Image description

বুধবার সকাল ৯টা ২০মিনিট। ঢাকায় অবতরণ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইট। ইতালির রোম থেকে ঢাকায় আসা ওই ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকির উড়ো তথ্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমানের যাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও। খবর আসে, ৩৪ কেজি বিস্ফোরক রয়েছে ওই ফ্লাইটটিতে। পাকিস্তানি একটি ফোন নম্বর থেকে আসা এমন থ্রেটে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সবাইকে সতর্ক করে দেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। অবতরণের পর প্লেনটিতে চালানো হয় নিরাপত্তা তল্লাশি। দীর্ঘ তল্লাশির পরও বোম বা বোম সদৃশ কোনো কিছুই মেলেনি প্লেনটিতে।

বিমানবন্দর এপিবিএন সূত্র জানিয়েছে, হুমকির বার্তাটি আসে এয়ারপোর্ট এপিবিএন’র ডিউটি অফিসারের অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে। সে সময় দায়িত্বে ছিলেন এএসপি আব্দুল হান্নান। ওই বার্তায় বলা হয়, বিমানের রোম থেকে ঢাকা অভিমুখী ফ্লাইটে ৩৪ কেজি বিস্ফোরক রয়েছে। শাহ্‌জালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি অবতরণের পর এগুলো বিস্ফোরণ ঘটানো হবে। হোয়াটসঅ্যাপের যে নম্বরটি থেকে বার্তাটি আসে সেটি পাকিস্তানি বলে জানিয়েছে এপিবিএন। বার্তাটি সতর্কতা হিসেবে জানানোর জন্য দেয়া হয়েছে, এটি কোনো হুমকি নয় বলেও বার্তায় উল্লেখ করা হয়।

বার্তা পাওয়ার পর ওই নম্বরে ফোন করা হলেও তা রিসিভ করা হয়নি উল্লেখ করে এপিবিএন সূত্র জানায়, বিমানবন্দর থেকে ফোন করা হলেও অপরপ্রান্ত থেকে সেটি রিসিভ করা হয়নি। তবে একইসঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিং অব্যাহত রাখা হয়, পাশাপাশি সবাইকে অ্যালার্ট করে দেয়া হয়। বিস্ফোরক কারা রেখেছে, হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিংয়ে এমন প্রশ্ন করা হলে বলা হয়, কোনো বিরোধী পক্ষ আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আনার জন্য করতে পারে। সূত্র জানায়, বিজি-৩৫৬ নম্বর ফ্লাইটটি মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়েছিল। ফ্লাইটটি রোম থেকে ঢাকায় আসার পথে বোমা হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। সিকিউরিটি প্রসিডিউর অনুযায়ী, প্লেনটি ঢাকায় অবতরণের পরপরই বিমানবন্দরে নিয়োজিত নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে ফ্লাইটটিকে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে নেয়া হয়। যাত্রীবৃন্দকে নিরাপদে নামানো হয় এবং সকল যাত্রী ও ব্যাগেজসহ এয়ারক্রাফট তল্লাশি করা হয়। নিরাপত্তা তল্লাশিতে কোনো কিছু না পাওয়ায় দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘সিকিউরিটি থ্রেট ক্লিয়ার’ হয়। এরপর নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে দুপুর দেড়টার মধ্যে সকল যাত্রী নিরাপদে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

এদিন বিকালে বিমানবন্দরে বোমা হামলা হুমকির সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন  বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ এসেছে। এটা পাকিস্তানি নম্বর। দুইটা ব্যাগ সন্দেহ করেছিলাম। তবে কিছু পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমান রোম থেকে যাত্রা করে ঢাকায় ৯টা ২০ মিনিটে অবতরণ করে। ২৫০ জন যাত্রী ও ১৩ জন ক্রু ছিলেন। আমাদের এখানে আসার পর আমরা সর্বোচ্চ প্রিপারেশন নিই। প্রতিটি সংস্থা সুন্দরভাবে কাজ করেছে। যাত্রীদের দ্রুত বের করে, তিন-চারটা লাইন করে, দ্রুত চেক করে টার্মিনালে নিয়ে এসেছি। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা ছিল টার্মিনালে। প্রতিটি যাত্রী কো-অপারেশন করেছেন। তিনি আরও বলেন, এত বড় অপারেশনে কোনো ছন্দপতন হয় নাই। আমি বিমান বাহিনী প্রধানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। তাকে সংবাদটা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই হাজির হয়ে গেছেন।

বেবিচকের চেয়ারম্যান বলেন, যখন আমরা তদন্ত করি তখন দুইটা ব্যাগে সন্দেহ করেছিলাম। আমরা প্রতিটা লাগেজ স্ক্যানিং করে নামিয়েছি। নিচে আবার স্ক্যানিং করেছি। টোটাল জিনিসটা খুব সুন্দর করে করা হয়েছে। সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। বেবিচকের চেয়ারম্যান বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের কন্ট্রোলরুমে মেসেজটি এসেছে, সেখান থেকে চলে গেছে ইডি’র রুমে, সঙ্গে সঙ্গে ইউএসই টিমকে অ্যালার্ট করা হয়। আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে অ্যাকশনে নেমে পড়ি।  আমরা যখন যাত্রীদের প্রাণ নিয়ে কাজ করি, তখন আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে হয়। কারণ আমরা তো তখন জানি না যে, এটা রিয়েল নাকি আনরিয়েল। তথ্যদাতার সঙ্গে একাধিকবার মেসেজ আদান-প্রদান হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্যদাতা দু’জনের কথা বলেছেন। তথ্যদাতা একটি লাগেজের ছবিও দিয়েছেন। এই ধরনের লাগেজ হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। উনাকে কল করা হয়েছে কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেননি। আমরা থ্রেট  পেলে যে প্রসেস নেয়া দরকার সেটাই নিয়েছি। আমরাও সতর্ক ছিলাম, এটা হয়তো আমাদের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য অন্য কোনো ঝামেলাও হতে পারতো। অ্যালার্ট জারি করেছিলাম, যাতে প্রতিটি লাগেজ, সতর্কতার সঙ্গে চেক করা হয়।