রাজধানীর সড়ক-অলিগলি সব খানেই এখন ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার। দেয়ালে পোস্টার লাগানো নিষেধ করা হলেও কেউই মানছেন না সেই নির্দেশনা। মেট্রোরেলের পিলার, ফ্লাইওভারের পিলার, ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন, ফুটওভারব্রিজ, ট্রাফিক পুলিশ বক্স, যাত্রীছাউনি, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে সাঁটানো হয়েছে বিভিন্ন সাইজের ব্যানার- ফেস্টুন, দেয়ালে লাগানো হয়েছে পোস্টার। বেশকিছুদিন আগে চাকরির বিজ্ঞপ্তি, বাসাভাড়া, কোচিং সেন্টারের পোস্টার দেখা গেলেও এখন দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক ব্যানার ও ফেস্টুনের আধিক্য। সামনের নির্বাচনকে লক্ষ্য করে দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে ছোট ছোট দলগুলোও নেমেছেন ব্যানার-ফেস্টুন টানানোর প্রতিযোগিতায়। একটি রাজধানী শহরের সৌন্দর্যের বিষয়টি কারোরই মাথায় নেই। ভবন, পিলার রাস্তা-ঘাটে এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার টানানোর বিষয়ে নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নেই কোনো উদ্যোগ। ডিএসসিসির পক্ষ থেকে এসব রাজনৈতিক ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণের কোনো কাজ করছে না তারা। ঢাকা নগরীর সৌন্দর্য রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা বিধানে আইন থাকলেও এর প্রয়োগ না হওয়ায় শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা।
রাজনৈতিক মূলদলের বাইরেও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি, মহানগর, থানা, ওয়ার্ড এমনকি ইউনিট কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা নেতাকর্মীরা যে যার মতো ব্যানার, পোস্টার সাঁটিয়েছেন। কোনো ওয়ার্ড কিংবা এলাকা বাদ নেই, যেখানে ব্যানার-ফেস্টুন নেই। বিদ্যুতের খুঁটি থেকে শুরু করে সড়ক বিভাজক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি স্থাপনা, বাসাবাড়ি থেকে মসজিদ কিছুই বাদ যায়নি। বাদ নেই গণপরিবহন, সিগন্যাল বাতিও। মেট্রোরেলের পিলারেও ঝুলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানার-ফেস্টুন। রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রচার বাড়াতে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণ যত্রতত্র সাঁটাচ্ছেন। বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও এই কাজে এগিয়ে। দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর ধারা ৩ ও ৪ অনুযায়ী এসব কার্যক্রম অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। একই আইনের ধারা ৬-এ অর্থদ- ও কারাদ-ের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আইনের প্রয়োগ নেই।
সরেজমিন দেখা যায়, মতিঝিল, পল্টন, মগবাজার, মৌচাক, গুলিস্তানসহ ডিএসসিসি এলাকার সব জায়গায়ই এখন ব্যানার-ফেস্টুনের দখলে। সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালসহ ঢাকার বিভিন্ন পরিবহন ডিপো এলাকাগুলোতে টানানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা এখন আর দেখা যায় না। ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। বৃত্তাকার ফোয়ারার চারদিকে ঝুলছে অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীর শুভেচ্ছা ব্যানার, প্রচারণামূলক ফেস্টুন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনুমতি ছাড়া ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার লাগানো হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিগগিরই বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হবে।
শাহজাহনপুরের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, যে যার মতো ব্যানার-পোস্টার লাগাচ্ছে। নিজের প্রচারণা নিজেই করছে। আসলে কেউই দেশের কথা ভাবে না। নিজের চিন্তায় ব্যস্ত। বড় দলের সিনিয়র নেতারা পুরো ঢাকাজুড়ে ব্যানার লাগালে ছোট নেতারাতো আর বসে থাকবে না। তারাও বড়দের দেখা দেখি ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার সাঁটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
নগরবিদরা বলছেন, ঢাকা একটি পুরোনো শহর। এই শহরের সৌন্দর্য রক্ষা এবং একটি স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে হলে এসব বন্ধ করতে হবে। নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও পোস্টার, ব্যানার লাগালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোথাও ঝুলছে ফেস্টুনের কাঠ। মূল সড়ক খুঁড়ে বসানো হয় বাঁশের তোরণ। এরই মাঝে ঝুঁঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এসব দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের, তারাও এই কাজে পিছিয়ে নেই। অলিগলি ছাড়াও মূল সড়কে, গুরুত্বপূর্ণ ও সরকারি স্থাপনায় টাঙানো রয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। ভালো কাজ করলে ব্যানার বা ফেস্টুন সাঁটানোর প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্বের কোনো দেশেই এমনটি নেই।
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে দৃশ্যদূষণ শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। নিয়ম না মেনে যত্রতত্র পোস্টার লাগাচ্ছে। সিটি করপোরেশনের উচিত একটি কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার। আইন অমান্য করলে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা দরকার।