধরনের সংকেত দেয়া হলো যে, ডলারের দর যেন ১২২ টাকা ২৫ পয়সার নিচে না নামে- এমনটিই বলেছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের এক কর্মকর্তা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারব্যাংক বাজারে দুই সপ্তাহ আগে ডলারের সর্বনিম্ন দর ছিল ১২২ টাকা ৪৮ পয়সা; যা গত বৃহস্পতিবার নেমে আসে ১২২ টাকা ১৭ পয়সায়। বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ ডলার কিনেছিল ৬ই অক্টোবর। চলতি বছরের জুলাই থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডলারের জোগান বেশি হলে দাম কমে, আর চাহিদা বেশি হলে দাম বাড়ে।
ডলারের দর কমার পেছনে কয়েকটি কারণ জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। প্রথমত, সরকারি বড় পেমেন্টের চাপ কমেছে। ফলে দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় ডলারের চাহিদাও কিছুটা কমেছে। দ্বিতীয়ত, দেশে নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য বা বিনিয়োগ কার্যত নেই। ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করছেন না। এতে আমদানি, বিশেষ করে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.২৯ শতাংশ, যা রেকর্ড সর্বনিম্ন। অর্থাৎ পর্যাপ্ত ডলার থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা আমদানিতে আগ্রহী নন। তৃতীয়ত, মাসের শেষদিকে বিদেশে স্যালারি প্রদানের সময় হওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এতে ব্যাংকগুলোতে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি দেখা দিয়েছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান জানান, চলতি মাসের শেষদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে এবং ডিসেম্বরেও এই ধারা ইতিবাচক থাকবে। ডিসেম্বরের প্রথম ১০ দিনে ডলারের চাহিদা কিছুটা কম থাকলেও মাঝামাঝি সময়ে পেমেন্টের চাপ বাড়তে পারে, তখন ডলারের দর আবার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কমার্শিয়াল পেমেন্ট সাধারণত বেসরকারি ব্যাংক করে, আর সরকারি পেমেন্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সম্পন্ন করে। এখন পেমেন্টের চাপ কম হলেও সামনে তা আবার বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৯শে নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২.৬৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত কয়েক মাসের তুলনায় ইতিবাচক প্রবাহ।