Image description
কঠোর নীতিতে একের পর এক দূতাবাস, ভিসা কমানোর সিদ্ধান্তগুলো ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলছে : ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন দেশের ভিসানীতিতে কঠোরতা বাড়ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা প্রক্রিয়ায় আরো কঠিন শর্ত আরোপ করেছে। এতে করে বিদেশে ভ্রমণ, চাকরি ও ব্যবসায়িক সুযোগ কমতে শুরু করেছে বাংলাদেশিদের জন্য। বিশেষ করে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ একাধিক দেশের দূতাবাস ভিসা যাচাই কঠোর করে দিয়েছে। পর্যটন, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-সব ক্ষেত্রেই দূতাবাসগুলোর নতুন নিয়ম বাংলাদেশিদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সাথে ভিসানীতি কঠোর করে কোনো কোনো দূতাবাসের বিরুদ্ধে উপরি আয়ের প্রবণতা বাড়ছে। ভিসা প্রত্যাখ্যান করে টাকা রোজগারই যেন কোনো কোনো দূতাবাসের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে প্রথমবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে বাধ্য হয়ে ভিসাপ্রার্থীরা দ্বিতীয়, তৃতীয়বার ভিসার আবেদন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, মানসিক যন্ত্রণা এবং হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবার কোনো কোনো দূতাবাসের বিরুদ্ধে দালালের মাধ্যমেও ভিসাপ্রাপ্তি সহজ করা হয়েছে, যা ভিসার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে খুবই দুঃখজনক।

এক্ষেত্রে পাসপোর্টের র‌্যাংকিংয়ে নিচে নেমে যাওয়াও একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা বাংলাদেশের জন্য একটা কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ। প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বহু অলীক স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ভিসা বিশ্বের দরবারে সহজ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা দিন দিন কঠিন হচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বাংলাদেশ দিন দিন ‘নিষিদ্ধের’ তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে না পারায় ক্রমে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, ভিসা কমানোর সিদ্ধান্তগুলো ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশ এবং এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলছে।

দুই বছর আগেও ভিয়েতনাম বাংলাদেশিদের জন্য অন অ্যারাইভাল দিত। এখন দেশটি ভিসা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। আগে থাইল্যান্ডের ভিসা পেতে লাগতো মাত্র তিন দিন। এখন নানা হয়রানি শেষে ভিসা পেতে দেড়-দুই মাস লাগে। তাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২/১ বার রিজেক্ট হওয়ার পর ভিসা পাওয়া যায়। অভিযোগ রয়েছে, থাই দূতাবাস বৈধ কাগজপত্র পরীক্ষা না করেই খেয়াল-খুশি মতো ভিসা রিজেক্ট করে। এতে করে তাদের আয় অনেকাংশে বেড়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, থাই দূতাবাসে দালাল ধরলে সহজেই ভিসা মেলে। তার মানে দূতাবাসের লোকজনের সাথে দালালদের একটা আঁতাত আছে। এখানেও রয়েছে টাকার খেলা। ভুক্তভোগী একজন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, থাই দূতাবাসে একাধিক দালালচক্র সক্রিয়। দালাল না ধরে প্রথমবার আবেদন করলে সেই ভিসা বাতিল করা হয়-এটা এখন প্রমাণিত শর্ত। এতে করে মানুষের আগ্রহ যেমন কমছে, ট্রাভেল ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সূত্র জানায়, থাই দূতাবাস পর্যটন ভিসায় ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ভ্রমণ ব্যয়ের প্রমাণ এবং যাতায়াতের ইতিহাস যাচাই শুরু করেছে। নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি প্রবেশ-বহির্গমন থাকলে সন্দেহজনক হিসেবে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে ভিসা-ফিও। তবে থাই দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, ওভারস্টে অপরাধে জড়িত পর্যটকদের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নেপালও আগে সহজে ভিসা দিত। এখন তারাও কঠোর হয়েছে। আর মিসর, ব্রুনাই, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার, উজবেকিস্তান, ভারত, বাহরাইন, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ ভিসা দিচ্ছে না বললেই চলে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াও ভিসার সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। এতে করে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা কমেছে। অন্যদিকে, মুসলিম দেশ মালয়েশিয়ায় ভ্রমণ ভিসায় নজিরবিহীন বাধা সৃষ্টি করছে। মালয়োশিয়ায় বাংলাদেশিদের ট্যুরিস্ট ই-ভিসা এখনো বন্ধ। বিমানবন্দরে প্রবেশ বাতিলের ঘটনাও বেড়েছে। ভ্রমণ ভিসায় আসা যাত্রীরা কর্মসংস্থানের চেষ্টা করলে সরাসরি নির্বাসন দেওয়া হচ্ছে। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ জানায়, জাল ভিসা চক্রের কারণে দূতাবাস নতুন যাচাই পদ্ধতি চালু করেছে।

অপরদিকে, ভিয়েতনামে ভ্রমণ ভিসায় এখন বাধ্যতামূলক স্পনসরপত্র, হোটেল বুকিং নিশ্চিতকরণ ও ব্যাংক সলভেন্সি। ভিসা ছাড় না থাকায় বাড়ছে সময় ও খরচ। এ ছাড়া ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’ এখন সীমিত কিছু ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সউদী আরব ভিজিট ও শ্রমিক ভিসায় বাড়তি যাচাই চালু করেছে। স্পন্সর না থাকলে ভিসা অনুমোদনের সম্ভাবনা কমছে। নতুন করে ওভারস্টে করলে তাৎক্ষণিক মামলা ও আটক হচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের মতে, ভিসা জটিলতায় বিদেশগামী শ্রমিক পাঠানো ব্যাহত হচ্ছে। পর্যটন ব্যবসা ক্ষতির পাশাপাশি ভিসা প্রক্রিয়ায় সময় ও খরচ বাড়বে। বিদেশে বাংলাদেশিদের ভাবমর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর অক্টোবর থেকে এই নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় এক বছরের বেশি সময় আমার এর পেছনে চলে গেছে। তবু বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী একজন শিক্ষার্থী ভিসা পাননি। শুধু শিক্ষার্থী ভিসাই না, বহু দেশ ঘোরা ব্যক্তি কিংবা কাজের জন্য শ্রমিক ভিসাও সহজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। এমনকি ভিয়েতনাম কিংবা ইন্দোনেশিয়ার মতো যে দেশগুলো থেকে সহজেই ভিসা পাওয়া যেত এতদিন, তারাও অনেক ক্ষেত্রে ভিসা দিচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। অথচ ভারতের পর্যটন ভিসা ছাড়া কার্যত কোনো দেশ থেকেই বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিসার অপব্যবহার করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে কমেছে বিশ্বাসযোগ্যতা। এছাড়াও দেশের বাইরে রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রকাশ্য বিবাদে জড়ানোর কারণেও নষ্ট হচ্ছে দেশের ভাবমর্যাদা। এক্ষেত্রে পাসপোর্টের র‌্যাংকিংয়ে নিচে নেমে যাওয়াও একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে বলেও মনে করছেন অনেকে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সবার আগে দেশের ভেতরে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। একই সাথে কূটনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানেরও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা না থাকার পরও বাংলাদেশিদের ভিসা দিচ্ছে না বেশ কয়েকটি দেশ। বিদেশে পড়তে, কাজ করতে কিংবা বেড়াতে যেতে আগ্রহীদের অনেকেই জানিয়েছেন এমন অভিযোগ। একই সমস্যার কথা জানিয়ে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, দেশগুলো ভ্রমণসহ অনেক ধরনের ভিসা দিচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে টোয়াব-এর সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, ভারত, আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, উজবেকিস্তান, সউদী আরব, ভিয়েতনাম- এসব দেশ আমাদের ভিসা দিচ্ছে না। শুধু তাই নয়, থাইল্যান্ডের ভিসা অনেক বেশি সময় নেয়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার ভিসার রেশিও কম। ফিলিপাইন অনেক বেশি সময় নেয়। ইন্দোনেশিয়ার ভিসা ফি অনেক। এমনকি অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া শ্রীলঙ্কার ইলেক্ট্রনিক ভিসা হতেও সময় নিচ্ছে দুই-তিন দিন।

২০২৪ সালের পাঁচ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা বন্ধ করে দেয় ভারত। দেশটির এই সিদ্ধান্তকে অনেকটা রাজনৈতিক হিসেবে দেখা হলেও ঘোষণা ছাড়াই ইউরোপ, আমেরিকাসহ এশিয়ার অনেক দেশ থেকে সব ধরনের ভিসা পাওয়াই কঠিন হয়ে উঠেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতগুলো দেশের ভিসা নিয়ে এমন জটিলতা খুব বেশিদিনের না। এ নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন সেলিম জানান, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছরই বাংলাদেশিদের জন্য পাঁচ থেকে ছয় লাখ ভি১, ভি২ ভিসা দিয়ে থাকে। কিন্তু এই বছর দেশটির দূতাবাস “মনে হয় না দুই লাখের বেশি ভিসা দিয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া বা কানাডা কিন্তু ২০২৩-২৪ সালে আমাদের অনেক ভিসা দিয়েছে- পাসপোর্টের মেয়াদ যতদিন, ততদিন পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু এ বছর কিন্তু কোনো ভিসা দিচ্ছে না।

ভিসা জটিলতার কারণ হিসেবে অনেকেই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে কারণ হিসেবে মনে করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মূল আরো গভীরে। তাদের মতে, অনিয়মিত পথে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন দেশে ঢোকার প্রবণতা, আর তা করতে সহজলভ্য দেশের ভিসা নিয়ে অন্য দেশে পাড়ি জমানোর ঘটনা দেশগুলোর প্রশাসনের চোখে পড়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ভিসা পাওয়ার সুযোগে বা এটাকে অপব্যবহার করে অনেকে কিন্তু অনিয়মিতভাবেও যাচ্ছে। এবং সে প্রবণতার কারণেই আমার ধারণা যে দেশগুলোতে খুব বেশি অভিবাসনবিরোধী বাতাবরণ নেই সেই দেশগুলোও কিন্তু এখন সতর্ক হচ্ছে। যেমন ধরুন ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড। এমনকি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভ্রমণ ভিসায় বিদেশে লোক পাঠিয়ে শ্রমিক ভিসায় রূপান্তর করেন বলেও অভিযোগ আছে। আবার প্রতিবেশী দেশ থেকে বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা ভিসা নিয়ন্ত্রণের কারণে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু দেশ আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। যার কারণে অল্প সংখ্যক মানুষের ‘অনিয়মিত’ বা আইন বহির্ভূত কাজে যুক্ত থাকার ফল অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। একই সাথে সেসব দেশে গিয়ে প্রকাশ্যে কোন্দল বা বিবাদে জড়ানোর ঘটনাও দেশের ভাবমর্যাদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যার প্রকাশ দেখা যাচ্ছে নানা দেশের ভিসা জটিলতায়।

ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্টের র‌্যাংকিংয়ের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক নাগরিকত্ব ও পরিকল্পনা-বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্যমতে, দুর্বলতম পাসপোর্টের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।

বিশ্বের ৩৮টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের সুযোগ আছে বাংলাদেশের নাগরিকদের। এই তালিকার বেশিরভাগ দেশই আফ্রিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের, যেখানে বাংলাদেশিদের যাতায়াতের প্রবণতাও কম। এছাড়াও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় অবৈধ অভিবাসনের সুযোগ খোঁজার প্রবণতা বেড়েছে।

গত বছর ডিসেম্বরে ভারতের ভিসা সীমিত থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে অন্য দেশে সরাতে কূটনীতিকদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। তিন মাস পর মার্চ মাসে ঢাকা থেকেই নয়টি দেশের ভিসা প্রক্রিয়া শুরু হয়, কিন্তু সেই দেশগুলো থেকেও ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে সংবাদমাধ্যমে ভিসা জটিলতার কথা স্বীকার করেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। দায়ী করেন, বাংলাদেশিদের কর্মকা-কে। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারকে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের ভ্রমণ ভিসার ক্ষেত্রে জটিলতার বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিক। সেক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত পরিস্থিতি বদলানোর সুযোগ নেই। তবে ভারত ছাড়া অন্য দেশগুলোতে কূটনৈতিকভাবে উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে অসৎ উপায়ে যারা দেশের বাইরে লোক পাঠাচ্ছেন কিংবা যারা যাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির।
বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের ভিজিট ভিসা ইস্যু সঙ্কুচিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী রাতে ইনকিলাবকে বলেন, অনেকেই ভিজিট ভিসায় বিদেশে গিয়ে চাকরির সন্ধান করায় ভিজিট ভিসায় কড়াকড়ি শুরু হচ্ছে। তিনি বলেন, বন্ধ শ্রমবাজারগুলো খুলে দেয়ার জন্য সর্বস্তর থেকে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে হবে। যেহেতু স্বাভাবিকভাবে অধিকাংশ দেশের চাকরি ভিসা বন্ধ। সেক্ষেত্রে অনেকেই নানাভাবে ভিজিট ভিসায় বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। তিনি বলেন, বৈধভাবে বিদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে ভিজিট ভিসায় বিদেশে যাওয়ার সংখ্যাও হ্রাস পাবে। তাহলেই বাংলাদেশের ইমেজ ফিরে আসবে এবং যোগ্য ভিজিট ভিসার প্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন না।