Image description

বিভেদ ভুলে ধানের শীষের জন্য বগুড়ায় বিএনপির সব পর্যায়ের নেতারা মাঠে নেমেছেন। তাঁদের বাড়তি শক্তি জোগাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়ায় প্রার্থী হয়ে। এর প্রভাব পড়েছে সাতটি আসনের সব কটিতে। ফলে জয় দেখতে বিএনপিতে আনন্দ-উল্লাস বয়ে যাচ্ছে। এর বিপরীতে লড়াই করতে জামায়াতের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছেন।

বগুড়ায় এখন ভোট ও ভোটারদের সঙ্গে চলছে শুভেচ্ছাবিনিময় ও ভোট চেয়ে দোয়া প্রার্থনা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাসদের প্রার্থীরাও মাঠে সক্রিয়।

বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রার্থী হয়েছেন। ফলে জেলাজুড়ে বিএনপিতে উল্লাস বয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের মিলনমেলা চলছে।

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) : এই আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ কাজী রফিকুল ইসলাম। তাঁর বিপরীতে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন ভোটের মাঠে রয়েছেন। এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হয়েছেন এবিএম মোস্তফা কামাল পাশা।

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) : এই আসনে বিএনপি এখনো কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। গত ৯ অক্টোবর বগুড়া-২ আসনসহ অন্য চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। এ ছাড়া এ আসনে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বিএনপি-সমর্থিত জোট থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে প্রচার আছে। তিনি নিজেও দাবি করেছেন, জোটের পক্ষ থেকে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি এই আসন থেকে নির্বাচন করছেন। এ আসনে জামায়াত সাবেক সংসদ সদস্য শাহাদাতুজ্জামানকে প্রার্থী করেছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মুফতি জামাল পাশা ও বাসদের মাসুদ পারভেজও নির্বাচনের মাঠে আছেন।

বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) : এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদার। তিনি প্রচার-প্রচারণায় দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন। জামায়াত থেকে প্রার্থী হয়েছেন নূর মোহাম্মদ আবু তাহের। ইসলামী আন্দোলনের শাজাহান তালুকদার ও বাসদের সুরেশ চন্দ্র দাস দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।

বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) : সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন এ আসনে বিএনপির প্রার্থী। অন্যদিকে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঢাকা মহানগর শিবিরের সাবেক সভাপতি মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ। বাসদ থেকে প্রার্থী হয়েছেন জেলা সদস্য সাইফুজ্জামান টুটুল। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন থেকে ইদ্রিস আলী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনি মাঠে নেমেছেন। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী আলহাজ মোশারফ হোসেন নির্বাচনি এলাকার মানুষের কাছে পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে পরিচিত।

বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) : বরাবরই এ আসনটি বিএনপির দখলে থাকত। মাঝে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ আসনটি দখল করলেও এবার সেটি ফিরে পেতে অভিজ্ঞ ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এই আসনে জামায়াত থেকে ভোটের মাঠে আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের আমির দবিবুর রহমান। বাসদ থেকে সন্তোষ সিং এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন মীর মাহমুদুর রহমান।

বগুড়া-৬ আসন (সদর) : বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব নির্বাচনে এই আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। দেশের মধ্যে তিনি প্রতিবারই এই আসনে রেকর্ডসংখ্যক ভোট পেয়ে থাকেন। আসনটি বিএনপির জন্য ভিভিআইপি হিসেবে পরিচিত। তবে এবারের নির্বাচনে এ আসনে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে প্রার্থী হয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি প্রার্থী হওয়ায় দলের সব নেতা-কর্র্মী মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিনই চলছে ভোটের প্রচারণা কার্যক্রম। অনেকেরই ধারণা, বগুড়ায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ভোট পাবেন তারেক রহমান।

এ আসনে অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল জামায়াত থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তিনিও দিনরাত ভোটের মাঠে থেকে সরব রয়েছেন। এ ছাড়া এ আসনে বাসদ থেকে অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী, ইসলামী আন্দোলন থেকে আ ন ম মামুনুর রশিদ প্রার্থী হয়েছেন।

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) : বিএনপির আরও একটি ভিভিআইপি আসন এটি। আসনটির গাবতলী উপজেলার বাগবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বারবার বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে আসছেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন তিনি। এই আসনে আবারও প্রার্থী হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি প্রার্থী হওয়ায় আসনটিতে চলছে আনন্দ-উল্লাস। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ ভোটাররা তাদের পুত্রবধূর জন্য দোয়া চাচ্ছেন। ভোট চেয়ে গণসংযোগ করছেন। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম রব্বানী, বাসদের শহিদুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম।

বগুড়ার ভোটাররা বলছেন, বগুড়ায় ভোট হবে মূলত বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কারণে জামায়াতও বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তবে যারা হিংসার রাজনীতি ছেড়ে উন্নয়ন করবে ভোটাররা তাকেই ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।