Image description
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-১ ও ট্রাইব্যুনাল-২ এ আরও চারটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই শুরু হবে এসব মামলার যুক্তিতর্ক। এরপর মামলাগুলো রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ থাকবে। এদিকে, ডিসেম্বরের মধ্যেই রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। তিনি মানবজমিনকে বলেন, একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা আরও আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করেছেন। তিনি বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করছেন। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তকাজ দ্রুতই সম্পন্ন করবেন। আশা করি- ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে পারবো।

মিজানুল ইসলাম আরও বলেন, আগামী মাসের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে চলমান ৪টি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ হবে। এরপর আসামিপক্ষ তাদের সাক্ষ্য দেবে। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের পর্যায়ে আসবে। সেক্ষেত্রে জানুয়ারিতে এসব মামলার রায় আসতে পারে। এসব মামলা হলো- রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা, রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় খুন, আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পরে লাশ পুড়িয়ে দেয়া ও রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা যুবককে গুলির মামলা। প্রসিকিউশন আশা করছে, এ চার মামলার বিচার শিগগিরই সম্পন্ন হবে। 

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা: রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্তের সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার এসএম মইনুল করিম মানবজমিনকে বলেন, আবু সাঈদের মামলার ১৯তম সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৩শে নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ডিসেম্বরের মধ্যে মামলাটির যুক্তিতর্ক শেষ করতে পারবো বলে আমাদের প্রত্যাশা ও চেষ্টা রয়েছে। গত ২৪শে জুন চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেখানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামসহ ৩০ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়। গত ৬ই আগস্ট এ মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

চানখাঁরপুলে ছয় হত্যা মামলায় সাফাই সাক্ষ্য দেবে আসামি পক্ষ: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ৬ জনকে হত্যাসহ সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষী হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের জবানবন্দি চলমান। আইন অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যদান শেষে মামলাটির যুক্তিতর্ক শুরু হবে। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যদান শেষে আসামির পক্ষে কয়েকজন সাফাই সাক্ষী দিবেন। শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক ও মামলার আসামি আরশাদ হোসেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি মানবজমিনকে বলেন, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আমার আসামি গুলির নির্দেশ দিয়েছে এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত দেখাতে পারেনি। এ ছাড়া সেদিন আরশাদ ঊর্ধ্বতন অফিসারদের কমান্ডে ঘটনাস্থলে থাকলেও তিনি কোনো গুলির নির্দেশ দেননি। তিনি বলেন, গত বছরের ৫ই আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলন করেছেন এমন কয়েকজন আমার আসামির পক্ষে সাফাই সাক্ষী দিতে পারেন। তারা সেদিন আরশাদকে গুলি করতে দেখেছিল কিনা সেটি বর্ণনা করবেন। এ ছাড়া মামলায় আটক আসামি কিংবা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে থেকেও আরশাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষী দিতে পারেন। তারা আরশাদকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিল কিনা তার ব্যাপারে সাক্ষী দিবেন। তিনি আরও বলেন, আগামী ২৩শে নভেম্বর আইওর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য আছে। এর পরবর্তী নির্ধারিত তারিখে আমরা সাফাই সাক্ষীর লিস্ট প্রসিকিউশনকে দিবো। অতঃপর তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যদান শেষে সাফাই সাক্ষী উপস্থাপন করবো। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় গত বছর ৫ই আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য চলমান রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলায় ইতিমধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী রোববার তদন্ত কর্মকর্তা জবানবন্দি দেবেন। এ মামলায় ৮ আসামির মধ্যে ডিএমপি’র সাবেক কমিশনার পলাতক হাবিবুর রহমানসহ ৪ জন পলাতক। বাকি ৪ আসামি কারাগারে রয়েছেন। 

আশুলিয়ায় ৬ জনের লাশ পোড়ানো: গত বছর ৫ই আগস্ট বেলা ৩টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একজনকে জীবিত ও ৫ জনকে মৃত অবস্থায় একটি গাড়িতে তোলে পুলিশ। এ মামলায় সাবেক এক এমপিসহ আসামি ১৬ জন। মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ গত বুধবার ২৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন রাজসাক্ষী ও মামলাটির আসামি এসআই আবজালুল হক। শিগগিরই মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুরু হবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।

রামপুরায় গুলির মামলা: গত বছরের ১৯শে জুলাই বিকালে রামপুরা বনশ্রী-মেরাদিয়া সড়কের পাশে থাকা একটি নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ছাদে ঝুলে থাকা যুবক আমির হোসেনকে গুলি করা হয়। এতে তিনতলা থেকে তিনি পড়ে যান। এরপর ওইদিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন ভুক্তভোগী এই তরুণ। একই দিন রামপুরায় শিশু বাসিত খান মুসার (৭) মাথা ভেদ করে তার দাদি মায়া ইসলামের মৃত্যু এবং মো. নাদিম নামের আরও এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় এ মামলা করা হয়। এ মামলায় ডিএমপি সাবেক কমিশনার পলাতক হাবিবুর রহমানসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। বাকিদের সাক্ষ্য নেয়ার পর ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণা করা হবে।