Image description
 

আশুলিয়ায় জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছয়জনকে গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় জেরা চলাকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এ প্রসিকিউটর ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে আজ বৃহস্পতিবার।

 

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে পুলিশ সাবেক এসআই শেখ আবজালুল হককে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করছিলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। জেরার এক পর্যায়ে আবজালুল জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট তিনি অনুমতি ছাড়া আশুলিয়া থানা ত্যাগ করেন এবং ১৫ আগস্ট ফিরে আসেন। তিনি তখন আশুলিয়া থানায় কর্মরত ছিলেন এবং পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার হন।

জেরায় আইনজীবী মিজানুর রহমান জানতে চান, থানায় ফিরে এসে তিনি এএসআই রাজু আহমেদের মৃত্যুর খবর শুনেছিলেন কি না। এই প্রশ্নকে ঘিরেই আদালতে বিতর্ক শুরু হয়। প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম আপত্তি জানিয়ে বলেন, রাজসাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতে পারে, কিন্তু এ ধরনের প্রশ্ন করা যাবে না।

জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, ‘একজন দারোগাকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে—এ প্রশ্নই যদি করা না যায়, তাহলে এই বিচার কীভাবে হবে?’ তিনি এসময় এএসআই রাজুর স্ত্রীর করা মামলার নথি আদালতে তুলে ধরেন এবং জানান, এটিও এক স্ত্রীর বিচার চাওয়া।

প্রসিকিউটর প্রশ্ন তোলেন—এই নথি আদালতে দেখানোর অনুমতি আছে কি না এবং সাফাই সাক্ষীর তালিকা বা ডকুমেন্টস দেয়া হয়েছে কি না। তখন মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, সাফাই সাক্ষীর নাম দিলেই হুমকি দেয়া হয়, আরেকজন সুখরঞ্জন বালির ঘটনা তৈরি করতে চান কি না।

প্রসিকিউটরের বক্তব্য ছিল—এই মামলার সঙ্গে যুক্ত না হলে সেই বিষয়ে জেরা করার যুক্তি নেই। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক বাড়তে থাকলে ট্রাইব্যুনাল অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে জানায়, ‘সাক্ষ্য নিতেই এত জটিলতা!’ আদালত আরও বলেন, আইন অনুযায়ী চললে এসব সমস্যা হয় না।

 

আসামিপক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, অ্যাপ্রুভার হিসেবে আবজালুলের জানা সব সত্য প্রকাশ করার আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে, আর পুলিশ হত্যার ঘটনাটি তার জানা। কারণ তিনি রাজুর স্ত্রীর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। প্রসিকিউটর আবারও বলেন, এটি বর্তমান মামলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে বিচারকেরা দুই পক্ষকেই শান্ত থাকতে বলেন। প্রসিকিউটর অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষ শুরু থেকেই প্রতিটি সাক্ষীকে পুলিশ হত্যার প্রসঙ্গ তুলেই জেরা করছে। আদালত এরপর আসামিপক্ষকে পরবর্তী প্রশ্নে যেতে নির্দেশ দেয়।

এই মামলায় আসামি আছেন ১৬ জন। তাদের মধ্যে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার তৎকালীন ওসি এ এফ এম সায়েদ, এএসআই বিশ্বজিৎ সাহাসহ আটজন পলাতক। গ্রেপ্তার থাকা অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী ও শহিদুল ইসলাম, ডিবির সাবেক পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার এসআই আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অনুপস্থিত থাকায় ট্রাইব্যুনাল–২-এর কার্যক্রম পরিচালনা করেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং তার সঙ্গে ছিলেন বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।