কোটি কোটি ডলার ক্ষতির অভিযোগ তুলে সালিশি আবেদন করেছেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম)।
সোমবার (২৯ অক্টোবর) এস আলম এবং তার পরিবারের আইনজীবীরা ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্রে সালিশের আবেদন দাখিল করেন।
এ মামলাকে শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া ‘কোটি কোটি ডলার’ অর্থ উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টায় একটি সম্ভাব্য ধাক্কা হিসেবে উল্লেখ করেছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বলে উল্লেখ করেছে।
পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারে সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর। দেশের ব্যাংকিং সেক্টর থেকে এস আলম পরিবার প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, টাকাগুলো কোথায়? যদিও এস আলম বলেছেন, আহসান মনসুরের এ অভিযোগের 'কোনো সত্যতা নেই'।
এর আগে গত ডিসেম্বরে এস আলমের আইনজীবীরা সম্পদ ও বিনিয়োগ নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৬ মাসের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এ সময়ের মধ্যে বিরোধ নিষ্পন্ন না হলে আন্তর্জাতিক সালিশিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, মার্কিন আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল অ্যান্ড সুলিভানের আইনজীবীরা সালিশি আবেদন করেছেন। এতে তারা উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ সরকার এস আলম পরিবারের ব্যাংক হিসাব এবং সম্পদ জব্দ করেছে।
তাদের তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে 'মিথ্যা' তদন্ত পরিচালনা করছে এবং পরিবারটিকে লক্ষ্য করে 'একটি উসকানিমূলক মিডিয়া প্রচারণা' চালাচ্ছে।
দাবিতে বলা হয়েছে, এর ফলে 'খুবই উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে, যার আনুমানিক পরিমাণ কয়েকশ মিলিয়ন ডলার'। তবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এস আলম পরিবার কত টাকা দাবি করছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এদিকে এ সালিশের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, এটি যখন আমাদের কাছে পৌঁছাবে, আমরা যথাযথ মাধ্যমে এর জবাব দেব। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের অফিস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সালিশ দাবিটি বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে ২০০৪ সালের দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির অধীনে করা হয়েছে। এস আলম সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং ২০১১ সাল থেকে তার পরিবার সিঙ্গাপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তারা দেশটির নাগরিকত্ব পেয়েছেন। ২০২০ সালে তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। এস আলম পরিবার এর আগে দাবি করেছিল যে, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে তাদের বিদেশি ১৯৮০ সালের বেসরকারি বিনিয়োগ আইনে প্রদত্ত অধিকার দ্বারা সুরক্ষিত থাকা উচিত।
আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান মনসুর এর আগে এস আলম, তার পরিবার ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় জোরপূর্বক ব্যাংক দখলের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি বলেন, এস আলম এবং তার সহযোগীরা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকা ছয়টি ব্যাংকে ঋণ এবং আমদানি বিলের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে অর্থ পাচার করেছেন।
তিনি আর বলেন, “তারা কত সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে সে সম্পর্কে আমরা বিপুল প্রমাণ পেয়েছি। তাই আমরা এখন তার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কাজ করছি।” যদিও সালিশি দাবিতে আলম পরিবার যুক্তি দিয়েছে যে সরকার অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে।