নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও অপতথ্য ছড়ানো নিয়ে উদ্বেগ ততই বাড়ছে। কারো আশঙ্কা, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা এই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।
এই আশঙ্কা থেকেও গুজবের নানা ডালপালা ছড়াচ্ছে। ‘বিএনপি মিডিয়া সেল’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে এই পোস্ট দেওয়া হয়েছে, ‘এই মাত্র পাওয়া : নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না, নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা, জেনে নিন তারিখ, বিস্তারিত কমেন্টে।’ কমেন্টে অবশ্য এ বিষয়ে কিছু নেই, বরং এই ভুল তথ্যের প্রতিবাদ আছে। সম্প্রতি এমন গুজবও ছড়িয়েছে যে দেশে সামরিক অভ্যুত্থান হতে যাচ্ছে।
গুজব রটনাকারীদের ভয়ংকর রকমের বাড়াবাড়ির কারণে দুই মাস আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই অনুরোধ করেছেন, ‘চারপাশে ছড়িয়ে পড়া গুজবে কান দেবেন না।’
সরকারি একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনীকে ঘিরে বেশির ভাগ অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। আবার অনেকের ধারণা, ভয়ংকর গুজবগুলো বেশি ছড়াচ্ছে পরিচিত প্রবাসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের মাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের বড় মাধ্যম হলেও যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য প্রচারের সংস্কৃতি গুজবকে মারাত্মকভাবে সামাজিক সমস্যায় পরিণত করেছে।
মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, নিজের পক্ষে জনমত তৈরির জন্য এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার বা রাখার জন্যও ভয়ংকর গুজব ছড়ানো হচ্ছে। রাষ্ট্রের জন্যও এই পরিস্থিতি কম ক্ষতিকর নয়।
সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর বহুল আলোচিত একজন প্রবাসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ‘ব্রেকিং’ হিসেবে এই তথ্য ছাড়ান যে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার থাকছে না। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমেই অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ বিষয়ে বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠক হয়েছে।
এর আগেও ওই অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলায় বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিকে কেন্দ্র করে সামরিক অভ্যুত্থান হতে যাচ্ছে, ঢাকা সেনানিবাস থেকে এপিসি মুভ করেছে বলেও প্রচার চালিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটেনি। সেনাবাহিনী আইনের প্রতি তাদের শ্রদ্ধার প্রমাণ রেখেছে। ২৫ অক্টোবরের ওই ‘ব্রেকিং’-এর ব্যাপক সমালোচনা করে আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী জুলকারনাইন সায়ের খান তাঁর ফেসবুকে সেদিনই এটি গুজব বলে জানিয়ে দেন।
এর আগেও দেশে জরুরি অবস্থা জারি হতে যাচ্ছে, সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিতে যাচ্ছে—এসব গুজব জনপরিসরে ব্যাপক উদ্বেগ বাড়ায়। ওই পরিস্থিতিতে গত ১ সেপ্টেম্বর সৌজন্য সাক্ষাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান উপদেষ্টাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাঁর পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং চারপাশে ছড়িয়ে পড়া গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানান।
গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি গুজবও ব্যাপক আলোচনায় ছিল। গুজবে বলা হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ৮ অক্টোবর মধ্যরাতে তাঁর পদ ছেড়েছেন, সেনাবাহিনী বাসভবন ‘যমুনা’ ঘেরাও করে রেখেছিল এবং বিক্ষুব্ধ সেনা সদস্যরা বিভিন্ন বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
বিভিন্ন সুপরিচিত মিডিয়া হাউসের আদলে ফটোকার্ড বানিয়ে এসব অসত্য তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। অনেকেই সেসব কার্ড ফেসবুকে পোস্ট ও শেয়ার করে। ৯ অক্টোবর যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও এ নিয়ে একটি পোস্ট করেন। তিনি তাঁর অফিশিয়াল ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লেখেন, ‘শুধু চেয়ারই না, প্রধান উপদেষ্টাসহ দেশ ছাড়লেন বাকি উপদেষ্টারাও। সোর্স : চালাই দেন।’ এটিকে গুজব বলে চিহ্নিত করে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান বাংলা ফ্যাক্টের পর্যবেক্ষণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তী সরকার ও বিভিন্ন বাহিনীকে ঘিরে বেশির ভাগ অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। গত বুধবার এআই সৃষ্ট ভিডিওগুলোর বিষয়বস্তু ও রাজনৈতিক ঝোঁক নির্ণয় করা এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিসরে এআইনির্ভর প্রোপাগান্ডার ধরন ও ঝুঁকি অনুধাবন করার উদ্দেশ্যে বাংলা ফ্যাক্ট ২০২৫ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত্ত তিন মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এআই কনটেন্ট বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানায়।
নির্বাচন কমিশন উদ্বিগ্ন : গুজব ও অপতথ্য ছাড়ানো নিয়ে নির্বাচন কমিশনও উদ্বিগ্ন। গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এআইয়ের অপব্যবহার প্রতিরোধ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার এখন বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয়। একজন ডাক্তার যেমন এটি ব্যবহার করতে পারেন, তেমনি একজন অপরাধীও ব্যবহার করতে পারে। তাই জাতীয় নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার রোধে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনাকে যুক্ত করা হচ্ছে।’ মিথ্যা তথ্য মোকাবেলায় নির্বাচন কমিশনের ফ্যাক্ট চেকিং সেল ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে জানিয়ে সিইসি আরো বলেন, ‘গভীর রাতেও অনেক কিছু ঘটতে পারে, তাই ভুল তথ্যের প্রতিকার দ্রুত নিশ্চিত করতে এই সেলকে সার্বক্ষণিকভাবে সক্রিয় থাকতে হবে।’
বাংলা ফ্যাক্টের বিশ্লেষণ : গুজব ও অপতথ্য প্রচার সম্পর্কে বাংলা ফ্যাক্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল, সরকার ও বাহিনী (পুলিশ ও সেনাবাহিনী) নিয়ে এআই সৃষ্ট অপতথ্য বেশি ছড়ানো হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়ানো হচ্ছে আওয়ামী লীগকে নিয়ে। তবে আওয়ামী লীগকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া অপতথ্যগুলো আওয়ামী লীগের পক্ষে ইতিবাচক প্রচারণা, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সরকার নিয়ে ছড়িয়ে পড়া অপতথ্যগুলোর ধরন নেতিবাচক। রাজনৈতিক দলের মধ্যে কনটেন্টের ৬৮ শতাংশ আওয়ামী লীগকেন্দ্রিক, ১৭ শতাংশ বিএনপি সম্পর্কিত, ৯ শতাংশ জামায়াত সম্পর্কিত এবং ৬ শতাংশ এনসিপিকেন্দ্রিক। আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত কনটেন্টগুলো দলটির জন্য ইতিবাচক, অন্য দলগুলোকে নিয়ে শুধু নেতিবাচক প্রচার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী বা পুলিশ, অন্তর্বর্তী সরকার ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত কনটেন্টগুলো প্রধানত নেতিবাচক। এ ছাড়া অপতথ্য প্রচারে দুর্ঘটনা ও লৈঙ্গিক অসংবেদনশীল বিষয়ও লক্ষ করা গেছে।
বাংলা ফ্যাক্টের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শনাক্তকৃত এআই সৃষ্ট অপতথ্যগুলো ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার) এবং থ্রেডস প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। একাধিক কনটেন্ট একের বেশি প্ল্যাটফর্মে পাওয়া গেছে। এটা অপতথ্যগুলোর প্রচারের বহুমাত্রিক ও সমন্বিত বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। বেশি উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে ফেসবুকে, সেখানে মোট ৬১টি কনটেন্ট (প্রায় ৮৬ শতাংশ) শনাক্ত করা হয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে টিকটক, যেখানে ৪০টি কনটেন্ট (প্রায় ৫৬ শতাংশ) পাওয়া গেছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স ও থ্রেডস প্ল্যাটফর্মে তুলনামূলক কম উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, কনটেন্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর বা প্রোপাগান্ডামূলক বার্তা প্রচারে ভিডিও ফরম্যাট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। স্যাম্পল হিসেবে সংগ্রহ করা মোট ৭১টি কনটেন্টের মধ্যে ৫৭টি ছিল ভিডিওকেন্দ্রিক এবং ১৪টি ছিল ছবিকেন্দ্রিক। নমুনাগুলোর ৪৯ শতাংশ ভিডিওতে রাজনৈতিক দল সম্পর্কিত কনটেন্ট পাওয়া গেলেও সব কটিই ছিল চারটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৬৮ শতাংশ ছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে, ১৭ শতাংশ বিএনপি, ৯ শতাংশ জামায়াত এবং ৬ শতাংশ এনসিপিকে নিয়ে। যদিও এই কনটেন্টগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিয়ে যা প্রচারিত হয়েছে, তার প্রায় সব কটিই আওয়ামী লীগের পক্ষের। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত কনটেন্টগুলো দিয়ে দলটির ভূমিকা ও ভাবমূর্তিকে ইতিবাচক করে দেখানোর প্রবণতা রয়েছে।
তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিয়ে শুধু নেতিবাচক প্রচারণাই ছিল। অর্থাৎ এআই সৃষ্ট অপতথ্যগুলো দিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে ইতিবাচক প্রচারণা করতে দেখা যায়, বিপরীতে বাকি দলগুলো নিয়ে শুধু নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ করা যায়।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে যেসব এআই সৃষ্ট অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, সেখানে বাহিনী বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ করা যায়। যেমন—গত সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এটি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের স্লোগানের ভিডিও। কিন্তু ভিডিওটি ছিল এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিও। একই রকম নেতিবাচক প্রচারণা লক্ষ করা গেছে অন্তর্বর্তী সরকার, এর প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের নিয়েও। আলোচিত নমুনাগুলোর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কিত যে ১২টি (প্রায় ১৭ শতাংশ) কনটেন্ট পাওয়া গেছে, তার সব কটিই নেতিবাচক।
সম্প্রতি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়ানোর চেষ্টা শনাক্ত করে লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এবং সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটেটিভ স্টাডিজ (সিকিউএস) দ্বারা পরিচালিত ‘ফ্যাক্টওয়াচ’।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কয়েকটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে বলা হচ্ছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে ফেরত আনা প্রবাসীদের মরদেহ পুরোপুরি পুড়ে গেছে। তদন্তে দেখা যায়, ওই অ্যাম্বুলেন্সগুলো আসলে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরোচ্ছে। ওমান থেকে আসা প্রবাসীদের লাশ ঢাকা বিমানবন্দরে আসেনি এবং আগুনেও পোড়েনি।
এ ধরনের অপতথ্য প্রচার ও গুজব ছড়ানোর ঘটনা প্রচুর। ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়ার সরোং শহরের একটি ঘটনার ভিডিও সম্প্রতি খাগড়াছড়ির ঘটনা হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বাংলা ফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানায়, ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায়, এটি ‘আনজিন কুরিমা’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়।
গুজব বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার : তথ্য-প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কাগজে ছাপা কোনো তথ্য, খবরকে মানুষ সত্য বলে মনে করত। এখন ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভিজ্যুয়ালি যা দেখে, শোনে সেটাকেই অনেকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। প্রযুক্তি সম্পর্কে অসচেতনতা থেকে এটা হয়। আবার ততটা অসচেতন না, তারাও অপতথ্য আধাসত্য হলেও নিজের মতের সঙ্গে মিলে গেলে তা শেয়ার করে। এভাবে গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কয়েক দিন আগে গুজব ছড়িয়ে পড়ল, দেশে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহের আশঙ্কা। এটা শুনে কিছু দায়িত্ববোধহীন মানুষ উল্লসিত হয়ে পড়ল যে এইতো ঘটনা ঘটছে, এটাই তো আশা করেছিলাম। অনেকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করল, রাতের মধ্যে একটা কিছু ওলটপালট হয়ে যাবে। এই যে প্রবণতা, নিজেদের বিধ্বংসী মানসিকতার সঙ্গে মিলিয়ে গুজবকে বিশ্বাস করা, এটি সাইকোলজিক্যাল সমস্যা। নিজের বা নিজের দলের পক্ষে জনমত তৈরির জন্যও অপতথ্য ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে প্রযুক্তির ভালো-মন্দ দিক সম্পর্কে অসচেতনতা। সব মিলিয়ে আমরা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছি। এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। অথেন্টিক বা নির্ভরযোগ্য সোর্স ছাড়া কোনো তথ্য আমলে নেওয়া যাবে না।
সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল ছাড়াও ইন্টারভিত্তিক কিছু গণমাধ্যমও মূলধারার সঙ্গে যুক্ত, এসব গণমাধ্যমের দক্ষতা বাড়াতে হবে। গত ১৫-১৬ বছরে এসব মূলধারার মিডিয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমে গিয়েছিল। সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেটি হলে কোনো তথ্য মূলধারার মিডিয়ায় না এলে মানুষ তা বিশ্বাস করবে না। রাম-শ্যাম, যদু-মধু বলল, ভয়ানক কিছু ঘটে গেছে, এই অপপ্রচার তখন হালে পানি পাবে না। পরিস্থিতি উত্তরণে গণমাধ্যমের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। সরকারের কাজেও স্বচ্ছতা দরকার। আমার বক্তিগত ধারণা, আমাদের মিডিয়া আগের অভ্যাসবশত অনেক খবর প্রকাশ করে না। এটি সত্যি হলে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। রিউমার স্ক্যানারসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। কয়েকটি টিভি চ্যানেলও গুজব নিয়ে প্রোগ্রাম করছে। গত সপ্তাহে কোন কোন খবর ভুয়া ছিল তা জানিয়ে দিচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রম বাড়ালে গুজব কমে আসবে। উদ্যোগটা সবাইকেই নিতে হবে।’