সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এটি বলছেন ভূ-তত্ত্ববিদরাই। বারবার সতর্ক করছেন। কিন্তু কেউই সতর্ক হচ্ছেন না। উল্টো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে দাপ্তরিক কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ সবকিছু। ভূমিকম্প হলে হৈ-চৈ হয়, এরপর সবাই ভুলে যান প্রস্তুতির কথা। এবারের ভূমিকম্পের পর সিলেটে ফের আলোচনায় এসেছে অতি ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলো। কেন সেগুলো ভাঙা হচ্ছে না- এ প্রশ্নের উত্তর নেই কারও কাছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের তালিকায় ভূমিকম্পের অতি ঝুঁকিতে রয়েছে ২৩টি স্থাপনা। সেটি কয়েক বছর আগেই চিহ্নিত করেছিল সিটি করপোরেশন। এরপর ভবন মালিকদের চিঠিও দেয়া হয়েছিল।
তবে, চিঠিতেই শেষ হয়েছিল সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম। বন্দরবাজারে অবস্থান সিলেট সিটি করপোরেশন ভবনের। তার ঠিক পাশেই রয়েছে সিটির মালিকানাধীন একটি বাণিজ্যিক মার্কেট। যেটি সিটি সুপার মার্কেট নামেই সবার কাছে পরিচিত। এ মার্কেটও রয়েছে ভূমিকম্পের অতি ঝুঁকিতে। তালিকায়ও রয়েছে নাম। তবু সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে এই ভবন ভাঙার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এর বাইরে কয়েকটি বাণিজ্যিক মার্কেট, সরকারি স্থাপনাও রয়েছে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে। এ মার্কেটগুলো অনেক পুরনো।
সিলেটের জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলমকে গতকাল নগরের শহীদ মিনারে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলো নিয়ে সাংবাদিকদের তরফ থেকে প্রশ্ন করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে ইতিমধ্যে ২৩টির মতো ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে আমরা গত সপ্তাহে বসেছিলাম। এ ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হবে। এর মধ্যে আমাদের কয়েকটি সরকারি, বেসরকারি ভবনও রয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে এ কাজটি শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ সমস্ত ভবনগুলোর বড় অংশে কেউ থাকছে না বা কাজ করছে না। বাকি কয়েকটিতে এখনো কেউ কেউ কাজ করছে, কেউ বসবাস করছে। আমরা চেষ্টা করছি এগুলোকে যেন ভাঙতে পারি। যাতে বড় অঘটন ঘটলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়।’ সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালের মে মাসে পরপর কয়েকটি ভূমিকম্পের পর সিলেট জুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। তখন মেয়র ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। তার নির্দেশে সিলেটে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে এক্সপার্টরা কাজ শুরু করেন। এ সময় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম নগরের এসব ভবন পরিদর্শন করেন। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একটি রিপোর্টও সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখায় জমা দিয়েছে। এর আগেও একাধিক এক্সপার্ট টিম সিলেটে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণের কাজ করে।
এতে দেখা গেছে, নগরের অতি পুরাতন ২৩টি ভবন ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এই ভবনগুলোর মধ্যে কয়েকটির সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেছিল। কিন্তু বেশির ভাগ ভবনে সক্ষমতা বাড়ানোর কাজই হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, নগরের সিটি সুপার মার্কেট ছাড়াও মধুবন সুপার মার্কেট, মিতালি ম্যানশন, সমবায় ভবন, সিটি সুপার মার্কেট, রাজা ম্যানশন, সুরমা মার্কেট এবং দরগাহ্ গেট এলাকার হোটেল আজমেরী সহ কয়েকটি মার্কেট ও স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূমিকম্প হলে এসব স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এ মার্কেটগুলো পুরনো।
কয়েকটি মার্কেট স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই রয়েছে। এগুলো পরিকল্পিতভাবেও নির্মাণ করা হয়েছে। স্পেস কিনে কিনে দোকান মালিকরা মার্কেট গড়ে তুলেছেন। এদিকে, গতকাল বিকালে সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আলী আকবর মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেটে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা ২৩টি ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে অনেক আগেই। এক্সপার্ট টিমের সদস্যরা এগুলো চিহ্নিত করেন। এরপর চিহ্নিত ওই ভবনগুলোর মালিকদের সিটি করপোরেশন থেকে চিঠিও দেয়া হয়েছিল। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয় ওই চিঠিতে। কিন্তু কেউই তাতে কর্ণপাত করেননি।
তিনি জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ভবন সিটি সুপার মার্কেটটিও ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন। এজন্য সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে খুব শিগগিরই বৈঠক আহ্বান করা হবে। বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে ভেঙে ফেলতে মালিকদের চিঠি দেয়া হবে। এর বাইরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নতুন করে সমীক্ষা করে অতি ঝুঁকি, মাঝারি ঝুঁকি ও কম ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলো চিহ্নিত করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। নতুন নির্মাণ করা ভবনগুলো যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে, এ ব্যাপারে ভবন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।