Image description

বিগত ছয় মাসে অনলাইন জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফির ১ হাজার ৩৩১টি পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

অনলাইনে জুয়া, বেটিং এবং পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধে করণীয় বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মোবাইল অপারেটর এবং মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি ভবনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় অংশীজনরা গৃহীত পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে তাদের মতামত উপস্থাপন করেন।

সভায় জানানো হয়, বিভিন্ন ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে জুয়ার কার্যক্রম। এতে বিদেশে অর্থ পাচারসহ হুমকির মুখে তরুণ সমাজ।

সভায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) ও বিটিআরসির সহায়তায় এ বছর মে মাস থেকে ৪ হাজার ৮২০টি মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী অ্যাকাউন্ট (এমএফএস) এবং ১ হাজার ৩৩১টি পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, জুয়ার অর্থ লেনদেনকারী অ্যাকাউন্টের তালিকা তৈরি হচ্ছে এবং যে সকল পোর্টালে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে সেগুলো বন্ধ করা হবে। একটি সাইট বন্ধ করলে অপরাধীরা একাধিক সাইট তৈরি করে এবং এমএফএস অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার পর তারা অ্যাপস বেইজড পদ্ধতিতে জুয়া চালু করে। এজন্য আইনশৃংখলা বাহিনীকে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেট কোরে পপ আপ ব্লক বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। ট্রাফিক ক্লাসিফাইয়ার এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে পপ আপ ব্লক করা যায়।

এ ছাড়াও মোবাইল ফিনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানকে একটিভ ক্রলার ব্যবহার করে জুয়া ও ব্যাটিং বন্ধ করতে হবে। নভেম্বরে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার চালু করা হবেও জানান তিনি।

জুয়া বন্ধে বিটিআরসি-ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি কাজ করছে উল্লেখ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, তরুণদের মাইন্ডসেট পরিবর্তনের পাশাপাাশি প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যেমে জুয়া প্রতিরোধ করতে হবে।

বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী (অব.) বলেন, এনইআইআর চালু হলে মোবাইলে বিদ্যমান সিম পরিবর্তন করে পরবর্তী সিম চালু করতে নিবন্ধন প্রয়োজন হবে, ফলে এর মাধ্যম অপরাধ কমে আসবে। অন্যদিকে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের অ্যাপসে পুনঃপুন ভেরিফিকেশন চালুর মাধ্যমেও প্রতারণা কমিয়ে আনা যাবে। এ ছাড়া, সংস্থাসমূহের মধ্যে নিরাপত্তা ও টেকনোলজি নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।  

মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা জানান, তারা অনলাইন জুয়া, পর্নোগ্রাফি ও বেটিং সাইট বন্ধে এনটিএমসির সহায়তায় সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য বেটিং ও পর্নসাইট বন্ধ করা হয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, জুয়ার সাইটগুলো অনেক সিকিউরড এবং বিভিন্ন নামে হওয়ায় মাল্টিলেয়ারে কাজ করতে হবে। এজন্য বিটিআরসি, নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

ইতোমধ্যে ৫৮ হাজার এমএফএস নম্বর বন্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্ট ইউইনিট (বিএফআইইউ) এর প্রতিনিধিরা জানান, বিএফআইউ কর্তৃক বিভিন্ন এমএফএস-ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যাদের অ্যাকউন্ট রয়েছে তাদের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এনআইডি ও সিম ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে এমএফএস অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের জন্য বিটিআরসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বিত একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তারা।

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার এর প্রতিনিধি জানান, এনটিএমসির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১২৩টি জুয়ার অ্যাপস বন্ধসহ এ সংক্রান্ত অসংখ্য ওয়েব লিংক/ইউআরএল ব্লক করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ধারা ব্যবহারের পরামর্শ দেন তারা।

ডিজিএফআই-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই ব্লাকলিস্ট পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন যাতে কালো তালিকাভুক্ত সিম চালু হওয়ার সাথে সাথে টাওয়ার থেকে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের কাছে সংকেত চলে আসে।  

এনএসআই-এর প্রতিনিধিরা জানান, দেশীয় চক্রের পাশাপাশি দুবাই ও মালয়েশিয়ার থেকেও একটি চক্র যুক্ত হয়ে অনলাইনে অপরাধ করে যাচ্ছে। তারা মেয়েদের বিদেশে নিয়ে কলসেন্টার চালু করে জুয়া ও বেটিং এর প্রচারণা চালায়। মোবাইল ও আইএসপি অপারেটরদের কনটেন্ট সনাক্তের সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।  

সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টার এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ২ মাসে অনলাইনে বেটিংয়ে জড়িত ২ হাজারের বেশি সিম সনাক্ত, বেটিং এর কাজে ব্যবহৃত ৬০০ সাইট ও ৫০টি অ্য্যপস চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেক অ্যাপস দেশের বাহির থেকে পরিচালিত হয় বলেও জানানো হয়।

বিশেষ সহকারী জানান, পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনসহ সকল পক্ষের নীতিনির্ধারণী ও কারিগরী টিমসমূহকে সাথে নিয়ে অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে শিগগির আরও কার্যকরী পদেক্ষপ নেওয়া হবে।