পাঁচটি দেশীয় এয়ারলাইন্সের কাছ অ্যারোনেটিকেল ও নন-অ্যারোনেটিকেল চার্জ মিলে মোট সাত হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)। এর মধ্যে শুধু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে এই পাওনার পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বকেয়া হিসেব করে সম্প্রতি বেবিচকের উপ-পরিচালক (অর্থ) মো. আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্ব স্ব এয়ারলাইন্সকে পাঠানো হয়েছে।
বিমানবন্দরের অ্যারোনোটিক্যাল চার্জগুলোর মধ্যে রয়েছে বিমানের ল্যান্ডিং চার্জ, রুট নেভিগেশন সার্ভিস চার্জ, বোর্ডিং ব্রিজ ব্যবহারের চার্জ, এমবারকেশন ইত্যাদি। আর নন-অ্যারোনটিকাল চার্জগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং, চেক-ইন কাউন্টার ভাড়া, কার পার্কিং, এভিয়েশন ক্যাটারিং সার্ভিস ইত্যাদি।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় এয়ারলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং এয়ার অ্যাস্ট্রার কোনো বকেয়া নেই। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এককভাবে সর্বাধিক বকেয়ার তালিকায় রয়েছে। সংস্থাটির কাছ থেকে বেবিচকের মোট পাওনা টাকার অঙ্ক ৬ হাজার ৬৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল বিলের পরিমাণ ৭৪৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর সঙ্গে ৫২৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ভ্যাট, ৫১ লাখ টাকার আয়কর এবং দীর্ঘদিন থেকে মূল বিল টাকা বকেয়া রাখার ফলে ৪৭৯৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার সারচার্জ যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে অপারেশনে থাকা নভোএয়ারের কাছে বেবিচকের পাওনা ২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল বিল ১৮ কোটি ৮০ হাজার টাকা, ভ্যাট ৩ কোটি ৬০ লাখ।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অপারেশন বন্ধ করার সময় বেবিচকের কাছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের দেনা ৩৯১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। তবে ২০২৩ সালের ইউনাইটেডের দেনা ছিল ৩৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে তারা সারচার্জের ৩০০ কোটি মাফ চেয়ে মূল দেনা ৫৫ কোটি টাকা পরিশোধের প্রস্তাব দেয় সরকারকে। অর্থ মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করা জিএমজি এয়ারলাইন্স ২০১২ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালের মধ্যে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েও আর ফিরতে পারেনি। ফ্লাইট বন্ধের সময় জিএমজির কাছে বেবিচকের পাওনা ছিল প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বর্তমানে এই অঙ্ক ৪১১ কোটি ৮১ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় সব ধরনের ফ্লাইট স্থগিত করার সময় রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ছিল ২৮৩ কোটি টাকা। বর্তমানে এই পাওনার পরিমাণ ৪৫৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। একাধিক চিঠিতে বেবিচকের পক্ষ থেকে এয়ারলাইন্সগুলোকে পাওনা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।