আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৪ বছর আগে বাতিল হওয়া নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, পরবর্তী নির্বাচন থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করেন। আপিল বিভাগের অপর ৬ সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এসএম এমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবি করে আসছিল প্রায় সব রাজনৈতিক দল। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবারো সর্বোচ্চ আদালতে ওঠে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি।
গত বছরের ২৭শে আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করে আপিলের অনুমতি দেয়া হয়। ২১শে অক্টোবর থেকে শুরু হয় আপিলের শুনানি। গতকাল আপিল বেঞ্চ সর্বম্মতভাবে রায় ঘোষণা করেন। এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলছেন, আপিল বিভাগ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও রিভিউ আবেদনের সিদ্ধান্ত সংবলিত সংক্ষিপ্ত আদেশ প্রদান করেছেন। উক্ত সংক্ষিপ্ত আদেশে সংশ্লিষ্ট আপিল ও সিভিল রিভিউসমূহ সর্বসম্মতভাবে মঞ্জুর করা হয়। আদালত আদেশে উল্লেখ করেন- আদালত এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে পর্যালোচনাধীন আপিল বিভাগের রায়টি নথি দৃষ্টে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান একাধিক ত্রুটিতে ত্রুটিপূর্ণ। এ ছাড়া আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, পর্যালোচনাধীন রায়টি এতদ্বারা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হলো। এর ফলে সংবিধানের চতুর্থ ভাগের পরিচ্ছেদ ২ক-এর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত বিধানাবলী, যা সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯৬ (১৯৯৬ সনের ১নং আইন) এর ধারা ৩ দ্বারা সন্নিবেশিত হয়েছিল, তা এতদ্বারা এই রায়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হয়েছে মর্মে সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়। তবে আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, যদিও এইরূপ পুনরুজ্জীবন পরিচ্ছেদ ২ক-এ বর্ণিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিধানাবলীর স্বয়ংক্রিয় পুনঃস্থাপন নিশ্চিত করে, তবে পুনরুজ্জীবিত অনুচ্ছেদ ৫৮খ(১) এবং অনুচ্ছেদ ৫৮গ(২) এর বিধানাবলীর প্রয়োগ সাপেক্ষে উহা কার্যকর হবে। এ ছাড়া, আদেশে বলা হয় যে, পুনঃস্থাপিত ও পুনরুজ্জীবিত পরিচ্ছেদ ২ক-এ বর্ণিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিধানাবলী কেবলমাত্র উক্তরূপ ভবিষ্যৎ প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতেই কার্যকর হবে। সংক্ষিপ্ত আদেশে আরও উল্লেখ করা হয় যে, পরবর্তীতে আদালত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করবে।
এখন থেকে আর দিনের ভোট রাতে হবে না- অ্যাটর্নি জেনারেল: রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপিল বিভাগ এই রায়কে প্রসপেক্টিভ ইফেক্ট দিয়েছেন। অর্থাৎ আগামী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর এই রায় কার্যকর হবে। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের রায়ে মানুষ এখন নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে। এখন থেকে আর দিনের ভোট রাতে হবে না কিংবা মৃত মানুষও ভোট দিতে পারবেন না। দেশ গণতান্ত্রিক মহাসড়কে হাঁটা শুরু করলো।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসায় আজ বাংলাদেশের মানুষ আগামীদিনে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন। দিনের ভোট রাতে হবে না। মৃত মানুষ এসে ভোট দিয়ে যাবেন না। এ রকম একটি গণতান্ত্রিক মহাসড়কে চলা শুরু করলো বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, আপিল বিভাগ আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন। সেই রায়টি আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিক্রমে বাতিল করেছেন। আপিল বিভাগ এই রায়কে প্রসপেক্টিভ ইফেক্ট দিয়েছেন। অর্থাৎ আগামী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর এই রায় কার্যকর হবে। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো। মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ১৯৯৬ সালে আনা হয়েছিল। সেটাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না বলে, এটা সাংবিধানিক বলে ঘোষিত হলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি সহায়ক ব্যবস্থা হিসেবেই হয়তো পূর্ণাঙ্গ রায়ে আসবে। কারণ এই লাইনে শুনানির ভিত্তিতেই সমাপ্ত হয়েছে। পরের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকলে সংবিধানের ৫৮(গ)৩ অনুসারে প্রধান বিচারপতিই কি এই সরকারের প্রধান হবেন? জুলাই সনদে কিন্তু ভিন্ন ধরনের কথা বলা হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় এলে সেটা দেখা যাবে।
পঞ্চদশ সংশোধনী মামলার সঙ্গে এই রায় কোনোভাবে সাংঘর্ষিক হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল। এটা পঞ্চদশ সংশোধনীর ইস্যু। অসৎ উদ্দেশ্যে এই সংশোধনী আনা হয়েছিল উল্লেখ করে হাইকোর্ট এটাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন। হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, সে পার্টটা আপিল বিভাগে চ্যালেঞ্জ হয়নি। যদি চ্যালেঞ্জ হয়ও, আপিল বিভাগ এই রায়কে অতিক্রম করবে না। এটা রিভিউয়ের রায়। রিভিউয়ে আপিলের অনুমতি দিয়ে এই রায়টা হয়েছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেল। পরবর্তী সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের যে বিধান রয়েছে, সেটা কার্যকর হলো।
জুলাই সনদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার যে রূপরেখা আছে, সেটির পরিবর্তন সম্ভব হবে কিনা, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পার্লামেন্টের কিছু ডিসকাশন থাকবে। ২০ বছর পরে জনগণ যদি মনে করে এই ব্যবস্থা পচে-গলে গেছে, এর থেকেও ভালো কোনো ব্যবস্থা গণতন্ত্র সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন, তাহলে অবশ্যই পার্লামেন্টের ডিসকাশন থাকবে।
বিএনপি এই রায়কে স্বাগত জানায়: বিএনপি’র পক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, রায় ঘোষণার পর আজ মনে হচ্ছে ঈদের দিন। কারণ একজন বিচারপতি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে রায় দিয়েছিলেন। সেই রায়ের ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। সংবিধান সংশোধন করেছে। জয়নুল আবেদীন বলেন, আজকের রায়ের ফলে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে এসেছে। দেশের মানুষ এতদিন ভোট দিতে পারেনি। তারা এখন ভোট দিতে পারবে। আদালত স্পষ্টভাবে বলেছেন যে এই রায় প্রসপেক্টিভ (ভবিষ্যৎমুখী)। বিএনপি’র পক্ষ থেকে তারা আগেই আবেদন করেছিলেন যে আপিল ও রিভিউ নিষ্পত্তির সময় আদালত যেন রায়টি প্রসপেক্টিভ বলে ঘোষণা করেন। সেই আর্গুমেন্ট আদালত গ্রহণ করেছেন।
বিএনপি’র আরেক আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আদালত বলেছে, এর কার্যকারিতা প্রস্পেক্টিভলি। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম- বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যারা ইতিমধ্যে ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। আজকের রায়ের মাধ্যমে এটা স্পষ্টত হয়ে গেল যে এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যেটি আজকে থেকেই সংবিধানে ফিরে এলো, তার অধীনে আসন্ন নির্বাচনটি হবে না। এই রায়ের কার্যকারিতা হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের পরে।
রায়ের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে এই মামলায় জামায়াতের পক্ষে শুনানি করা সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়টি বর্তমানে কার্যকর হবে না। এটা কার্যকর হবে আগামীতে। অর্থাৎ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কার্যকারিতা থাকবে না। চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে এটা কার্যকর হবে। তিনি বলেন, রায়ে বলা হয়েছে অতীতের যে রায় দেয়া হয়েছে, তা কলঙ্কিত ছিল। এই রায় ঘোষণার ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হলো। সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই সরকার গঠিত হবে। এখন যেহেতু সংসদ নেই, সেহেতু এই সরকার গঠন এখন কার্যকর হবে না। এটা মূলত আগামীতে কার্যকর হবে, এখন না। অর্থাৎ চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে এই সরকারব্যবস্থা কার্যকর হবে। তিনি আরও বলেন, আজ থেকে ৪১ বছর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এর মাঝে অনেক কিছু হয়ে গেছে, অবশেষে জাতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। কেয়ারটেকার সরকার একটা পিলার, যা সরিয়ে ফেললে অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। ‘আমরা মনে করি, নির্বাচনের ক্ষেত্রে জয়-পরাজয় গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আমরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিলাম, আমরা ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের জন্য চাইনি। অবশেষে আমরা সেখানে ফিরে এলাম। আমাদের পরবর্তী সবার দায়িত্ব হবে, একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন যাতে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলমন্ত্র হয়।’ তিনি বলেন, জুলাই চার্টারে চারটি অপশন দেয়া হয়েছে। এই চারটি অপশন যদি গণভোটে জয়ী হয়, তাহলে নতুন পার্লামেন্টে সংবিধান সংস্কারের সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফরম্যাটে পরিবর্তন আসতে পারে।
ড. বদিউল আলম মজুমদারের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ৫৮(গ) ধারা দেখিয়ে আমি আদালতকে বলেছিলাম যে উনাদের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরে এলেও এটাকে অবিলম্বে কার্যকর করা সম্ভব নয়, কারণ ৫৮(গ) ধারায় সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে যে সংসদ ভেঙে দেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হতে হবে। আমাদের সংসদ এক বছরেরও বেশি আগে ভেঙে দেয়া হয়েছে। কাজেই এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা খুশি যে আজকের রায়ে আদালত আমরা যে ৫৮(গ) ধারা নজরে এনেছিলাম সেটার উল্লেখ করে বলেছেন যে এই রায় প্রস্পেক্টিভলি অর্থাৎ ভবিষ্যৎ থেকে কার্যকর হবে।
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে: তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান পুনরুজ্জীবিত করার রায়ে আনন্দিত সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, আপিল বিভাগের আজকের রায়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে। মজুমদার বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক যে রায় দিয়েছিলেন, তার মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। যার ফলে গত তিনটি নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। আজকের রায়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে। দীর্ঘ সংগ্রামের পর আদালত রিভিউ পিটিশনটা গ্রহণ করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছেন।
ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৯ সালে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্টের তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ ২০০৪ সালের ৪ঠা আগস্ট রায় দেন। তাতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করা হয়। আপিলের শুনানি শেষে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে (৪: ৩) ২০১১ সালের ১০ই মে রায় দেন। সেই রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন, ১৯৯৬ (আইন-১: ১৯৯৬) বাতিল ও সংবিধানপরিপন্থি ঘোষণা করা হয়।
২০১২ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তবে তা প্রকাশের আগেই ২০১১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়েও দু’টি রিট আবেদন করা হয়। সুজন সম্পাদকসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি একটি এবং নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি রিট আবেদন করেন। আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৬ই অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩শে অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর একটি আবেদন করেন।