অনিয়ম, দুর্নীতির বেশ কিছু অভিযোগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের প্রাথমিক অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, মানিলন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
এসব অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন প্রকল্পের রেকর্ডপত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন দুদক কর্তৃক গঠিত দুই সদস্যের অনুসন্ধান টিম। ইতোমধ্যে বন্দর থেকে এসব ফাইল দুদকে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া মনিরুজ্জামানের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরেও তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ছাড়াও নির্বাচন কমিশন, এনবিআরসহ একাধিক সংস্থার কাছে চাওয়া হয়েছে তথ্য। তবে অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা মিলছে কিনা সে ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ দুদকের কর্মকর্তারা। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধান করে। এরপর মধ্য জুলাইয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানে একটি টিম গঠন করা হয়। এই অনুসন্ধান টিমের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দুদকের সহকারী পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-৫) মো. নওশাদ আলী এবং উপ-সহকারী পরিচালক মো. ইমরান আকনকে। দায়িত্ব পেয়েই অনুসন্ধানকারী দলের প্রধান সহকারী পরিচালক নওশাদ আলী বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র চেয়েছেন। যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনুমোদনপত্র, আর্থিক বরাদ্দপত্র টেন্ডার ডকুমেন্ট, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, দাখিল করা দরপত্র, দরপত্র উন্মুক্ত ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, তুলনামূলক বিবরণী, কার্যাদেশ, চুক্তি, বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন, বিল পরিশোধ সংক্রান্ত বিল-ভাউচারসহ সংশ্লিষ্ট সব রেকর্ডপত্র।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) দফতরের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে প্রায় এক হাজার ৩১৪ কোটি টাকার ৭২টি বড় ধরনের অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৪টি অনিয়ম রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব অনিয়ম হয়েছে দরপত্র কারসাজি ও চুক্তি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার মাধ্যমে। মূলত এ কারণেই দুদক বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করেছে।
দুদক অনুসন্ধান দলের প্রধান সহকারী পরিচালক মো. নওশাদ আলী গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে বলেন, আমরা অভিযোগ অনুসন্ধান করছি। আমাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সরবরাহ করেছে। আমরা এই ক্ষেত্রে বন্দরের সহযোগিতা পাচ্ছি। এই পর্যন্ত করা অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিষয়টি এখনো অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। অনুসন্ধান শেষে দুদকের আইন অনুযায়ী পরবর্তি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, অনুসন্ধানের জন্য দুদক যখন যে রেকর্ডপত্র চাইছে আমরা তা সরবরাহ করছি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এসএম মনিরুজ্জামান গত বছরের ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। তার আগের চেয়াম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল আহমদকে গত বছরের ২০ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরে অনিয়ম, দুর্নীতি ছাড়াও র্যাবে থাকাকালে গুম, খুনের অভিযোগ রয়েছে।