Image description
► রাশিয়াগামীদের নিয়ে অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য ► চার মাসে গেছেন ৯৮১ জন

চলতি বছরের জুনে দেশ থেকে রাশিয়ায় কাজের উদ্দেশে গিয়েছিল ২১ জন; জুলাইয়ে তা প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে ১০৮ জনে উন্নীত হয়। পরের মাস আগস্টে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১৩৪ জনে; আর সেপ্টেম্বর মাসে সেটি আরও প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে ৭১৮ জনে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় প্রতি মাসে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির এ চিত্রটি ইতিবাচক হলেও এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা কাজের নামে রাশিয়ায় যাওয়া এই শ্রমিকরা প্রকৃত অর্থে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। টাকার লোভে অনেকেই পরিণতি না ভেবে মৃত্যুকূপে ঝাঁপ দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আসা তরুণদের লোভনীয় বেতন, নাগরিকত্ব এবং ইউরোপে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রাশিয়ান সামরিক বাহিনীতে যোগদানে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। পরে তারা যুদ্ধের চুক্তিতে জড়িয়ে পড়ছেন। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটি যুদ্ধরত দেশে শ্রম রপ্তানি বাড়ার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রাশিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে বৈধ পথে যে শ্রমিক যাচ্ছে, অবৈধ পথে যাচ্ছে তার কয়েক গুণ। তবে বৈধ পথে যে শ্রম রপ্তানি হচ্ছে, তাদের বিষয়ে সরকারের দায় রয়েছে। যে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করছে, তারা প্রকৃত অর্থে সেই কাজে যুক্ত হচ্ছে, নাকি যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে- তা সরকারের খতিয়ে দেখা জরুরি।

জনশক্তি রপ্তানি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাসে ৯৮১ জন শ্রমিক গেছে রাশিয়ায়। এরা সবাই বৈধ পথে রাশিয়ায় গেছে। এর বাইরে অবৈধভাবে অর্থাৎ পর্যটন ভিসায় বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব হয়েও অনেকে টাকার লোভে রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বাংলাদেশি একজন তরুণের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে তরুণটিকে বলতে শোনা যায়, যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার চুক্তি বাবদ তাকে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। উচ্চ বেতনে স্বেচ্ছায় রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করতে সম্মত হয়েছে বলেও তরুণটি জানায়। তবে বাংলাদেশ থেকে অনেক তরুণকে কোম্পানিতে কাজের কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে পাচার করে দেওয়ার অভিযোগও উঠছে বিস্তর। প্রতারিত এ যুবকদের যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অল্প প্রশিক্ষিত ও অদক্ষ এদের কেউ কেউ যুদ্ধে গিয়ে মারা পড়ছে। কেউ কেউ আহত হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে পড়ছে। রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত এক প্রতারিত শ্রমিকের স্ত্রী ঝুমা আক্তার গণমাধ্যমকে জানান, তার স্বামীকে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাঠানোর জন্য একটি চক্রকে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল; প্রতারণা করে ওই চক্রটি তাকে রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে দেয়। যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর বিষয়টি তিনি বা তার স্বামী কেউ জানত না। তার প্রশ্ন- টাকা দিয়ে কেউ কি মৃত্যু কিনতে পাঠায়?

শুধু অবৈধ নয়, কাজের জন্য বৈধভাবে রাশিয়ায় গিয়ে অনেকে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে এমন অন্তত ১০টি পরিবারের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ওই পরিবারগুলো এখন তাদের স্বজনদের ফেরত পেতে চাইছে। এর মধ্যে বাগেরহাটের অয়নমণ্ডল, কুমিল্লার অমিত বড়ুয়াসহ কয়েক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কাজে গিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া এসব ব্যক্তি বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, সেই তথ্য নেই কারও কাছে।

শরিফুল হাসান বলেন, কত বাংলাদেশি রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে আছে, কতজন মারা গেছে, তার কোনো সঠিক হিসাব জানা সম্ভব হয়নি। এ তথ্য বের করার বিষয়ে সরকারের দিক থেকেও তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুন মেনে একজন শ্রমিক কাজের উদ্দেশ্যে গিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে, রাষ্ট্র তার খোঁজ নেবে না, এটিই সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বৈধপথে কাজের উদ্দেশ্যে যখন কেউ একটি দেশে যায়, তখন কর্মীদের দেখে রাখার দায়িত্ব ওই দেশের স্পন্সরশিপ কোম্পানির। তার পরও ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী মিশনের মাধ্যমে নিজ দেশের কর্মীর খোঁজ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছে তথ্য চাওয়ার অধিকার রয়েছে। এখন যেহেতু অভিযোগ উঠছে, সে অনুযায়ী মিশনগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।