Image description

জোবায়েদ হোসেনকে মেরে ফেলার জন্য প্রেমিক মাহির রহমানকে বলেন বার্জিস শাবনাম বর্ষা। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বর্ষা মাহিরকে বলে, স্যারকে তুমি মেরে ফেল, আমি আর সহ্য করতে পারছি না।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় তার ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষাসহ তিন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার আগে এদিন বিকেলে আসামিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদনে এতথ্য উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার এসআই মো. আশরাফ হোসেন।

সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ভাংনা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাহির রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাসা থেকে বর্ষাকে আটক করে বংশাল থানা পুলিশ। মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সোমবার রাত ১০টার দিকে পল্টনের চামেলীবাগ শান্তিনগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ফারদীন আহম্মেদ আয়লানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম মাসুম মিয়ার আদালতে বর্ষা, আরেক মহানগর হাকিম মেহেদী হাসানের আদালতে বর্ষার প্রেমিক মো. মাহির রহমান এবং মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান মহানগর হাকিম জুয়েল রানার আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী।

 

জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদনে বলা হয়, মাহিরের সাথে বর্ষার দেড় বছর আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক। জোবায়েদ প্রায় এক বছর আগে থেকে বর্ষাকে টিউশন করান। এরই একপর্যায়ে শিক্ষকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এতে করে মাহির ও বর্ষার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ দেখা দেয়। ঘটনার একমাস আগে মাহির জানতে পারে জোবায়েদের সাথে বর্ষার প্রেমের সম্পর্ক আছে। বিষয়টি মাহির মেনে নিতে পারে না এবং বর্ষাও মাহিরকে বলে স্যারকে তুমি মেরে ফেল, আমি আর স্যারকে সহ্য করতে পারছি না। এ বিষয়ে মাহির ও বর্ষা জোবায়েদকে হত্যা করার জন্য একাধিক পরিকল্পনা করে। জোবায়েদ বাসায় কখন পড়াতে আসে এবং কখন চলে যায় নিয়মিত বর্ষা মাহিরকে জানায়। মাহির তার বন্ধু আয়লানের সাথে হত্যার পরিকল্পনা করে আগানগর বউ বাজার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকায় হতে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনে।

আবেদনে আরও বলা হয়, রোববার বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ১৫ তম ব্যাচের ছাত্র মো.জোবায়েদ হোসেন বংশাল থানাধীন ৩১নং ওয়ার্ডস্থ নুর বক্স লেন এব ১৫নং হোল্ডিং রৌশান ভিলায় টিউশন করাতে যায়। জোবায়েদ বর্ষাকে টিউশন করাতে গিয়ে বাসার নিচতলার সিঁড়ির নিচে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা বর্ষার সাবেক প্রেমিক মাহির রহমান ও তার বন্ধু ফারদীন ওই সময় বাসার নিচে জোবায়েদ পৌঁছালে মাহির জোবায়েদকে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বর্ষার সঙ্গে সম্পর্ক করেন কেন? এতে কথা-কাটাকাটি শুরু হলে মাহিরের ব্যাগে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু বের করে গলার ডান পাশে আঘাত করে খুন করে। এসময় বর্ষা তিন তলায় দাঁড়িয়ে ছিল। আসামিরা ঘটনার সাথে জড়িতের বিষয়ে প্রত্যক্ষভাবে সাক্ষ্য প্রমাণ ও সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে এদিন এ মামলায় মাহিনের বন্ধু প্রীতম দন্দ্র দাস সাক্ষী হিসেবে আরেক মহানগর হাকিম হাসিবুজ্জামানের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, জোবায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করতেন। প্রতিদিনের মত রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বংশাল থানাধীন ৩১নং ওয়ার্ডে নুর বক্স লেন এর ১৫ নং হোল্ডিং রৌশান ভিলায় বর্ষাকে পড়ানোর জন্য যান। সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ওই ছাত্রী জোবায়েদ হোসেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই সৈকতকে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে জানায়, জোবায়েদ স্যার, খুন হয়ে গেছে, কে বা কারা জোবায়েদ স্যারকে খুন করে ফেলছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. কামরুল হাসান ৭টার দিকে জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান। এনায়েত তার শ্যালক শরীফ মোহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থল রৌশান ভিলায় পৌঁছান। ভবনের নিচতলা থেকে ওপরে ওঠার সময় সিঁড়ি এবং দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পান। ওই ভবনের ৩য় তলার রুমের পূর্ব পার্শ্বে সিঁড়িতে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উপুড় অবস্থায় দেখতে পান।

ঘটনার দুদিন পর মঙ্গলবার জোনায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন বংশাল থানায় মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে জোনায়েদকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার ডান পাশে আঘাত করে হত্যা করেছে।