Image description

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ভারত থেকে ফেরত আনতে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। আইন উপদেষ্টা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রত্যর্পণের জন্য (ভারতের কাছে) চিঠি দেয়া হচ্ছে। যেহেতু তারা এখন সাজাপ্রাপ্ত, কাজেই সরকার মনে করে ভারতের এখন বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে তাদের ফেরত দেয়ার জন্য। বাংলাদেশের মানুষের বিচারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য ভারত যেন প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তার দায়িত্ব পালন করে, সেটি স্মরণ করিয়ে ভারতকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে এই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কোনো রকম অ্যাপ্রোচ করতে পারেন কিনা সেটা বিচার-বিবেচনা করার জন্য অচিরেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগ, বদলি, অন্যান্য বিষয় এবং আদালতের কন্ট্রোল ও শৃঙ্খলা সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের হাতে ন্যস্ত থাকবে। আসিফ নজরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে। পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এটা আমাদের বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ছিল। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সকল দল এ বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তিনি জানান, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের একটি পৃথক সচিবালয় লাগবে। পৃথক সচিবালয়ের নীতিগত আইনের একটি অনুমোদন এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের মিটিংয়ে করেছিলাম। আজকের বৈঠকে এটা চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে।

বিচারকার্যে নিয়োজিত যারা রয়েছেন বিষয়টি উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, তাদের কন্ট্রোল, ছুটি সংক্রান্ত বিষয়াদি সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের হাতে চলে যাবে। বিচার বিভাগে অন্য যারা আছেন তারা কোনো কোনো জায়গায় প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করেন। নির্বাচন কমিশন, দুদক, জুডিশিয়াল এডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আইন কমিশন এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা, নিম্ন আদালতে বিচারকরা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রণালয়ের মধ্যেও তারা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। 

নিম্ন আদালতে বিচারকরা যে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, তাদের কাজের শৃঙ্খলা, ছুটির বিষয়াদি এটা আইন মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকবে। শুধুমাত্র নিম্ন আদালতের বিচারকরা যারা আছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ, কন্ট্রোল, শৃঙ্খলা, ছুটিজনিত বিষয়াদি উচ্চ আদালতের হাতে চলে যাবে। উচ্চ আদালত তার সচিবালয়ের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।  

উল্লেখ্য, জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ১৭ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন। তার সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও।