Image description
ঘটনাস্থল আশুলিয়া

থুতু ফেলাকে কেন্দ্র করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির আটকে পড়া ১৭ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়াও সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে ৮/৯টি যানবাহনেও।

প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষার্থী ও পুলিশের বর্ণনামতে, গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষার্থী খাগান এলাকায় মোটরসাইকেলযোগে যাচ্ছিলেন। এ সময় চলতি অবস্থায় থুতু ফেলে। সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর গায়ে লাগে। এরপর তারা মোটরসাইকেলে থাকা সিটি ইউনিভার্সিটির ওই দুই শিক্ষার্থীকে আটকে দেয়। ওই দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে এবং তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ায়। সেখান থেকে ফিরে এসে এই ঘটনা ওই দুই শিক্ষার্থী সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জানায়। এরপর তারা ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী একত্র হয়ে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস’ হোস্টেলের দিকে অগ্রসর হয়। তারা ছাত্রাবাসটিতে হামলা চালায়। তারা প্যারাডাইসের ভেতরে প্রবেশ করেনি। সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলে আক্রমণ করছে খবরটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এই খবরে এক থেকে দেড় হাজার ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তারা সিটি ইউনিভার্সিটির ভেতরে ঢুকে পড়ে। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করে। সিটি ইউনিভার্সিটির দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে থাকা টাকা, ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন উপকরণ লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গাড়ি।

রাত ১১টার দিকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ ও উত্তেজনা রাত জুড়েই চলে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে হামলা চালানো কিছু শিক্ষার্থী ইউনিভার্সিটির হলের দিকে যায়। হলের দিকে যাওয়া শিক্ষার্থী ১৭/১৮ জন আটকা পড়ে। আর সিটির শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ এসেছিল আক্রমণ করতে। আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের সোমবার দুপুরে দু’দফায় ছেড়ে দেয়া হয়। আটক শিক্ষার্থীরা মারধরের অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সিটি ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষের কয়েকজন কর্মকর্তা এই শিক্ষার্থীদের ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন। 

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা বলেন, সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা প্রথমে হামলা চালিয়েছে। আর সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ আক্রমণ করে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা। বারবার চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ঢুকতে পারেনি পুলিশ। রাতভর এই সংঘর্ষের ঘটনায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় রাজু জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর আহতের খবর পাওয়া গেছে। মূলত দু’পক্ষের ইটপাটকেলের আঘাতেই শিক্ষার্থীরা আহত হন।

পুলিশ বলছে, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে স্থানীয় থানা পুলিশ। প্রথম দফায় সংঘর্ষ থামাতে সরাসরি কাজ করতে পারলেও পরবর্তীতে দুই ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক অসহযোগিতা, দুই গ্রুপের শিক্ষার্থীদের বিশৃঙ্খলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি পুলিশ। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এ ব্যাপারে জানতে সাভার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পক্ষের প্রক্টোরিয়াল বডির সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখা হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অগ্নিসংযোগের পর ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে তারা। বর্তমানে ঘটনাস্থল ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

তবে সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, মারামারি চলা অবস্থায় আমি ৯৯৯ এ ফোন দেই। ওনারা বলে, যেখানে আছেন সেখানে থাকেন আপনাদের কিছু হবে না। আমি বলি ভার্সিটির ভেতরে ঢুকে পড়েছে। ওনারা বলেন, স্টুডেন্টরা যা করতেছে করতে দেন। তারা কিছু করতে পারবে না।
সোমবার সকাল থেকে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে খাগান এলাকায়। সিটি ইউনিভার্সিটির এডমিন অফিসার মো. রায়হান বলেন, তাদের বেশ কয়েকটি পরিবহনে অগ্নিসংযোগ, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন ভাঙচুর করেছে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা। তাদের হামলায় ৩টি হলের নারী শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। ভাঙচুরের পর অ্যাকাউন্টস থেকে টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রধান ফটক ও এর আশপাশে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়।

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর ড. শেখ মোহাম্মদ আলেয়ার বলেন, সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেল থেকে থুতু পড়া নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। ঘটনাটি ঘটে ব্যাচেলর প্যারাডাইসের সামনেই। এ নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। পরবর্তীতে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের ব্যাচেলর প্যারাডাইসের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তিনি আরও বলেন, ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল টিম পুলিশকে খবর দেয়। আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী সিটি ইউনিভার্সিটির ভেতরে আটকা পড়ে যায়।

সিটি ইউনিভার্সিটি আগামী ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত ও ড্যাফোডিল মঙ্গলবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে। ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা ড্রোন ব্যবহার করেও হামলা করেছে। তারা ড্যাফোডিলের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এ বিষয়ে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর অব এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী যাদের উদ্ধার করা হয়েছে অধিকাংশরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে নিতে হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বলেন, ক্ষতি কতোটা হয়েছে এটা নিরূপণ করতে হবে আগে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ক্ষতির থেকে গাড়ি, বিল্ডিংয়ের দাম বেশি নয় নিশ্চয়ই।