Image description
আসন বণ্টন

সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য আসন সমঝোতার প্রশ্নে আপাতত বিএনপি’র দিকেই তাকিয়ে আছেন সমমনা দল ও জোটের নেতারা। তারা বিএনপি’র সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও যোগাযোগের মধ্যে রয়েছেন। এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। ধীরগতিতে এই প্রক্রিয়া চলার কারণে নেতাদের কেউ কেউ হতাশাও প্রকাশ করেছেন। প্রাথমিকভাবে বিএনপি ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে একটি আসনে মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে। প্রার্থী ঘোষণা না করা ৬৩ আসনে সমমনা দল ও জোটের নেতাদের কিছু আসন ছেড়ে দেবে বিএনপি। শরিক দলের নেতারা বলছেন, যেসব সম্ভাব্য আসনে তারা লড়তে চান সেখানেও বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীরা কাজ করছেন। এ কারণে তারা দ্বিধায় পড়েছেন। 

আসন সমঝোতা নিয়ে সমমনা দল ও জোটের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে মানবজমিনের। তারা জানিয়েছেন, আসন সমঝোতা নিয়ে গত শুক্রবার বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তখন আমীর খসরু জানিয়েছেন, তারা বাকি আসনগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করছেন। বিএনপি সমমনাদের আসনগুলো নিয়ে বেশি সময় নিচ্ছেন বলে মনে করছেন দল ও জোটের নেতারা। তাদের ভাষ্য, বিএনপি এখন আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছে না। তাদের আসনগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকজন দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় বিক্ষুব্ধ তারা।

তবে সমমনাদের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে বলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি। বিএনপি মনোনয়ন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা করছে। এনিয়ে সমমনাদের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। আগামী ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়টি মীমাংসা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। 

বিএনপি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ফাঁকাসহ ঘোষিত আসনগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঘোষিত কয়েকটি আসনেও পরিবর্তন আসতে পারে। এর ভেতরে বিএনপি’র দলীয় অনেকে মনোনয়ন পাবেন। বাকি আসনগুলো সমমনা দল ও জোটের নেতাদের জন্য। 

সমমনা দলের নেতাদের ভাষ্য, বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বসেছিলেন। ওই সময় নির্বাচনে কীভাবে অংশগ্রহণ করবে এবং আসনের বিষয়ে বিএনপি’র নেতাদের কাছে জানতে চান তারা। এবিষয়ে কোনো কিছু স্পষ্ট করা হয়নি। যদিও গণতন্ত্র মঞ্চ তাদের ৪৮ জনের সম্ভাব্য একটি তালিকা দিয়েছিল। সর্বশেষ তারা মঞ্চের ৬ দলের ছয় শীর্ষ নেতার আসনের বিষয়ে জানতে চাইলে তাও পরিষ্কার করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। 
অন্যদিকে ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এ আসনে নির্বাচন করতে চান। এখানে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন দেয়নি। আসিফ এখানে বিএনপি’র সমর্থন পেতে পারে বলে আলোচনায় আছে। 
ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি আলোচনা করতে চায় না। তারা এখন পর্যালোচনা করছে। আমরা এ বিষয়ে বিক্ষুব্ধ। 

এর মধ্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ), গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম (কিশোরগঞ্জ-৫), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি’র সহ-সভাপতি তানিয়া রব (লক্ষ্মীপুর-৪) আসনে নির্বাচন করতে চেয়েছেন। ওই আসনে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক (ঢাকা-৮) এবং ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু (জামালপুর-৫) আসনে নির্বাচন করতে চান। এই দু’টি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা নির্বাচন করতে চান। 

এ ছাড়া সমমনা দল ও জোটদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার পিরোজপুর-১, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক চট্টগ্রাম-১৪ এবং মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ কুমিল্লা-৭, বিজেপি’র চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা-১৭, বাংলাদেশ এলডিপি’র চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম লক্ষ্মীপুর-১, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর পটুয়াখালী-৩, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান ঠাকুরগাঁও-২, এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের জন্য ঢাকা-১৩, এনপিপি’র চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি’র সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। ওদিকে ঢাকায় ১৫টি আসনের মধ্যে ৯টিতে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ৬টি আসন ফাঁকা রেখেছে। এ ছাড়াও নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা জোটের ইসলামী দলগুলোর ১২ নেতা প্রার্থী হতে পারেন। এর মধ্যে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রিন সিগন্যালও দেয়া হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সঙ্গেও বিএনপি’র আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার গুঞ্জন রয়েছে। তবে এ নিয়ে দুই দলের পক্ষ থেকে আসন নিয়ে আলোচনার বিষয় স্বীকার করা হয়নি। 

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে বসার কথা রয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। আশা করি, খুব শিগগিরই আলোচনা হবে।

১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ এলডিপি’র চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, বিএনপি সমমনাদের আসনগুলো ঝুলিয়ে রেখেছে। আমাদের প্রতিপক্ষরা প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু আমরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। এতে আমরা নির্বাচনে পিছিয়ে পড়বো। এনিয়ে আমরা যথেষ্ট বিব্রত। এখন আর সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত এটার সমাধান করা উচিত।