দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি কেন্দ্র করে ঢাকায় ঝটিকা মিছিল, অগ্নিসংযোগ, হামলাসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে পুলিশ ও গোয়েন্দারা সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আরও বড় পরিসরে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছেন, বড় নাশকতা ঘটানোর সক্ষমতা আওয়ামী লীগের না থাকলেও সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর ঢাকামুখী যাত্রা আটকে দিতে সব থানাকে নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। যে কারণে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাড়া করা যানবাহনের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে রেল ও নৌপথেও। ঢাকায় প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চেকপোস্ট জোরদার করা হয়েছে। আবাসিক হোটেল, মেস ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বাসাবাড়িতেও বিশেষ তল্লাশি শুরু করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা সাইবার প্যাট্রলিং করে প্রপাগান্ডা ও আতঙ্ক ছড়ানো পোস্টের বিরুদ্ধে নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে সাইবার ইউনিটগুলোকে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। নাশকতায় অর্থায়নকারীদের চিহ্নিত করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সমাজমাধ্যমে পোস্ট দেখেই আতঙ্কিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।
একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণা কেন্দ্র করে ১৩ নভেম্বর ঘিরে নাশকতার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আজ থেকে নেতা-কর্মীদের ধাপে ধাপে ঢাকায় প্রবেশের নির্দশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতি উপজেলা থেকে কমপক্ষে ৫০ জন কর্মীকে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। জেলা থেকে কমপক্ষে ১০০ এবং মহানগরগুলো থেকে যত সম্ভব তত নেতা-কর্মীকে ঢাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খন্দকার রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সমাজমাধ্যমে যেভাবে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, এতে পুলিশ বিচলিত নয়। কারণ ক্ষমতাচ্যুত সরকারের অনুসারীদের বড় কিছু করার সক্ষমতা আছে বলে আমাদের মনে হয় না। এর পরও যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি পুলিশের রয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট নামে নয়, নাশকতা রুখতে বড় পরিসরে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে।’ তিনি আরও বলে, ‘সবাইকে আহ্বান জানাব বিদেশে পলাতক কারও ফেসবুক পোস্টে আতঙ্কিত হওয়া ঠিক হবে না। ইতোমধ্যে সাইবার ইউনিটগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ফেসবুক পোস্টগুলো নজরদারি করে ব্যবস্থা নিতে।’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। সর্বাত্মক সাঁড়াশি অভিযান বলতে যা বোঝায় তা চলমান রয়েছে। রাজধানীজুড়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৮৫ : পুলিশের অভিযানে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কাজী এমদাদুল হকসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইসমাইল মিয়া ও পল্লবী থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড ডি-ব্লক ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মো. আবদুস সালাম খোকন ওরফে নায়রা খোকন।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, নায়রা খোকন পল্লবীর সাবেক এমপি ইলিয়াস মোল্লাহর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ঝটিকা মিছিলের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঝটিকা মিছিল করার ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৪৫ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেট থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।