নানান জটিলতা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। ফলে অনেক বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রচার। এ ছাড়া স্বল্প সময়ে ব্যালট প্রস্তুত, ভোট কেন্দ্র ও লোকবল বাড়ানোর বিষয় তো আছেই। তবে এখন পর্যন্ত গণভোটের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ। অন্যদিকে গণভোটকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ মনে করছেন রাজনীতিবিদরাও। তাঁরা বলছেন, গণভোটে ‘হ্যাঁ’কে জয়ী করতে হবে। যদি ‘না’ জয়লাভ করে তাহলে সবার জন্য বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরি হবে। পাশাপাশি সংস্কার ও অভ্যুত্থান প্রশ্নের মুখে পড়বে।
অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো গণভোটের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি নেয়নি বলে জানিয়েছে। বেশ কয়েকটি দলের নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গণভোটের বিষয়ে দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। সরকার দিনও নির্ধারণ করেছে। তবে গণভোটের প্রচারের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত দুই পক্ষের কাছ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখিনি।’ তবে কোনো কোনো দল জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পরই গণভোটের বিষয়টি নিয়ে মাঠে প্রচার চালানো হবে।
এ নিয়ে শিগগিরই জোটবদ্ধ বৈঠকের পাশাপাশি দলগুলো নিজেদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করবে বলে জানিয়েছে। সেখানে পরিকল্পনা করা হবে গণভোট ইস্যুতে কীভাবে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যায়। বিএনপি, জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি দল এরই মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা রাজনীতি নিয়ে গেছে তৃণমূলে। মনোনয়ন পাওয়া নেতারা নিজ নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। ভোট চেয়ে ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। লিফলেট, পোস্টার বিলি করছেন। এসব প্রচারে দল ও নিজেদের জন্য ভোট চাওয়া হলেও গণভোট নিয়ে নেই কোনো কথা। কোনো প্রার্থীই এখন পর্যন্ত তাদের প্রচারকাজে বিলি করা লিফলেট বা অন্য কিছুতে গণভোটের বিষয়টি তুলে ধরেননি। এমনকি সমাজমাধ্যমেও গণভোট নিয়ে দলগুলোর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক দলের নেতারা জানান, দলীয় ফোরামে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে এটা এক ধরনের নতুন নির্বাচন হওয়ায় পরিকল্পিত পরিকল্পনার প্রয়োজন। যখন আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার শুরু হবে, তখন গণভোট ইস্যুতে মাঠে প্রচারের কাজ করবেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘চারটি বিষয়ের ওপর একটাই উত্তর-“হ্যাঁ” বা “না” চাওয়া হয়েছে। এটা বিভ্রান্তিকর। কোনো সন্দেহ নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে গণভোটের যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ “হ্যাঁ” ভোট নেওয়া, সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা যাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। এটা খুব বাস্তব একটা শঙ্কা। গণভোটে যদি “না” জয়লাভ করে, সবার জন্য বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটবে। তখন অভ্যুত্থান, জুলাই সনদ, গণভোট সবকিছুই হুমকির মধ্যে পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচনি প্রচারের সঙ্গে “হ্যাঁ” ভোটের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করব। তবে এ বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ মানুষ যদি না-ই জানে কীসে ভোট দিতে হবে, তাহলে সেটা ঠিক হবে না।’
একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো গণভোটের পক্ষেই প্রচার চালাবে। জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করবে।’ তিনি বলেন, ‘তবে এখন পর্যন্ত জোটবদ্ধ দলগুলোর মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে আমরা জনসাধারণকে “হ্যাঁ” চিহ্নে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাব। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। যখন তফসিল ঘোষণা করা হবে তখন আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচারে মাঠে নামব। মূলত তখনই গণভোটের বিষয়টি প্রচারে থাকবে।’
সংবিধান সংস্কার, জুলাই সনদ এসব প্রসঙ্গে গণভোট কীভাবে হবে, তা নিয়ে ধারণা পাওয়া গেছে ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ উত্তরে গণভোট নেওয়া হবে একটি প্রশ্নেই। তবে সেটি চারটি বিষয় ঘিরে হবে। প্রশ্ন উঠেছে গণভোটের আলোচিত চার প্রশ্ন নিয়ে। পাশাপাশি চার প্রশ্নের এক উত্তর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নিয়ে চলছে বিতর্ক। এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় বইছে। তাদের সমালোচনা সরকারের দিকে। সাধারণ মানুষের জন্য এ ধরনের প্রশ্ন দুর্ভেদ্য বলে আখ্যা দিচ্ছেন রাজনীতিবদরা। বিষয়টি নিয়ে দলগুলো সরব হয়েছে। তারাও প্রশ্ন তোলা শুরু করেছে গণভোটের চার প্রশ্ন নিয়ে। নির্বাচনের যে সময় রয়েছে তার মধ্যে প্রশ্নগুলো নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা কঠিন হতে পারে বলে মনে করে দলগুলো। এ পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে প্রশ্নমালা তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সরকারকে। বিষয়টি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে সরকারকে আলোচনার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।