Image description

চট্টগ্রামের অপরাধ জগৎ অস্থির করে তুলেছে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ। কেউ কারাগারে বসে, আবার কেউ বিদেশের মাটিতে বসে কলকাঠি নাড়ছেন চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডের। এসব মাফিয়াদের হাতের ইশারায় ১৪ মাসে প্রায় ২০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তাদের হাতে চট্টগ্রামের প্রশাসন কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছে।

সিএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার আমিনুর রশিদ বলেন, অপরাধ জগতে যেসব চক্র সক্রিয় হয়েছে তাদের গ্রেপ্তারের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার অভিযানও শুরু করেছে সিএমপির বিভিন্ন ইউনিট।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল বলেন, জেলায় কয়েক মাসে হওয়া ১৬টি খুনের মামলার ৪৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। অস্ত্র উদ্ধারে চালানো হচ্ছে অভিযান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এক বছর ধরে পরিবর্তন হতে থাকে চট্টগ্রাম আন্ডারওয়ার্ল্ডের গতিপথ। অপরাধ জগতে পুরোদমে সক্রিয়া হয় নতুন-পুরোনো মিলে অর্ধশতাধিক চক্র। সন্ত্রাসী চক্রগুলো নগরী এবং জেলার বিভিন্ন এলাকার চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ, বালুমহলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, ইট-বালু-সিমেন্ট সরবরাহ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ভূমি দখল-বেদখল, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ডিশ-ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাতের চাঁদাবাজি, গাড়ি স্টেশনে চাঁদাবাজি, পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ, জায়গা দখল-বেদখলসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এসব অপরাধ আখড়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে সংঘাতে। শুরু হয়েছে ‘গ্যাংওয়ার’।

মামলা

গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার বদলের পর অপরাধ জগতে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব হয় সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বুড়ির নাতির। পরে বুড়ির নাতি সাজ্জাদ পরিচিতি পায় ছোট সাজ্জাদ হিসেবে। চলতি বছরের ১৫ মার্চ সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছে তার অপরাধ সাম্রাজ্য। নগরীর বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও এবং হাটহাজারী এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলবাণিজ্য, জুট ব্যবসা, বালুমহলসহ নানান অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে ছোট সাজ্জাদ বাহিনী। তার বিরুদ্ধে দুটি ডাবল মার্ডারসহ কমপক্ষে ১০টি হত্যা মামলা হয়েছে গত এক বছরে। কারাগারে থেকেও কয়েকটি হত্যার ইন্দনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সবমিলিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ২০টির কাছাকাছি।

একই সময়ে অপরাধ জগতে ভয়ংকর রূপে আবির্ভাব হয়েছেন রাউজান উপজেলার রায়হান আলম। একটি ডাবল মার্ডারসহ চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলার বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৭টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে গত এক বছরে। এরমধ্যে জেলার রাউজান থানায় ১০টি, নগরীর বাকলিয়া থানায় ডাবল মার্ডারসহ দুটি, বায়েজিদ থানায় দুটি, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, পতেঙ্গা থানায় একটি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

সর্বশেষ গত বুধবার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলাকে গুলি করে হত্যার মিশনে অংশগ্রহণ করে এই রায়হান। রাউজান ছাড়াও জেলার হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, বায়েজিদ এবং চান্দগাঁও এলাকার কিছু অংশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করেন রায়হান। ছোট সাজ্জাদ ও রায়হানকে অপরাধ জগতের বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে যাচ্ছে সাজ্জাদ আলী ওরফে শিবির সাজ্জাদ ওরফে বড় সাজ্জাদ।

১৯৯৯ সালের ২ জুন পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লিয়াকত আলী খানকে প্রকাশ্যে খুনের মাধ্যমে ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হন বড় সাজ্জাদ। ২০০৪ সালে দুবাই পালিয়ে যান। পরে চলে আসেন ভারতে। গত বছরের আগস্টের পর অপরাধ জগতে পুরোনো রূপে ফিরে আসেন সাজ্জাদ। ভারতে বসে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশসহ বিভিন্ন এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ১৪ মাসে তার ইন্দনে চট্টগ্রামে কমপক্ষে ২০টি খুনের ঘটনা ঘটে। বাকলিয়ার ডাবল মার্ডার, সরোয়ার বাবলাসহ ৯টি হত্যাকাণ্ড মিলে ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে মোবারক হোসেন ইমনের বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, বালুমহলের নিয়ন্ত্রণ, জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ইমনের বিরুদ্ধে। নগরীর চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ আখড়ার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে ইসমাইল হোসেন টেম্পুর বিরুদ্ধে। গত এক বছরে তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ হয়েছে ১৫টির মতো মামলা। তিনি বর্তমানে কারাগারে থাকলেও কমেনি তার বাহিনীর দাপট। এদের পাশাপাশি অপরাধ জগৎ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহীদুল ইসলাম বুইস্যা নামের আরেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ মামলা রয়েছে ২০টি।