Image description
হোটেল, খাবার ও যাতায়াত ভাড়া পার্শ্ববর্তী দেশের চেয়ে দ্বিগুণ

দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের বিরক্তির শেষ নেই। হোটেল-রিসোর্ট, বিমান টিকিট ও খাবারের মাত্রাতিরিক্ত খরচে নাকাল তারা। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাদের গুনতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি টাকা। ফলে আগ্রহ থাকলেও অতিরিক্ত খরচের কারণে বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে দেশিবিদেশি পর্যটকদের।

আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট বুকিংডটকমে দেখা যায়, কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টের প্রাইভেট পুলসহ সি ভিউ স্যুটের এক দিনের ভাড়া প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তার সঙ্গে ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ মিলে যুক্ত হয় আরও প্রায় ৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের ফুকেটের আতিকা ভিলাস জেরো ওশানফ্রন্ট পুল ভিলায় পাহাড় ও সি ভিউ, প্রাইভেট পুল এবং আরও অনেক সুযোগ-সুবিধাসহ এক দিনের ভাড়া আসে ৩০ হাজার টাকা। পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে পর্যটকদের ভ্রমণব্যয় কমপক্ষে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। ওসব দেশে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এক দিন থাকার খরচ পড়ে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা। অথচ বাংলাদেশে ২০ হাজার টাকার নিচে চিন্তাও করা যায় না।

তারা আরও জানান, বাংলাদেশে লেইজার ট্যুরিজমের (শুধু বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ভ্রমণকারী) সংখ্যা কম। অন্য দেশ থেকে আসা পর্যটকরা বেশির ভাগই আসেন ব্যবসায়িক কাজে। এর মধ্যে গার্মেন্টের ক্রেতা, বিভিন্ন সরকারি কাজ বা প্রদর্শনীতে আসা ব্যক্তিই বেশি। ব্যবসায়িক ভ্রমণে আসা ব্যক্তিদের ভ্রমণব্যয় বহন করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোই। ফলে দেশের হোটেল মালিকরা লেইজার ট্যুরিজমে উৎসাহি হন না। তারা হোটেলের ভাড়া এমনভাবে তৈরি করেন যাতে ব্যবসায়িক ভ্রমণে আসা ব্যক্তিদের জন্য তা উপযোগী হয়।

এ ছাড়াও পর্যটন কেন্দ্রের আশপাশের রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবারের দামও থাকে চড়া। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় দুটি ক্ষেত্রেই আকাশপথে বাংলাদেশ থেকে বিমান ভাড়া অতিরিক্ত। আকাশপথে যাতায়াতে প্লেনের টিকিট একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকায় সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া কঠিন।

হোটেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা জানান, হোটেল নির্মাণের সবকিছুই বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। এজন্য পর্যটন কেন্দ্রের হোটেল-রিসোর্টে ভাড়াও বেশি। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান বলেন, দেশের হোটেল-রিসোর্টগুলোর ভাড়া বেশি এটা সত্য। বাংলাদেশে হোটেল ও রিসোর্ট, পার্ক বা ক্রুজ তৈরির যন্ত্রাংশের অধিকাংশই আমদানি করতে হয়। এতে নির্মাণ খরচ বাড়ায় ভাড়াও বাড়ানো হয়। এগুলো সরকারের রেগুলেটরি কমিশনকে নজরদারি করতে হবে।

সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসা পর্যটক আহসান হাফিজ জানান, কক্সবাজারে তিন তারকা মানের একটি হোটেলের ফ্যামিলি রুমে প্রতিদিনের ভাড়া ছিল প্রায় ৪০ হাজার টাকা। অথচ এই টাকায় তিনি থাইল্যান্ডে চার দিন থাকতে পারতেন। কক্সবাজারে চাঁদের গাড়িতে মেরিন ড্রাইভ ঘুরতে তার ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে ব্যাংককে তিনি গ্যাব ও বোল্টের মতো রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে তুলনামূলক সাশ্রয়ী খরচে ঘুরতে পারেন। কক্সবাজারের রেস্টুরেন্টে সাধারণ বাংলা খাবারের দামও অনেক বেশি। দেশের ট্যুর অপারেটররা জানান, হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করায় হোটেল ভাড়াও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন। কিন্তু একজন পর্যটক যে মূল্য দিয়ে সেবা নিচ্ছেন সে অনুযায়ী প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি একজন পর্যটক ১০ হাজার টাকা দিয়ে যে হোটেল নিচ্ছেন দেশে একই মানের হোটেলে দিতে হচ্ছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।

জার্নি প্লাসের প্রধান নির্বাহী তৌফিক রহমান বলেন, পর্যটকদের সাশ্রয়ে বিভিন্ন সেবা দিতে হলে সরকারিভাবে শক্ত নীতিমালা তৈরি করতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। জেলা প্রশাসনেরও নজরদারি লাগবে। একটি ইন্টারমিনিস্টারিয়াল বডি লাগবে, যারা পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করবে।