Image description
 

জাতীয় নির্বাচন এলেই দাবির পসরা নিয়ে বসেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এবার গাড়ি কেনার ঋণ ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে বিনা সুদে ৪৫ লাখ টাকা করার আবদার জানিয়েছেন তারা। এতে শুধু উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা ঋণ নিতে চাইলে সরকারকে গুণতে হবে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের এই সময়ে, এমন সিদ্ধান্ত অন্যান্য ক্যাডারদের সঙ্গে বৈষম্য বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচন এলেই যেন বায়নার পসরা সাজিয়ে বসে প্রশাসন ক্যাডার। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য চালু করা হয় গাড়ি কেনার সুবিধাস্বরূপ বিনা সুদের ৩০ লাখ টাকার ঋণ। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে তা বাড়িয়ে ৪৫ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।

সেখানে বলা হয়, গাড়ির দাম বাড়ায় একজন কর্মকর্তাকে তার পছন্দের গাড়ি কিনতে এখন পকেট থেকে অতিরিক্ত ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে, যা সংগ্রহ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, এমন সুবিধা দিলে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

 

অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই অর্থ কিন্তু কোনটাই দান নয়। এগুলো সব আমাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে অথবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর ঋণের ভার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সুতরাং সাশ্রয়ীভাবে সরকারি ব্যয় করা অবশ্যই আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

বর্তমানে প্রশাসনে শুধু উপসচিব আছেন ১ হাজার ৬৫৯ জন। যদি তারা সবাই গাড়ি কেনার ঋণ নেন, তাহলে সরকারকে বাড়তি গুণতে হবে প্রায় ৭৪৭ কোটি টাকা। মাসে ৫০ হাজার টাকা রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হিসাব করলে ১০ বছরে লাগবে আরও ২৪৮ কোটি টাকা। আর জনপ্রশাসনের সবাই এই সুবিধা নিতে চাইলে খরচ হবে আরও বিপুল অংকের অর্থ।

 

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ সাইফুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমি গাড়ি নিলে গাড়ির পেছনের ব্যয়টা আমাকেই বহন করতে হবে, এটুকু থাকা উচিত ছিল। আমরা নিজেরাই আইন বানাই এবং নিজেদের জন্যই তা প্রয়োগ করি। অতএব, সুবিধাটা নিজেদের যেভাবে নেয়া যায়।

 

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ড. ফিরোজ মিয়া বলেন, আমাদের মতো দেশে যেখানে অর্থনৈতিক সমস্যা এত প্রকট, সরকারের আর্থিক সামর্থ্য নেই, এ ধরনের অযৌক্তিক সুবিধা বন্ধ করা উচিত। গাড়ি এই বিলাসিতা বন্ধ করা উচিত।

তথ্য বলছে, নতুন গাড়ি কেনা, ভবন নির্মাণ এবং কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ ঠেকাতে চারদফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। ২০১৭ সালে সুবিধাটি চালুর পর বিনা সুদের এই ঋণে গাড়ি কিনেছেন ২ হাজার ৮০০ কর্মকর্তা।