
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ভাসছে গোলাপি হাতির নিথর দেহ। হ্রদের পারে টানা তিন দিন মৃত শাবকের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মা হাতি। মুহূর্তের জন্যও জায়গা থেকে সরেনি। খায়নি কোনো খাবার। শুকিয়ে গেছে মুখ। হয়তো মানুষ হলে চিৎকার করে কেঁদে বুক ভাসাত। কিন্তু বোবা প্রাণীর নিঃশব্দ আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছে না কেউ। সম্প্রতি এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে রাঙামাটির বরকল উপজেলার ১ নম্বর সুবলং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বরুণাছড়িবাসী।
জানা যায়, চলতি বছর রাঙামাটিতে জন্ম নিয়েছিল বিরল প্রজাতির এ গোলাপি হাতিটি। ওই সংবাদে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় গোলাপি হাতির প্রথম জন্ম রাঙামাটিতে। জন্মের ১০ মাস পর হঠাৎ অজ্ঞাত কারণে মারা যায় শাবকটি। কী কারণে মারা গেছে সঠিক তথ্যও দিতে পারেনি বন বিভাগ। রাঙামাটির বরকলের হাতি সুরক্ষা দলের সদস্য মো. লিটন হোসেন জানান, ‘কাপ্তাই হ্রদে ভাসছিল গোলাপি হাতির মৃতদেহ। তা দেখে পানিতে লাফিয়ে পড়ে মা হাতিটি। শুঁড় দিয়ে কোনোরকমে হ্রদের পারে টেনে আনে প্রিয় শাবকের দেহটি। কিন্তু পানি থেকে ওপরে তোলার সাধ্য তার নেই। তাই হ্রদের পারে দাঁড়িয়ে থেকে সন্তানের মৃতদেহ পাহারা দিচ্ছে মা। তিন দিন ধরে মুহূর্তের জন্যর সরেনি হাতিটি।
মা হাতিটিকে বসতে দেখেনি স্থানীয়রা। পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ ও হাতি সুরক্ষা দলের সদস্যরা জানান তাঁরা ঘটনার ওপর নজর রেখেছেন। উত্তর বন বিভাগের সুবলং রেঞ্জের কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, ‘মা হাতির সামনে থেকে বাচ্চাটা উদ্ধার করা সম্ভব নয়। কারণ সেটা করতে গেলে মা হাতি পাগল হয়ে পুরো গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে। তাই আমরা অপেক্ষা করছি। মা হাতিটি সরে গেলে শাবকটির দেহ উদ্ধার করে মাটিচাপা দেওয়া হবে।’ চলতি বছরের ১৮ জুন গোলাপি হাতিটি কাপ্তাই হ্রদ সাঁতরে পারাপার হওয়ার সময় ভিডিও করেন স্থানীয় যুবক। এটি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।