Image description
পরিকল্পিত নগরায়নের অভাবে গণশৌচাগার নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্ব পায় না শৌচাগার তৈরির পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের দিকেও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন

রাজধানী ঢাকায় জনসংখ্যার তুলনায় পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা অপ্রতুল। ঘরের বাইরে গেলে পাবলিক টয়লেট সঙ্কটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। শহরের পাবলিক টয়লেটগুলো দুর্গন্ধে ভরা। পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় পাবলিক টয়লেটের দুর্ভোগ মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাজধানীতে নিয়মিত বসবাসের বাইরেও বহিরাগত মিলিয়ে কোটি মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। এছাড়া বসবাসরত ভাসমান মানুষদের টয়লেট করতে হয় খোলা জায়গায়। এতে শহরের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নগর দরিদ্র, পথচারী, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য গণশৌচাগার পরিষেবা অনুপস্থিত। কিন্তু এ পরিষেবাটি শুধুমাত্র অবকাঠামো নয়; বরং স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও মানবাধিকারের প্রতীক। মানসম্মত ও প্রবেশগম্য গণশৌচাগার নিশ্চিতের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আবশ্যক। এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরবাসীরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের পাবলিক টয়লেট রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। নগরীতে নির্ধারিত পাবলিক টয়লেটের বেশিরভাগ ব্যবহারের অনুপযোগী। নোংরা, অপরিচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর আর অনিরাপদ। জনবহুল স্থানে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে প্রতিটি ওয়ার্ডেই গণশৌচাগার নির্মাণ করা প্রয়োজন। যেসব স্থানে এখন পাবলিক টয়লেট আছে সেগুলো নতুন করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা দরকার। পাবলিক টয়লেটের স্থানে বসেছে দোকান।

স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট না থাকলে অনেক ধরনের রোগজীবাণু থাকে, যেগুলো তারা শরীরে বহন করে। অনেক ধরনের খোসপাঁচড়াসহ নানা অসুখে ভোগতে হয়। অনেক ধরনের পেটের পীড়া, পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয় রোগ হয়। পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ চেপে রাখার ফলে দীর্ঘস্থায়ীভাবে কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি হয় এসব কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ অভিজাত এলাকাও রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সমস্যা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি। জনবহুল এসব ওয়ার্ডে একাধিক আধুনিক মানের পাবলিক টয়লেট প্রয়োজন হলেও সব মিলিয়ে রয়েছে হাতেগোনা। জনসংখ্যা ও আয়তন বিবেচনায় আরো কয়েক শত আধুনিক মানের পাবলিক টয়লেট দরকার ডিএনসিসি এলাকায়। এছাড়া ঢাকার এই অংশে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বস্তি এলাকা। যেখানে বসবাসকারী লোকজনের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেট নেই।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রায় তিন দশমিক চার বিলিয়নেরও বেশি মানুষের নিরাপদ স্যানিটেশন পরিষেবা ছাড়া জীবনযাপন করে। অনিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ’র মতো মারাত্মক রোগের বিস্তারের প্রধান কারণ। প্রতি বছর প্রায় এক হাজারের বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মারা যায় শুধুমাত্র অনিরাপদ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধির অভাবে। একটি নিরাপদ টয়লেট বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে এবং জীবন বাঁচায়।

তিনি আরো বলেন, পরিকল্পিত নগরায়নের অভাবে ঢাকা মহানগরী ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। প্রকল্পগুলোতে গণশৌচাগার নিশ্চিতের বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব পায় না। শৌচাগার তৈরির পাশাপাশি সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দিকেও সমান গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। প্রতিটি কমিউনিটিতে তিন থেকে চারটি মানসম্মত ও প্রবেশগম্য গণশৌচাগার নিশ্চিত করা যেতে পারে। পাশাপাশি ঢাকা শহরের সকল গণশৌচাগারের ম্যাপিং করে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে নাগরিকরা সহজেই বুঝতে পারবেন তার আশেপাশে কোথায় শৌচাগার আছে। সিটি করপোরেশনের কাছে পর্যাপ্ত মানসম্মত ও প্রবেশগম্য গণশৌচাগার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের আহ্বান জানাই।

গুলিস্তানে পণ্য কিনতে আসা ব্যবসায়ী খায়রুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকায় মনে হয় পাবলিক টয়লেট কম। নিয়মিত এখানে আসা-যাওয়া করি। কিন্তু এই এলাকাতেও নেই পর্যাপ্ত টয়লেট ব্যবস্থা। জরুরি সময় টয়লেট খুঁজে পাওয়া যায় না। মার্কেটের টয়লেট ব্যবহার করতে গেলে তালা বদ্ধ পাওয়া যায়। এমন অবস্থায় খুবই ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে। সেগুলোও জনসংখ্যার তুলনায় খুব কম। এর সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। শহরের বিভিন্ন মসজিদ, বিভিন্ন মার্কেট, তেল ও গ্যাসের পাম্পে টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী করে সর্বসাধারণ যেন ব্যবহার করতে পারে সেই প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (অতি.দা.) হাছিবা খান ইনকিলাবকে বলেন, নগরীতে চলাচলকারী লোকজনের জরুরি সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বিভিন্ন এলাকায় টয়লেট স্থাপন করেছে। এগুলো জরুরি প্রয়োজনে মানুষ ব্যবহার করছে। গুরুত্ব ও জনসংখ্যার চাহিদা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে টয়লেটগুলো সংস্কার, নির্মাণ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সিটি করপোরেশন কাজ করছে।