ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইরান। দেশটি দশকের অন্যতম ভয়াবহ খরার মধ্যে রয়েছে। পরিস্থিতি উত্তরে মসজিদে বৃষ্টির জন্য দোয়া করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রদিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার রাজধানী তেহরানের উত্তরে অবস্থিত ইমামজাদে সালেহ মসজিদে শত শত মানুষ বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য জড়ো হন।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর তেহরানে বৃষ্টিপাত শত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। দেশের অর্ধেক প্রদেশে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে এক ফোঁটা বৃষ্টিও হয়নি। তীব্র পানি সংকট মোকাবিলায় সরকার রাজধানী তেহরানের এক কোটি বাসিন্দার জন্য পর্যায়ক্রমে পানির সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পানির খরচ কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবারের নামাজে নারী-পুরুষ পৃথক স্থানে ইসলামি রীতিনীতির অনুসারে দোয়া করেন। নারীরা হিজাব পরে আলাদা এলাকায় অবস্থান করেন, আর পুরুষরা মূল নামাজস্থলে বৃষ্টি প্রার্থনার দোয়া করেন।
এর আগে চলতি সপ্তাহে রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ জানায়, তেহরানের প্রধান খাবার পানির উৎস দুই সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যেতে পারে। শহরটির পানি সরবরাহকারী সংস্থার পরিচালক বেহজাদ পারসা বলেছেন, শহরের প্রধান জলাধার আমির কাবির বাঁধে বর্তমানে মাত্র এক কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার পানি রয়েছে। বর্তমানে এটি মাত্র আর ১৪ দিন তেহরানকে পানি সরবরাহ করতে পারবে। তেহরান প্রদেশ দীর্ঘমেয়াদি খরার কবলে পড়েছে, যা অঞ্চলটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর পানি সংকটের মুখে ফেলেছে। সংবাদমাধ্যমের মতে, আগামী কয়েক মাসে যদি বৃষ্টিপাত না হয়, তাহলে তেহরানে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও টেকসই পানীয় জলের সরবরাহ গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
টানা পাঁচ বছর শুষ্কতা এবং রেকর্ড তাপের পর, তেহরান পৌরসভার কলগুলো শুকিয়ে যাওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জলাধারের পানির স্তর ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে এবং মানুষের মেজাজ ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, যদি উল্লেখযোগ্যভাবে পানি ব্যবহারে কাটছাঁট না করা হয়, তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রাজধানীর কিছু অংশ ‘ডে জিরো’র মুখোমুখি হতে পারে। অর্থাৎ, বাড়ির পানির কল পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং পানি সরবরাহ করা হবে স্ট্যান্ডপাইপ বা ট্যাংকারের মাধ্যমে।
বছরের শুরুতেই তারা এই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু একটি পানি সংকট নয়, বরং পানির দেউলিয়াত্ব, এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে পানি এতটাই অতিরিক্তভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যে ক্ষয়ক্ষতি আর পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।
রাজধানী তেহরান ইরানের বৃহত্তম শহর এবং প্রায় এক কোটি মানুষের বাসস্থান। এটি পানির জন্য পাঁচটি প্রধান বাঁধের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত জুলাইয়ে এর ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়, তেহরানের অন্যতম সরবরাহকারী আমির কবির বাঁধের জলাধারের কেন্দ্র থেকে উঁচু পাথরের ঢাল উঠে এসেছে এক ফোঁটা পানি নেই সেখানে। পানির তীব্র সংকটে থাকা খুজেস্তান ও সিস্তান-বেলুচিস্তানসহ একাধিক প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে গণবিক্ষোভ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট সমাধানের জন্য পানি, জ্বালানি ও ভূমি নীতিতে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। ইরান আগামী সাত বছরে পুনর্ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রিত সেচের মাধ্যমে বার্ষিক পানি ব্যবহার ৪৫ বিলিয়ন ঘনমিটার কমানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নিয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং বিনিয়োগের ঘাটতি এই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যপূরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।