Image description
পিরোজপুর-ঝালকাঠিতে টানা বিক্ষোভ

প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে মাঠে নেমেছেন পিরোজপুর-১ ও ঝালকাঠি-২ আসনের মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির নেতারা। দলীয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে এসব এলাকায় চলছে বিক্ষোভ। বঞ্চিতদের পক্ষে প্রায় প্রতিদিনই মিছিল শোডাউন করছেন তাদের সমর্থকরা। এসব কর্মসূচির কারণে অস্বস্তিতে পড়ছেন দল ঘোষিত সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রাপ্তরা। নেতাকর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে গ্রুপিং ও বিভক্তি। নেতায় নেতায় ভাগ হয়ে আছেন কর্মী-সমর্থকরা। চলমান পরিস্থিতিতে দলে ঐক্য ফেরানো না গেলে আসন দুটিতে বিএনপির জয় পাওয়া মুশকিল হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা।

পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-নেছারাবাদ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী করা হয়েছে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুমন মঞ্জুরকে। এখানে জামায়াতের প্রার্থী মরহুম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামিম সাঈদী। সুমন ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিংবদন্তি সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ভাতিজা মাহমুদ হোসাইন ওরফে ভিপি মাহমুদ, নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফখরুল আলম ও একই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আল বেরুনী সৈকত। মনোনয়ন ঘোষণার পর বঞ্চিতরা থেমে যাবে ভাবা হলেও বাস্তবতা উলটো। মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে জোরেশোরে নেমেছেন বঞ্চিতরা। নির্বাচনি এলাকার দুই উপজেলা ভাণ্ডারিয়া আর নেছারাবাদে নিয়মিত চলছে সমাবেশ, মিছিল। তোলা হচ্ছে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি। উত্তারাধিকার সূত্রে বিএনপির রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত সুমন মঞ্জুর। তার বাবা নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ছিলেন বিএনপির টেকনোক্রেট মন্ত্রী। এই আসনে কখনোই ভোটে জেতেনি বিএনপি।

৯০-এর পরবর্তী সময়ে ৩ বার এখানে বিএনপির মনোনয়ন পান নুরুল ইসলাম। ৯৬-এ মাত্র ৭ হাজার ভোট পেয়ে হারান জামানত। ২০০১-এ তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কিছু বেশি। এছাড়া ২০০৮-এ জেপি (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর কাছে হারেন প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। ২০১৮-এর নির্বাচনে মঞ্জুর ছেলে সুমন মঞ্জুরকে এখানে বিএনপি প্রথমে মনোনয়ন দিলেও পরে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে। এবার অবশ্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে সুমন মঞ্জুরের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। এই ঘোষণার পর থেকেই চলছে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। ভাণ্ডারিয়ায় প্রায় প্রতিদিনই ভিপি মাহমুদের পক্ষে হচ্ছে মিছিল-সমাবেশ। এসব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। সুমনের নিজ উপজেলা ভাণ্ডারিয়ায় এসব বিক্ষোভে বিব্রত তার অনুসারীরা। বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিও এখন পর্যন্ত পালন করতে পারেননি তারা।

শুধু ভাণ্ডারিয়া নয়, নেছারাবাদেও চলছে একই পরিস্থিতি। মাহমুদের পক্ষে শনিবার রাতে নেছারাবাদে হয়েছে মশাল মিছিল। এর আগে ভিপি মাহমুদের পক্ষে নেছারাবাদে প্রচারণা চলার সময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে সুমন অনুসারীরা। এই নিয়ে উত্তেজনা আর পালটা বিক্ষোভ হয় ভিপি মাহমুদের পক্ষে। সংবাদ সম্মেলনসহ থানায় অভিযোগ পর্যন্ত দেন মাহমুদ সমর্থকরা। ফখরুল সমর্থকরাও নেছারাবাদে টানা বিক্ষোভ সমাবেশ করছে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি সুমন। পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম কিসমত বলেন, ‘মনোনয়ন পরিবর্তন করা না করা কেন্দ্রের ব্যাপার। যারা পাননি তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন সেটাই স্বাভাবিক। বিএনপির মতো বড় দলের এটাই সৌন্দর্য। তবে একটা বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন যে শেষ পর্যন্ত সবাই ধানের শীষের পক্ষে থাকবেন। এর ব্যতিক্রম হবে না।’

ঝালকাঠি-২ (নলছিটি-ঝালকাঠি) আসনে সাবেক এমপি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টোকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। ইলেন ছাড়াও এখানে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মাহবুবুল হক নান্নু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জীবা আমিনা খান এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন। অকাল প্রয়াত স্বামী জাতীয় পার্টির এমপি জুলফিকার আলী ভুট্টোর জনপ্রিয়তার ওপর ভর করে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো এমপি হন ইলেন। এর আগে অবশ্য তিনি ছিলেন গৃহবধূ। ২০০৮-এর নির্বাচনেও তাকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। সেবার আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমুর কাছে হেরে যান তিনি। ইলেনের মনোনয়ন ঠেকাতে এখন মাঠে নান্নু-জিবা আর শাহাদাত। নান্নুর পক্ষে নিয়মিত দুই উপজেলায় চলছে মিছিল-বিক্ষোভ। মশাল মিছিলও করেছেন তার অনুসারীরা। একই ভাবে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন জিবা আমিন আর অ্যাডভোকেট শাহাদাত। মাঝে দলীয় এক কর্মসূচিতে একযোগে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি তোলেন বঞ্চিত এই ৩ নেতা। ইলেনকে বাদ দিয়ে অন্য যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি তাদের। এর আগে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর অন্য মনোনয়ন প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন ইলেন। জিবা আমিন আর শাহাদাত প্রশ্ন তোলেন আন্দোলন-সংগ্রামে ইলেনের ভূমিকা নিয়ে। আওয়ামী লীগ আমলের ১৭ বছর তিনি কোথায় ছিলেন সেই প্রশ্নও করেন তারা। এই সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে চলমান এই আন্দোলন নিয়ে নান্নু বলেন, ‘আমরা চাই ত্যাগী পরীক্ষিত কেউ পাক মনোনয়ন। সুবিধাবাদীদের হাতে কেন নেতৃত্ব যাবে?’ এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ইলেন ভুট্টোর মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

পিরোজপুর-ঝালকাঠির পাশাপাশি বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানের সমর্থকরা। ২১ নভেম্বর আগৈলঝাড়ায় মানববন্ধন করেন সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকশ বাসিন্দা। ইঞ্জি. সোবাহানকে মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে স্লোগান দেন তারা। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি জহিরুদ্দিন স্বপন। সোবাহান ছাড়াও মনোনয়ন চেয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান এবং আইনজীবী নেতা কামরুল ইসলাম সজল। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে বাকি দুজন শান্ত থাকলেও মাঠ ছাড়ছেন না সোবাহান। পুরো বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘একাধিক মাঠ জরিপ আর সাংগঠনিক রিপোর্টের ভিত্তিতে মনোনয়নের এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে দল। যারা মনোনয়ন পাননি তারা তা পাওয়ার চেষ্টা করতেই পারেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের একজন কর্মী হিসাবে আমি মনে করি, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হওয়া উচিত সবার কাছে। কে প্রার্থী হলেন আর কে নন, তার চেয়েও জরুরি হচ্ছে ধানের শীষের বিজয়। সবাইকে সেই লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে।’