১৩ মাসের ব্যবধানে মেট্রোরেলের একই পয়েন্টে দুবার বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনায় সেখানে ত্রুটি রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নকশা, নির্মাণ অথবা বিয়ারিং প্যাডের রক্ষণাবেক্ষণ-এর যে কোনো একটিতে ত্রুটি রয়েছে। কারণ চিহ্নিত করে এর সমাধান করতে হবে। কোনো ধরনের দুর্বলতা রেখে মেট্রোরেল পরিচালনা করা যৌক্তিক হবে না।
রোববার বেলা ১২টার দিকে মেট্রো চলাচলের সময় ফার্মগেট পয়েন্টে ওপর থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে যায়। সেখানে একজন পথচারী ছিলেন। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা গেছেন। এর আগে গত বছরের ১৮ অক্টোবর ফার্মগেটের কাছাকাছি পয়েন্টে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। রোববারের মৃত্যুর ঘটনা রাজধানীজুড়ে মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক জানান, মেট্রোরেলের ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধন করতে হবে। পাশাপাশি ত্রুটির জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করে দায় চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ফার্মগেটের একই পয়েন্টে ১৩ মাসের ব্যবধানে দুবার বিয়ারিং প্যাড খুলে যাওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক। এটি কোনো বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য নয়। মেট্রোরেলের ফার্মগেট অংশে নকশার কোনো ত্রুটি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যেহেতু তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, ঘটনার প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। কমিটির সুপারিশের আলোকে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি জানান, নকশার ত্রুটি হলেও বিয়ারিং প্যাড যাতে না পড়ে যায়, সেজন্য বিয়ারিং প্যাডের চারপাশে নাটবোল্ট লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে। অথবা লোহার নেট দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে নাটবোল্ট লাগালে সেটা বেশি টেকসই হবে। তবে তাতে সময় বেশি লাগবে এবং মেট্রো চলাচল বন্ধ করে এসব করতে হবে। আর লোহার নেট লাগালেও প্রতিরোধ হবে। এক্ষেত্রে সে অবস্থায়ও বিয়ারিং প্যাড সরে যেতে পারে। নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তা ঠিক রাখতে হবে।
যন্ত্রকৌশল বিশেষজ্ঞ এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী বলেন, ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনাটি বড় কোনো ত্রুটি না। আর এটিকে কারিগরি ত্রুটি বলা যায় না। দেশের উন্নতির পথে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় সেভাবেই কাজ করেছে। তিনি জানান, বিয়ারিং প্যাডে স্টোপার অর্থাৎ নড়াচড়া করবে না-এমন ব্যবস্থা নিয়ে সংকটের সমাধান করা সম্ভব হবে। যদিও এসব ক্ষেত্রে স্টোপারের প্রয়োজন হয় না। তবুও বারবার পড়ে যাওয়ার কারণে এটা করা যেতে পারে। এতে নগরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরবে। যদিও এতে খুব আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, কেন বিয়ারিং প্যাডটি খুলে পড়ল, তা তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করছি, এই তদন্তে প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। তদন্তে চিহ্নিত কারণ সমাধান করা হবে। একই সঙ্গে কারও কোনো দায় থাকলেও তাদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ হতে পারে নকশার ত্রুটি, কারিগরি ত্রুটি, সঠিকভাবে স্থাপন না করা এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করা। তবে এ মুহূর্তে কোনোটিই বলা যাচ্ছে না। আমরা প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে তা প্রকাশ করব। কেননা এত বড় মেগা প্রকল্প অনিরাপদ হলে জনপ্রিয় মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যাপারে দেশবাসীর মাঝে ভুল ধারণা তৈরি হবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। তখন তা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।