নদীমাতৃক বাংলাদেশের শত বছরের ঐতিহ্য ও শতবর্ষী জাহাজের ইতিহাস আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার পিএস মাহসুদকে অভ্যন্তরীণ নৌরুটে পর্যটন সার্ভিসে যুক্ত করেছে সরকার। আগামী ২১ নভেম্বর শুক্রবার থেকে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে এটি পর্যটন সার্ভিস হিসেবে নিয়মিত চলাচল শুরু করবে। শনিবার সকালে আবারো চালু হতে যাওয়া শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার পি এস মাহসুদুএর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকীসহ সরকারের একাধিক সিনিয়র সচিব, সচিব ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ।
স্টিমারটি প্রতি শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশাল এবং শনিবার বরিশাল থেকে ঢাকা রুটে চলবে। যাত্রীরা উপভোগ করতে পারবেন নদীর সৌন্দর্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অনন্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে এতে সংযোজন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা সরঞ্জাম, লাইফবোট, ফায়ার সেফটি ও জিপিএস ব্যবস্থা। ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয়েছে কম ধোঁয়ানির্গমনকারী প্রযুক্তি, যা নদীপথে দূষণ হ্রাসে সহায়ক হবে। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে এক দিন ঢাকা থেকে বরিশাল যাবে স্টিমারটি। প্রতি শুক্রবার সকাল ৮টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে ছাড়বে, বরিশাল পৌঁছবে রাতে। আগে স্টিমার চলাচল করত রাতে; তবে এবার দিনে স্টিমার চালু করায় নদী ও তীরের দৃশ্য উপভোগে মানুষ আরও আগ্রহী হবে বলে আশা করছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা।
উদ্বোধনকালে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, প্যাডেল স্টিমার পিএস মাহসুদ হবে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও নদীভিত্তিক পর্যটনের এক অনন্য মেলবন্ধন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) অধীনে থাকা শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার পিএস মাহসুদ প্রয়োজনীয় মেরামত করে প্রমোদতরী হিসেবে পুনরায় চালুর সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। নৌপরিবহন উপদেষ্টা আরও বলেন, পিএস মাহসুদ কেবল একটি নৌযান নয়, এটি বাংলাদেশের নদী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম কাছ থেকে দেখুক, কীভাবে একসময় নদীপথই ছিল যোগাযোগ ও সংস্কৃতির প্রাণ। উপদেষ্টা জানান, পিএস মাহসুদ-এর পাশাপাশি পিএস অস্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্নসহ আরও কয়েকটি পুরোনো স্টিমার সংস্কারের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। লক্ষ্য- নদীপথের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও নদীভিত্তিক পর্যটনের সম্ভাবনাকে বিস্তৃত করা।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী এনডিসি বলেন, প্যাডেল স্টিমারটি চালু হলে তা দেশ-বিদেশের বহু পর্যটককে আকর্ষণ করবে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য এতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার, বাংলা গানের পরিবেশনাসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) জানায়, স্টিমারটির সংস্কার ও আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় মূল কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রেখে ইঞ্জিন, নিরাপত্তা এবং ফায়ার সেফটি সিস্টেম সম্পূর্ণ নবায়ন করা হয়েছে। এতে রয়েছে আধুনিক কেবিন, পর্যটক-বান্ধব ডেক এবং ডিজিটাল নেভিগেশন ব্যবস্থা।
শতবর্ষী এ স্টিমারটি দোতলাবিশিষ্ট। একসঙ্গে খুব বেশি যাত্রী স্টিমারে ভ্রমণ করতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিবার ১৫০ থেকে ২০০ যাত্রী স্টিমারে ভ্রমণ করতে পারবেন। স্টিমারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। প্রথম ক্যাটাগরিতে রয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির কেবিন। এসব কেবিনে দু’টি বেড রয়েছে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতেও কেবিন সুবিধা রয়েছে। তবে সেটি দ্বিতীয় শ্রেণির। এটি অবশ্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নয়। এখানেও দু’টি করে শয্যা রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২২টি কেবিন রয়েছে স্টিমারে। প্রতিটি কেবিনে দু’জন করে যাত্রী থাকলে মোট ৪৪ জন যাত্রী কেবিনে ভ্রমণ করতে পারবেন। এ ছাড়া স্টিমারের দোতলার মাঝখানের জায়গা তৃতীয় ক্যাটাগরির জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। এখানে যাত্রীদের বসার জন্য চেয়ার থাকবে। এখানে ৫০ জনের মতো যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন।